সূর্যের তেজে পড়েছে বয়সের ছাপ
বৈকালি আকাশের গায়ে,
পড়েছে ছোপ ছোপ মেঘের দাগ সুস্পষ্ট।
আগুন্তুকের ছায়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে
নবীন প্রেতাত্মার দল,
শ্মশানের ওপাড়ে বসত গেড়েছে
অন্ধকারের গাড় পল্লী। শুধু,
আমরা কজন এখন ঠায় দাঁড়িয়ে বাকহীন।
একে একে সবাই এসেছে,
অজিত, রাজন, আরও অনেকে। শুধু,
সূবর্নটা এখনও আসেনি।
সেই যে বেরিয়েছে ছোকরাটা
ফুলহাতা ফতুয়া আর দুধ সাদা ধূতিটা পরে
এরপর আর কোন খবর নেই।
বিষ্ণুদার চায়ের কাপে
চিট চিটে ময়লার ক্ষত,
তবুও তৃপ্তি পেতাম চা খেয়ে।
সেই বিষ্ণুদা এসে বল্ল
আমি দেখেছি ওকে, মুখটা ভার ছিল
ছিল পানকৌড়ীর মত উদ্বাস্ত,
হাতে ছিল একগাদা কাগজ, অনেকখানি,
ফ্যাকাসে গলায় ঠোঁট নেড়ে বল্ল!
দাদা প্রনাম রেখ, এই লক্ষীগুলোর গায়ে
অলক্ষীর আঁচড় পড়ে পুঁজ জমেছে
তাই, গঙ্গা স্নান করাব।
কাল এসো আমার বাড়িতে
আমাকেও একটু গঙ্গাজ্বল ছিঁটিয়ে যেও
“হ-রি-বো-ল”
যাচ্ছি গো দাদা, এরপর আর দেখিনি।
সূবর্নটা একটু অভিমানিই বটে, তা না হলে
এই ভর সন্ধায় পুরোহীতগুলো
ওদের বাড়িতে যাচ্ছে কেন?
আমিওতো খুঁজেছি হন্নে হয়ে
অন্ন ধংসের আপবাধ আমিওতো কম শুনিনি,
তবে একটু কমই হেঁটেছি, শুকতলা ক্ষয়ে যাবার ভয়ে,
শেষ সম্বলটা না হারিয়ে ফেলি তাই।
একে একে সবাই চলে গেছে,
আমি একা দাঁড়িয়ে কারন,
সূবর্নর একান্ত কাছের মানুষটি মৌমিতা
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে পথ দেখছে আমাদের
আমরা আসব বলে।
আমি ওকে ছোঁয়ে কথা দিয়েছিলাম
শেষবারের মত হলেও,সূবর্নকে নিয়ে যাব
দেখবে বলে।
কিন্ত সন্ধ্যার আরতী শেষ হওয়ার পথে
ধূপ কাঠির পর্বটাও শেষ।
অন্ধকারের রথ যাত্রায় নিজেকে সপেঁছে প্রকৃতি,
কাছের কোন এক শশ্মানে ধ্বনিত হচ্ছে
“হরিবল”“হরিবল” নামের গা ছমছম করা শব্দ।
মড়া পোড়ার গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে
ঘী চন্দনের পাট চুকে গিয়ে
পড়ে আছে আছে এক বিস্তর ছাই
কিন্তু..........সূবর্নটা এখনও আসেনি।
২০০৪ সালে, আমি একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম বাংলাদেশের শ্যামল এক গ্রামে সেখানে এই কবিতার চরিত্র সূবর্নদার বন্ধু অজিতদার সঙ্গে ঘটনা চক্রে আমার পরিচয় হয়, আর তার কাছ থেকে আমি শুনেছি সূবর্নদার কথা। সূবর্নদা পারিবারিক ভাবে কিছুটা অসুখি ছিলেন, তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলে। যাইহোক, যোগ্যতা থাকার পরও সূবর্নদা একটা চাকরি যোগাতে পারেনি, যানিনা এটা তার অযোগ্যতা, নাকি আমাদের এ তথাকথিত গনন্ত্রান্ত্রিক দেশের ক্ষমতাবানদের সর্বক্ষেত্রে ক্ষমতায়নের কুফল, এ প্রশ্ন আজ সবার বিবেকের কাছে। সূবর্নদা জীবনের দৌড়ে হেরে গেছেন কিন্তু আর কত। আজও কি আমাদের জেগে ওঠার সময় হয়নি?
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। শুভকামনা। দেখা হবে কমেন্ট এর পাতায় কিংবা জীবন যুদ্ধের রন ক্ষেত্রে।
বিঃদ্রঃ কেউ আমারে সিরিয়াসলি নেয় না আমি রম্য লিখি বইল্লা, আইজ সবাই দেখ কেমুন সিরিয়াস কবিতা লিখছি, এইবার সবাই বুঝবে আমি কত সিরিয়াস একজন মানু।
সূবর্নটা এখনও আসেনি....উৎসর্গঃ জীবন যুদ্ধে যারা হেরে যেতে চায় না, যারা হতে চায় না সূবর্নদার মত তাদের কে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩০টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)
ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন