somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জঙ্গিবাদের বছর পেরুলে ফিরে এসো তুনাবী

২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৬ সকাল ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় মুনাদ
আর না হলে পাগলি তুই তোর মতোই থাক
আমার জন্য হাতের মুঠোয় জীয়ন কাঠি রাখ
দুঃখ পেলেও আসিস, পারলে ভালোবাসিস
শুনতে কী পাস হাতছানি দেয় মুগ্ধ অচিনপুর?
বুকের ভেতর আজো কাঁদে একলা সমুদ্দুর!
---------খুব সুন্দর কয়েকটি লাইন। কেমন করে লিখতে পার এসব? ছ'মাস হলো তোমার চার-পাঁচটি চিঠির উত্তর দেইনি। কিন্তু গীতি কবিতাটি পড়ে নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। শোন, প্রতীায় থেকে লাভ নেই কোনো। তোমার মতো আমারও বয়স হয়ে যাচ্ছে। হয়তো আমাদের কোনো উত্তরাধিকার পৃথিবীতে থাকবে না! সময় আছে বিয়ে করে ফেল। জীবনানন্দের কবিতাটা মনে কর। পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে রুপ নিয়ে চলে গেছে দুরে/আবার তাহারে কেন ডেকে আন? কে হায় হূদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে? ভেবে নাও আমি সেই দুরে চলে যাওয়া রাজকন্যা। আমি জানি, এতটুকু পড়ে তুমি মন খারাপ করবে। এরপর হয়তো তুমি পড়বে না! তবু এই চিঠিখানা পাঠিয়ে দিলাম।
ইতি তোমারই তুনাবী

