somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলার ১৭৪তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা

০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলা। ফ্রান্সের রাজনৈতিক উদারনৈতিকতার জন্য সবসময় কাজ করেছেন এমিল জোলা। শুরুতে তিনি ফরাসি শুল্ক বিভাগের একজন করণিক ছিলেন। পরে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে এমিল বিভিন্ন পত্রিকায় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা শুরু করেন। এই সময়ে তিনি ফ্রান্সের পরিবেশবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সাহিত্যে প্রকৃতিবাদী চিন্তাধারার অত্যন্ত জোরালো প্রবক্তা ছিলেন তিনি। ১৮৭১ হতে ১৮৯৩ সালের মধ্যে তাঁর ২০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।


তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে রয়েছে ‘নিনা’, ‘লা তেরা’, ‘লা মিরর’ প্রভৃতি। দ্য আর্থ (বাংলায় অনুদিত গ্রন্থ মাটি) বা দ্য জার্মিনাল (বাংলায় অনুদিত গ্রন্থ অঙ্কুর) এর মতো উপন্যাস সহ আরো অনেক কালজয়ী উপন্যাসের রচয়িতা ছিলেন এমিল জোলা। বিশ্বের "ঔপন্যাসিকদের ঔপন্যাসিক" হিসেবে খ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিক এমিল জোলা ১৮৪০ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন। আজ এই বিখ্যাত লেখকের ১৭৪তম জন্মদিন। প্রথিতযশা ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলার জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।


(শিশু বয়সে এমিল জোলা)
এমিল জোলা ১৮৪০ সালের ২ এপ্রিল প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফ্রেন্সকোসিস জোলা ছিলেন ইতালিয়ান প্রকৌশলী এবং মা ফ্রান্সের মেয়ে এমিল অবার্ট। ১৮৪৭ সালে জোলার বয়স যখন মাত্র সাত, তখন তার বাবা মারা যান। এরপর তিনি মায়ের কাছেই বড় হতে থাকেন। ১৮৫৮ সালে তিনি পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান প্যারিসে। সেখানে বন্ধু হিসেবে পান বিখ্যাত চিত্রকর পল সেজানকে। এ সময় তিনি রোমান্টিক ধাঁচে লেখালেখি শুরু করেন। জোলার মায়ের পরিকল্পনা ছিল ছেলেকে আইন পড়াবেন এবং আইনেই তার ক্যারিয়ার গড়বেন; কিন্তু লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় জোলা স্নাতক পরীক্ষায় ফেল করেন।পরর্বতী সময়ে তার আর আইন পড়া হয়ে ওঠেনি। লেখালেখির শুরুতে জোলা লেখেন ছোটগল্প ও গদ্য, চারটি নাটক এবং তিনটি উপন্যাস। তার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৮৬৪ সালে। ১৮৬৫ সালে তার জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি পুলিশের তোপের মুখে পড়েন। লেখক হিসেবে পরিচিতির আগে তিনি কাজ করতেন একটি জাহাজ কোম্পানির কেরানি হিসেবে। তখনো তিনি পত্রিকায় সাহিত্য ও শিল্প সমালোচনা লিখতেন সাংবাদিকদের মতো।


১৮৬৭ সালে প্রকাশিত হয় তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘থেরেস রিকুইন’। এরপর এমিলি দ্বিতীয় ফরাসি সম্রাটের পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ধারাবাহিক লিখতে শুরু করেন। জোলা এবং সেজানের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল। কিছুটা ছন্নছাড়া ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন জোলা আর সেজান। একটি উপন্যাসে জোলা তাদের ছন্নছাড়া শিল্পী জীবনের জীবনচিত্র আঁকার পর তাদের জীবনে কিছুটা পরির্বতন আসে। জোলার জীবনে অপরাধীদের সঙ্গে মেশার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটার ঘটনাও আছে। তিনি বলতেন, 'সত্য সর্বদা চলমান এবং তাকে কখনোই থামিয়ে রাখা যায় না। ' তিনি সব সময় একটি নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন। ১৮৯৮ সালের ১৩ জুলাই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে তিনি একটি খোলা চিঠি লেখেন এবং দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় তা প্রকাশিত হয়। একজন আর্টিলারি অফিসারের বেআইনি কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেন ওই চিঠিতে। এছাড়া বিচার ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি এবং মামলার গুরুত্বপূর্ণ দলিল মুছে ফেলার কথাও তিনি বলেন। ফলে রাজরোষে পড়েন এবং ১৮৯৮ সালে তাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তিনি কারাদণ্ড এড়াতে ইংল্যান্ডে আত্মগোপন করেন এবং দেশে ফেরেন তার পরের বছর।


কেরানী থেকে লেখক হয়ে ওঠা এমিল জোলা ১৯০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৬২ বছর বয়সে ঘরের চিমনি বন্ধ হয়ে বিষাক্ত কার্বন-মনোঅক্সাইডজনিত গ্যাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর জন্য তার শত্রুদের দায়ী করা হলেও কোনো প্রমাণ ছিল না। তবে বলা হয়ে থাকে, শত্রুরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ঘরের চিমনি বন্ধ করে দিয়েছিল। জোলাকে প্যারিসে সমাহিত করা হয়; কিন্তু মৃত্যুর ছয় বছর পর অর্থাৎ ১৯০৮ সালের ৪ জুলাই তার স্মরণে তাকে সর্বদেবতা মন্দিরে সরিয়ে নেওয়া হয়।


১৯৩৭ সালে জোলার জীবনী নিয়ে তৈরি করা হয় চলচ্চিত্র 'দ্য লাইফ অব এমিলি জোলা'। মুভিটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড পায়। আজ এমিল জোলার ১৭৪তম জন্মদিন । প্রথিতযশা ফরাসী লেখক ও সাংবাদিক এমিল জোলার জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×