somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ও বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম-মৃত্যুদিনে গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা

০১ লা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ১ জুলাই এমন একজন ব্যক্তিত্বের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যিনি তাঁর জন্মদিনেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তবে মাঝ খানে সময়ের ব্যবধান ছিলো ৮০ বছর। এই কৃতিমান ব্যক্তিত্বের নাম ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। আধুনিক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রূপকার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় ১৯৪৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী এবং আমৃত্যু তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর ১৪ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে নবগঠিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রভূত উন্নতি সম্ভব হয়েছিল। এই কারণে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের রূপকার নামে অভিহিত করা হয়। চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর ছিল বিশেষ খ্যাতি। আজ ১লা জুলাই তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিবস। ১৮৮২ সালের ১ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন আর মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬২ সালের ১ জুলাই। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিন (১ জুলাই) সারা ভারতে "চিকিৎসক দিবস" রূপে পালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের রূপকার ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম-মৃত্যুদিনে গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।


ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় ১৮৮২ সালের ১ জুলাই বর্তমানে বিহার রাজ্যের অন্তর্গত পাটনার বাঁকিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পিতা প্রকাশচন্দ্র রায় ও মা অঘোরকামিনী দেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে সর্বকণিষ্ঠ। অঘোরচন্দ্রের আদি নিবাস ছিল চব্বিশ পরগনার শ্রীপুর গ্রামে। সরকারি চাকুরিজীবি প্রকাশচন্দ্র ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। বিধানচন্দ্রের লেখাপড়ার সূচনা হয়েছিল এক গ্রাম্য পাঠশালায়। পরে পাটনার টি. কে. ঘোষ ইনস্টিটিউশন এবং তারপর পাটনা কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। বাল্যকালে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার মধ্যে প্রতিপালিত হয়েছিলেন বিধানচন্দ্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও গভীর আগ্রহ ছিল তাঁর। জানা যায়, প্রবেশিকা পরীক্ষায় অঙ্কন পরীক্ষার দিন পাশের মাঠ থেকে ফুটবল খেলার আওয়াজ শুনে অসমাপ্ত খাতা জমা দিয়েই খেলার মাঠে চলে গিয়েছিলেন বিধানচন্দ্র।


১৮৯৭ সালে মাতৃবিয়োগের এক বছর পর প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাটনা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৮৯৯ সালে এফ.এ. এবং ১৯০১ সালে গণিতে সাম্মানিক সহ বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এর পরে ১৯০১ সালে পাটনা কলেজ থেকে গণিতে অনার্স সহ বি.এ. পাশ করে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে এল এম এস এবং দু বছর পর মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে এম ডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বিলাত গিয়ে কেবল দু বছর সময়কালে একসাথে এম আর সি পি (লন্ডন)এবং এফ আর সি এস (ইংল্যান্ড) পরীক্ষায় সসম্মান উত্তীর্ণ হয়ে সেখানকার ছাত্রশিক্ষক মহলে আলোড়ন তোলেন। পরবর্তীতে ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড থেকে এফ.আর.সি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার ক্যাম্বেল মেডিক্যাল স্কুলে (বর্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ) শিক্ষকতা ও চিকিৎসা ব্যবসা শুরু করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সদস্য, রয়্যাল সোসাইটি অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন ও আমেরিকান সোসাইটি অফ চেস্ট ফিজিশিয়ানের ফেলো নির্বাচিত হন।


১৯৪২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত হন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। তিনি ১৯৪৩-৪৪ খ্রীঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় গড়ে উঠল রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ, পুরুলিয়া , রহড়া, নরেন্দ্রপুরে প্রাচীন ভারতীয় আদর্শে আশ্রমিক পরিবেশে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয় । দেশ স্বাধীন হবার পর উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল হবার জন্য তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর লোভনীয় প্রস্তাব সবিনয় ফিরিয়ে দিয়ে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থীরূপে আইনসভায় নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের আইন সভার সদস্যগণ একবাক্যে তাঁকে দলনেতা নির্বাচন করলে ১৯৪৮ সালের ১৪ই জানুয়ারি সমস্যাকন্টকিত ভূমিখন্ডকে নবরূপ রূপায়ণকল্পে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিত্বে থেকে মৃত্যুকাল অবধি ১৪ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি আধুনিক পশ্চিমবঙ্গের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবে পরিণত করেছিলেন। তিনিই দুর্গাপুর, কল্যাণী ও বিধাননগরের মত শহর গড়েছিলেন।


রাজনীতির বাইরে ডাক্তারী পেশায় রোগ নির্ণয়ে ও ওষুধ নির্বাচনে তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি। এই পেশাকে তিনি কোনোদিনই ব্যবসায়ীর লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখেননি। পরবর্তীকালে মুখ্যমন্ত্রীর গুরুদায়িত্বপূর্ণ নানা কাজের মাঝেও জাতি ধর্ম দল মত নির্বিশেষে দীনদরিদ্রের সেবায় নিয়মিতভাবে তিনি দৈনিক একটি ঘণ্টা ব্যয় করতেন। ১৯৬১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত হন। মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানে কলকাতার উপনগরী সল্টলেকের নামকরণ করা হয় বিধাননগর।


১৯৬২ সালের ১লা জুলাই বিধানচন্দ্র রায় মৃত্যুবরণ করেন। প্রতি বছর তাঁর জন্ম ও মৃত্যু দিন ১ জুলাই ভারতে চিকিৎসক দিবস হিসাবে পালন করা হয়। আজ ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম-মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×