প্রিয় তুনাবী
তোমার প্রতীক্ষায় বাঁচার মতো জঙ্গি ও তাদের গডফাদারদের ধরতে আর বোমামুক্ত বাংলাদেশের জন্য এখন সারা জাতি প্রতীায় আছে। তবে আমি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আন্ডারগ্রাউন্ড চরমপন্থীদের কেউ নই যে, এ বছরের মে মাসে দুই পুলিশ অপহরণ করে তাদের মেরে ফেলে আশি টুকরা করার মতো তোমার চিঠিটাও আশি টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলব। চরমপন্থী কথিত জনযুদ্ধের নেতা সোয়েব আর সুমনকে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমাকে ক্রসফায়ার করার মতা দেয়া হলে আমি ঋণখেলাপিদের মতো প্রেমখেলাপিদেরও ক্রসফায়ারে তুলতাম। দারিদ্র্য আর না পাওয়ার বেদনা সবাইকেই হিংস্র করে তোলে। তাই আমাকে দুরে রেখে আজ একরকম হিংস্র তুমি, হিংস্র বোমাবাজ এমন কি হিংস্র র্যাবও। আর প্রতীার ব্যাপারে আরো কথা আছে। ক্যামিলা পার্কারকে ব্যঙ্গ করে বলা হতো ডেট এক্সপায়ারড। সেই ডেট এক্সপায়ারডকে কিন্তু দীর্ঘদিন প্রতীার পর এ বছর বিয়ে করেছেন প্রিন্স চার্লস। ডায়নার ব্যাপারে খুব বেশি ফিলিংস আমার। তবুও ধন্যবাদ চার্লসকে। তবে এ দেশে এখন কেউ আর ডেট এক্সপায়ারড খাদ্য সহজে খেতে চাচ্ছে না। সারাদেশে একজন ভেজালবিরোধী প্রচারণার নায়ক হয়ে উঠেছেন। তার নাম রোকন উদদৌলা। তাকে বিশুদ্ধ ও ভেজালমুক্ত ধন্যবাদ। চিঠিতে তুমি লিখেছ উত্তরাধিকারের কথা। ব্যক্তিত্দ্বের েেত্র তোমার 'আইডল' আমাদের মহান নবীজীর কোনো উত্তরাধিকার ছিল না। তবে সারা পৃথিবীতেই এটা কোনো না কোনো কর্মে আছে। সিনিয়র বুশের পর তাই তার ছেলে খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। জহরলাল নেহেরুর পর ইন্দরা গান্ধী, তারপর রাজিব গান্ধী এবং শেষমেশ রাহুল গান্ধীও আজ মতার দ্্বারপ্রান্তে। শ্রীলংকা কিংবা পাকিস্তানেরও এটা আছে, আছে বাংলাদেশেও। আর তাই বছরের একেবারে প্রথম দিকে শেখ হাসিনা তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় যখন তার বিদেশি স্ত্রী নিয়ে এ দেশে আসেন তখন তাকে জমকালো সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। আর শোন, আমেরিকান আইডলের মতো ইন্ডিয়ান আইডল দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই আদলে এ দেশে তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ খুব জনপ্রিয় হয়েছে। আর এই আমি মুনাদ এখন শুধু তোমাকেই খুঁজছি! তবে জেনে রেখ, আমি উত্তরাধিকারের জন্য কাঙ্খিত নই। আর জানো তো? চাইলে 57 বছর বয়সেও মা হওয়া যায়? এ দেশের বিখ্যাত গায়িকা কাঙালিনী সুফিয়া এ বয়সে মা হয়েছেন! আমেরিকা থেকে তুমি সহজেই বাংলাদেশে আসতে পার তুনাবী। তুনাবী তুমি জান না, খালেদা কিংবা হাসিনা না বসলেও যাকে নোবেল দেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে, সেই ড. মু. ইউনুস বলেছেন, 2030 সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব। যদি তাই হয়, ফিরে এসো এই দেশে। ত্রিশ বছর পর অর্থাৎ ভবিষ্যতে গল্পচ্ছলে বলা যাবে, জানো আমাদের দেশটা না একসময় কী গরিব ছিল! আমাদের নায়িকারা কাপড়ের অভাবে যখন অল্প স্বল্প কাপড় পরত, আমরা তখন সিনেমায় অশ্নীলতা নিয়ে আন্দোলন করতাম! উত্তরবঙ্গে যখন অভাব দেখা দিত, তখন 'মঙ্গা' বন্ধ করতে আমরা কতকিছুই না করতাম! অথবা এমন হতে পারে, আমি আমেরিকায় যাব তোমার জন্য। কিন্তু যাব কীভাবে? জানত এ দেশে আমেরিকার ভিসা পাওয়া মানে সোনার হরিণ হাতে পাওয়া। তেমন এক সোনার হরিণের সন্ধানে অবৈধভাবে মরক্কো থেকে স্পেনে যাওয়ার পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় 11 দিন না খেয়ে থেকে ধুঁকে ধুঁকে মরেছিল 11 জন। সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিতে গিয়েও এবছর মারা গিয়েছিল 13 জন। তুনাবী অনুভব করতে পার, একটুকরো সুখের আশায় কতটা বাধ্য হলে মানুষ এমনভাবে মৃতু্যকে মেনে নিতে পারে? তুনাবী, তুমি অন্তত এভাবে আমাকে আমেরিকা যেতে বল না! যদি তাই হয়, যদি দু'জনকে থাকতে হয় দু'দেশে, তাহলে কি আমাদের ভালোবাসা বর্ণালি হয়ে আলোকচ্ছটা বিকিরণ করবে না? ভুল লিখলাম হয়তো তুনাবী। বর্ণালির ইংরেজি প্রতিশ্বন্ধ যদি স্পেকট্রাম হয় তাহলে সেটা এ দেশে এখন ভীতিকর একটা নাম। তুমি কি জানো, একটু আগেভাগে বেতন পাবে বলে সাভারের স্পেকট্রাম গার্মেন্টসে রাত জেগে যারা কাজ করছিল, তাদের নিয়তি ছিল একেবারেই অন্যরকম। রাতের অাঁধারে ধসে পড়েছিল নয়তলা ভবন। মারা গিয়েছিল চুয়াত্তর জন মানুষ। তুনাবী সাধারণ মানুষের স্বপ্নকে যারা এমনভাবে খুন করে, বলতে পার তাদের কতবার ক্রসফায়ারে নেয়া উচিত? এ দেশটা নিয়ে নেগেটিভ প্রচারণা বেশি হয়। দুনর্ীতিতে পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে আসে। খরা, বন্যা, মঙ্গা কিংবা হতদরিদ্রতেও এই আমরা যখন শুনি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের 'ভয়ঙ্কর' তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠেছে, তখন আরো বেশি ব্যথিত হই। এক সঙ্গে 63 জেলায় 500 বোমার বিসম্ফোরণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঘটেনি। এরপর আরো ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দেয় জেএমবির সদস্যরা। তারা আত্দ্মঘাতী হয়ে ওঠে। শরীরে বোমা বেঁধে নিজেরাও মরে, মেরে ফেলে বিচারকদের। এসব দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। ভাবি, কী করে বলি তোমাকে, দুঃখ পেলেও আসিস? পারলে ভালোবাসিস! শত হতাশার ভেতরে পিছু হটতে হটতে যখন দেয়ালে ঠেকে যায় পিঠ, তুনাবী তখনই মনে হয় ঘুরে দাঁড়ানোর চেয়ে ভালো কোনো শিল্প নেই পৃথিবীতে। তখনই স্মৃতি হয়ে আসে '52, চেতনায় ভর করে '71। ঘুরে দাঁড়ানোর পর পিঠের পেছনে নিশ্বাস ফেলে দুর্বার '90। মনে হয় আমায় রুখতে পারে এমন সাহস কার? আর তাই বলি, মানুষ জাগবে ফের। তুনাবী তুমি দেখে নিও বোমাবাজ ও তাদের গডফাদারদের খুঁজে বের করবেই মানুষ। ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে ঘৃণার চাবুক মারতে মারতে মানুষ তাদের বলবে '71-এর রাজাকার আর 2005-এর বোমাবাজরা একই। বাংলাদেশ তোদের চায় না। তোরা বাংলা ছাড়। জঙ্গিবাদের এ বছরটা শেষ হবে। জেনে রেখ আশায় উদ্ভাসিত হবে দিন। আমার সব আয়োজন দিয়ে রাজধানীটাকে সার্কের চেয়েও শতগুণ ভালো করে সাজাব। তারপর খবর দেব তোমায়। পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যা হয়ে থাকলে চলবে না তুনাবী। ফিরে আসতে হবে তোমাকে এই বাংলাদেশে। যদি নাই আস, যদি ফুঁসে ওঠে বুকের ভেতরে একলা থাকা সমুদ্দুরের সবগুলো বিবাগী ঢেউ। তবে জেনে রেখ তুনাবী, এই আমি আত্বঘাতী হব। সারা শরীরে বোমা বেঁধে আমি তোমার কাছেই আসব। জান তো, বোমা মেরে এ দেশটাকে যারা আফগানিস্থান বানাতে চায়, তারা কেউ বেহেশতে যাবে না। কিন্তু আমার ব্যাপারটা ভিন্ন। রাশিয়ান প্রবাদ এমন ভালোবাসার জন্য কেউ আত্বহুতি দিলে সে শহীদ হয়! এ দেশের বীরদের বড় অভাব। শহীদ হওয়ার আগে ফিরে এসো তুনাবী!

ইতি
তোমারই মুনাদ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৬ সকাল ৯:১৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×