আমাদের দেশের পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা বাহিনীও তেমন। তারা ঘটনার পরে থাকে, আগে থাকেনা। তাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। কথায় আছে, বিয়ে বাড়িতে যেতে হয় খাবার পরিবেশনের আগে, আর দুর্ঘটনা ঘটার অনেক পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাব নিতে হয়। তবে সিনেমাতে অন্তত একজন নায়ক থাকে যে ভিলেন বাহিনীকে কুপোকাত করতে পারে। আমাদের নায়ক সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তেমন না পারলেও অন্তত স্বীকার করেন_ইটস এ টোটাল ফেইলিওর!
দুই.
গল্প-উপন্যাসের ক্ষেত্রে মাসুদ রানা, দসু্য বনহুর, শার্লক হোমস, জেমস বন্ড_এসব গোয়েন্দা কাহিনী কিংবা চলচ্চিত্রও তুমুল জনপ্রিয়। তো এক অনুষ্ঠানে এক গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনাদের চাকরি তো লাইফ রিস্কি। যখন-তখন মৃতু্য হতে পারে। গল্প-উপন্যাস বা ছবিতে দেখা যায়, ভিলেন কিংবা খারাপ লোকরা কেমন যেন কুটিল-বুদ্ধিমান ও ভয়াবহ হয়ে থাকে। গোয়েন্দারা কিন্তু তাদের চেয়েও এক ডিগ্রি সরেস। গোয়েন্দারা সব জাল ছিন্ন করে তাদের ধরে ফেলে। বাস্তবটাও কি তেমন? গোয়েন্দা বাহিনী প্রধানের উত্তর ছিল_বাস্তবে খারাপ লোকরা বা ভিলেনরা অত খারাপ বা বুদ্ধিমান হয় না। ঠিক তেমনি আমরাও অমন বুদ্ধিমান নই!
বাংলাদেশের অবস্থাটা এখন বোধ করি ভিন্ন। বাস্তবের খারাপ লোক কিংবা বোমাবাজরা এখন খুব কুটিল, অসম্ভব ধূর্ত এবং বুদ্ধিমান। না হলে জঙ্গিরা সারাদেশে একই সঙ্গে বোমা ফাটায় কীভাবে? আর গোয়েন্দা সংস্থগুলো? অথর্ব! দে আর লুকিং ফর শত্রুজ!
তিন.
এই সরকারের গর্ব করার মতো প্রথম জিনিসটি ছিল পলিথিন বর্জন। আর দীর্ঘদিন ধরে সরকার যে জিনিস নিয়ে গর্ব করে আসছে তার নাম র্যাব। র্যাব এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে ক্রসফায়ারের আওতায় এনেছে। এদের ভেতর একজনও বোমাবাজ নেই!
বোমা হামলা ঘটিয়ে বোমাবাজরা নিরাপত্তার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পরও ছিঁচকে সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, কয়েক মামলার ছোটখাটো আসামিকে ধরার পর তাদের বেঁধে রেখে র্যাব যেভাবে খবরের জন্য অস্ত্রহাতে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাতে পোজ দেয়, তাতে মনে হয় বছরের সেরা কৌতুক দৃশ্য সেগুলোই!
চার.
ব্রিটিশ আমলে পুলিশ বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমিয়ে রাখতে। আজতক পুলিশের সেই 'মতাসীন দলের প েবিরোধীদের হেনস্থা করা' চরিত্রটি ঠিকই বজায় আছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম কেমন ছিল? বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের গতিবিধি নজরে রাখা, দল ভাঙানো, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির আগে নির্দিষ্ট নেতাদের গ্রেফতার_এসবই ছিল গোয়েন্দা বাহিনীর কাজ। বিদেশি লোকজন দেশে এসে তাদের পর্যবেক্ষণ, কোন বিদেশি এদেশে কোথায় কী করছে, এদেশের কে কে বিদেশ থেকে কত টাকা পাচ্ছে, কার একাধিক পাসপোর্ট আছে, কে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত আর কে লিপ্ত নয়_এসব তথ্য গোয়েন্দা সংস্থা কতটুকু জানে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ঘটনা ঘটার পর বিপুল বিক্রমে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাশের বাড়িতে কে মুরগি চুরি করল, কে অন্যের বউ ভাগিয়ে নিয়ে গেল_এসব গোয়েন্দারা খুব দ্রুত খুঁজে বের করতে পারে। বিদিশা কোন বিচে সুইমিং কস্টিউম পরে গোসল করেছিল, কোন বিদেশিকে চুমু খেয়েছিল_এসব খুব রসিয়ে রসিয়ে বের করতে পারে গোয়েন্দারা। জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা বোমা হামলার প্রসঙ্গটা সম্ভবত তাদের এখতিয়ারেই নেই!
এরপরও হয়তো চাকরি করার স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কিছু না কিছু গোপন রিপোর্ট পেয়ে যায়। আগাম প্রস্তুতিও নেয়। তারপর? সবশেষে পাওয়া যায় সরকারি মতামত। কী সেটা? কোন মাছ ধরতে হবে আর কোন মাছ ধরার ছলে জল ঘোলা করে ক্ষমতায় থাকতে হবে সে সিদ্ধান্ত।
হায়! বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতাসীনরা একই ধরনের ভুল করে আসছে। এ খাঁচা ভাঙতে পারে, কেউ কী আছে!
পাচঁ.
বাস্তব গোয়েন্দাদের চেয়ে গোয়েন্দা গল্প অনেক ভালো। টানটান উত্তেজনা থাকে সে গল্পে। তারও চেয়ে ভালো কৌতুক! এক বোমাবাজের খোঁজে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পাশাপাশি দুটো বাসা। গোয়েন্দারা কোন বাসায় ঢুকবে? বাসার সামনে আম কেটে খাচ্ছে ছোট এক ছেলে। তাকে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসা করল_এই ছেলে তোমার বাবার নাম কী? ছেলে বলল। এরপর তারা জানতে চাইল তোমার বাবা কী বাসায় আছে? ছেলেটি হঁ্যা বলার সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বাড়ি দুটোতে তাণ্ডব চালাল। ভাংচুর, খোঁজাখুঁজি শেষে অভিযুক্তকে না পেয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন সেই ছোট ছেলেকে বলল_কেন তুমি মিথ্যে বললে? তোমার বাবা তো বাসাতে নেই। ছেলেটি শান্ত স্বরে উত্তর দিল_এই দুটোর কোনটিই আমাদের বাড়ি না!