somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে তুমি বোমা বোঝ মানুষ বোঝ না!

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ ভোর ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় মুনাদ
কতটা বোমা ফুটলে তাকে ভয়াবহ বলা যায়? কতটা বোমা ফুটালে কাউকে জঙ্গি বলা যাবে? কতটা পথ হাঁটলে গোয়েন্দারা বোমাবাজের নাগাল পাবে? প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা! কেমন আছ মুনাদ? তোমার এক সময়ের প্রিয় শিল্পী সুমন চট্টোপাধ্যায়ের (আমি জানি মুনাদ, তুমি স্মরণ করিয়ে দেবে যে, বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তিনি এখন কবীর সুমন!) কতটা পথ হাঁটলে তাকে পথিক বলা যায় গানটাকে আমি একটু বদলে দিয়েছি। মুনাদ, আমার প্রিয় জন্মভূমির মানুষদের কেউ কেউ কী সত্যি বদলে যাচ্ছে? যে হাত ছুঁয়ে দেয় প্রিয়তমের হাত, যে হাত ধরে বুকের সঙ্গে ধরে রাখে পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে_সেই হাত কী কখনো অসহায় মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে বোমাও ফাটাতে পারে? মুনাদ, কবিতার বইয়ের নাম আছে ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দেব। কেউ কি ভয়ঙ্কর কোনো ভালোবাসার নামে আমাদের প্রিয় জন্মভূমিটাকে আফগানিস্থান কিংবা ইরাক বানাতে চাচ্ছে? ওরা কি জানে না কোটি কোটি মানুষের শান্তি নষ্ট করে যারা দেশটাকে অস্থিতিশীল বানাতে চায়, তারা আসলে নিজের প্রিয়তমাকেই ধর্ষণ করে? বহুদিন হলো আমেরিকায় আছি। কয়েকবার ইংল্যান্ডেও বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমেরিকাতে নাইন ইলেভেন কিংবা ইংল্যান্ডের বোমা হামলার ঘটনার পর সেখানকার মতাসীন দল বিরোধী দলকে দায়ী করেনি। অথচ আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি ও জামায়াতকে আর বর্তমান জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগকে বোমা বা গ্রেনেড হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। আমেরিকা বা ইংল্যান্ড বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে এই শিাটা এখনো নিল না! গত বছরের একুশ আগস্টে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার তদন্ত নাটকের জন্য বর্তমান জোট সরকার একজন জর্জ মিঞাকে আবিস্কার করতে পেরেছিল। নাকি লাদেনও আমেরিকার অব্যর্থ আবিস্কার? গত 17 আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা হামলার ঘটনায় এবার বর্তমান সরকার কাকে আবিস্কার করে সেটা জানিও। তুমি ভালো থেক মুনাদ। ইতি তুনাবী


প্রিয় তুনাবী আমি রীতিমত হতভম্ব। আসলে দুর্যোগ কখনো কখনো মানুষকে এক মোহনায় নিয়ে আসে। সেই তুমি আমেরিকা থেকে লিখলে তাও কতদিন পর। আমি কখনোই চাইব না এমন আরো ঘটনা ঘটুক, আর তুমি চিঠি লিখ। প্রয়োজনে গোলযোগহীন থাক, থেকে যাও বোমাবাজদের মতো ধরাছোঁয়ার বাইরে, তবু যেন এদেশটা মৃতু্য উপত্যকা না হয়। অন্তু মিঞার কথা মনে পড়ে তুনাবী? আমার অফিসের সেই টোকাই টাইপ পিওনটা? আমার লেখা শেষ চিঠিটা নিয়ে গিয়েছিল তোমাদের বাসায়। ধরা পড়েছিল তোমার বাবার হাতে। ওই চিঠিতে একটা ছড়া ছিল এমন_ তোমার আমার ভালোবাসায় তোমার বাবা ভিলেন উনি নাকি তোমার মায়ের কঠিন প্রেমিক ছিলেন তোমার আমার বেলায় কেন এই ডিসিশন নিলেন? হায়, এবারের বোমা হামলায় আমার চিঠির মতো লিফলেট নিয়ে অন্তত এক হাজার অন্তু মিঞা রাস্তায় নেমেছিল। যদি সারাদেশে চারশ' বোমা ফাটে তাহলে অন্তত চারশ'জন ছিল বোমার বাহক। ব্যাটারি সাপ্লাই দিয়েছে ক'জন? টাইমার বা তার সংযুক্ত করেছে সেই বোমায় ক'জন? বোমার বাহকরা কার কার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল? কে বা কারা যুগিয়েছিল অর্থ কিংবা বোমার রসদ? সবার সংখ্যা কি হাজার ছাড়িয়ে যাবে না? আমার চিঠি নিয়ে অন্তু মিঞা ধরা পড়ার পর তোমার বাবার এক চড় খেয়ে সে গড়গড় করে সব বলে দিয়েছিল। বোমা হামলার ঘটনায় এক হাজার অন্তু মিঞা যদি অংশ নেয়, তাহলে সেই খবর আগে থেকেই ছড়িয়ে পড়ল না কেন? গোয়েন্দারা জানতে পারল না কেন? কি সেই নষ্ট বন্ধনের মোহ, যা তাদের মোটিভেট বা একত্র করেছে? দুই-একজন অন্তু মিঞা যাও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে, তাদের কাছ থেকে কী জানতে পারবে কিছু পুলিশ? না গত দশ বছর ধরে যা হয়েছে এবারের হামলার পরও তাই হবে? বোমা হামলার পুরো তদন্ত নিখুঁত। পরিকল্পনার সঙ্গে পাঠানো হবে হিমঘরে! মাঝে পত্রিকায় লেখালেখি হবে। কেউ বলবে ধেয়ে আসছে জঙ্গিরা, কেউ বলবে জঙ্গিরা অতোটা শিতি, অর্থবান কিংবা প্রশিতি নয়_এ কাজ বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের, আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকে সরকারকে দায়ী করলে আর সরকার বলতে চাইবে আগস্ট মাস এলেই কেন গ্রেনেড বা বোমা হামলা ঘটে? মাঝখান থেকে পাবলিক সেই অাঁধারেই থাকবে, যে অাঁধারে তারা থাকতে বাধ্য হয়। তুনাবী এ যেন অনতিক্রম্য দুঃসময়। আমি, তুমি সবাই জানি এই বোমাবাজরা আমাদের ভবিষ্যতের সব সম্ভাবনাকে ছিন্নভিন্ন করে ছাড়বে। সারাদেশে একই সময় বোমা ফুটিয়ে তারা যেন এটাই বলতে চেয়েছে, দেখ বাবাজি, দেখবি নাকি/দেখরে খেলা, দেখ চালাকি/ভোজের বাজি, ভেলকি বাজি/পড় পড়, পড়বি পাখি/ধপ... তুনাবী, ধপ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খাঁচা। আশ্রয়হীন শান্তির পাখিটা কেঁদে কেঁদে উড়ছে আকাশে। আর কারা আশ্রয় দিচ্ছে বোমাবাজদের? তবুও মানুষ জাগবে ফের। বোমাবাজদের উদ্দেশ্যে সুকান্তের সেই উদ্দীপনাময় কবিতাটাই বলবে মানুষ- আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই/ স্বজন হারানো চিতায় তোদের লাশ আমি তুলবই! তুনাবী, ছোটকাল থেকে এমন শিখেছি সবার জন্য ভালোবাসা, কারো জন্য ঘৃণা নয়। শিাটা বদলে ফেলো এখন। ঘৃণার ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে কাউকে কাউকে আমরা বলতে চাই তুই বোমাবাজ! ঘৃণার চিতায় তাদের আমরা পুড়িয়ে মারতে চাই। কিন্তু তুনাবী, বলতে পার, তোমাকে হারানোর মতো একা একা কতটা পথ হাটলে আমার শান্ত হবে মন? কতটা বোমা ফোটার পরে থামবে বোমাবাজ? কতটা পথ পেরুলে শান্তির পাখি, জিরোবে তার ডানা? প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা! ভালো থেকো তুনাবী। কষ্ট শুধু এই, পিচ্চি হান্নান থেকে শুরু করে মেধাবী মাসুম, কত মানুষ ক্রসফায়ারে মারা গেল। হায়! একজন বোমাবাজকেও এই পথে নেয়া গেল না। তুনাবী প্রার্থনা কর আমার ওপর জারি করা তোমার বাবার ক্রসফায়ারের মতো উলটো বোমাবাজরা যেন পুরো দেশটাকেই ক্রসফায়ারে না তুলতে পারে। ওরা বোমা বুঝলো, তোমার আমার মতো মানুষ বুঝলো না।
ইতি মুনাদ
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×