মেসিডোনিয়ার শাসনকর্তা তৃতীয় আলেকজান্ডারই ইতিহাসের বিখ্যাত সমরবিদ সাহসী মহামতি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান তিনি। আলেকজান্ডার ৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব জুন মাসের ১১ মতান্তরে ১২ তারিখে ব্যাবিলনে দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিবসে তাঁর জন্য আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আলেকজান্ডার ৩৫৬ খ্রিস্টপূর্ব অব্দের জুলাই মাসে মেসিডোনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তার চতুর্থ স্ত্রী অলিম্পাসের সন্তান। আলেকজান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন। আলজান্ডার নিজেও এই নগররাষ্ট্রগুলিকে একত্রিত করতে অভিযান চালান কারণ ফিলিপের মৃত্যুর পর এগুলো বিদ্রোহ করেছিল। এরপর আলেকজান্ডার একে একে পারস্য, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, ফোনিসিয়া, জুডিয়া, গাজা, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া এবং মেসোপটেমিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য।
আলেকজান্ডার তার সামরিক কৌশল ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন জাতির কাছে বহু নামে তিনি পরিচিত। পারস্যে তিনি 'অভিশপ্ত আলেকজান্ডার' নামে পরিচিত। কারণ তিনি পারস্য জয় করে রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রিসের একটি অঞ্চল। আলেকজান্ডারের বাবা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী আলেকজান্ডার পৃথিবীর বেশির ভাগ এলাকা জয় করেন। এতে তাঁর আমলে বিভিন্ন সভ্যতার মিলন ঘটে। যেমন মিসর, গ্রিক, পারস্য ও ভারতীয় সভ্যতার সংশ্লেষণে শুরু হয়েছিল এক নতুন সভ্যতা। এই সভ্যতাই হেলেনেস্টিক সভ্যতা নামে পরিচিত। ফরাসি ভাষায় তাঁকে ইস্কান্দর বলা হয়। মধ্য-পশ্চিম স্থানে জুলকারনাইন, আরবে আল ইস্কান্দর আল কাবের, উর্দুতে 'সিকান্দরে আজম' বলা হয়।
আলেকজান্ডার একের পর এক রাজ্য জয় করে ইরান, আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাব পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। তখন ভারত অঞ্চলের রাজা গঙ্গারিডি। গঙ্গারিডি সম্পর্কে প্রাচীন গ্রিক ও লাতিন ঐতিহাসিকদের লেখায় পাওয়া যায়। ভারত দখলের প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিপাশা নদী। তা ছাড়া গঙ্গারিডির চার হাজার হস্তীবাহিনীর কথা শুনে আলেকজান্ডার বিপাশা নদী পার হয়ে আসেননি। এই হস্তিবাহিনীর সম্মুখে তাঁর ক্লান্ত সেনাবাহিনীর বিজয় সুনিশ্চিত না হতে পেরে তিনি ফিরে যান মেসিডোনিয়ায়।
খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে ২ জুন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জুন মাসের ১১ মতান্তরে ১২ তারিখে ব্যাবিলনে দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন।তখন দিন শেষে সন্ধ্যা নেমে আসছিল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩২ বছর। মহামতি আলেকজান্ডারের মুত্যুদিনে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২