পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলার আসামি তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে গাজীপুর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র (সংশোধনাগার) কেন্দ্র থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হান্নান ও সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন অফিসার সিদ্দিকুর রহমানের পৃথক পৃথক আবেদনক্রমে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাত এ নির্দেশ দেন।
আদালতের পল্টন থানার জিআরও গফফারুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আদালতে দাখিলকৃত জন্ম রেজিস্ট্রার দেখে বিচারক এ আদেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঐশী খুলনায় যে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে, ওই হাসপাতাল থেকে তার জন্মগ্রহণের রেজিস্ট্রার সংগ্রহ করেন। সে হিসাবে তার বয়স বর্তমানে প্রায় ১৯ বছর।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ঐশীর প্রকৃত বয়স কতো তা জানার জন্য গত ২২ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে ঐশীর পাঁচটি পরীক্ষা করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাঁটুর হাড়, দাঁত ও মেরুদণ্ডসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের এক্স-রে। ডাক্তারি পরীক্ষার তথ্য হাতে পেয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক মর্মে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বিচারক তাকে গাজিপুরের টঙ্গীর কিশোরী সংশোধন কেন্দ্র থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২৪ আগস্ট শনিবার বাবা-মাকে হত্যার বিষয়ে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঐশী রহমান ও তাদের বাসার গৃহকর্মী খাদিজা বেগম সুমি। বিচারকের খাস কামরায় দিনভর জবানবন্দি দেওয়ার পর সন্ধ্যায় তাদেরকে গাজীপুরে কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। ওই দিন রাত ৯টায় তাদের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে নেওয়া হয়। এর পরদিন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ঐশীকে কিশোরী সংশোধন কেন্দ্র থেকে কারাগারে পাঠানোর জন্য উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
এর আগে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে ঐশী ও সুমিকে আদালতে হাজির করা হয়। তারা স্বীকারোক্তি দেওয়ায় তাদেরকে আর রিমাণ্ডের আবেদন জানায়নি পুলিশ। অন্যদিকে একই সঙ্গে রিমান্ডে নেওয়া ঐশীর বন্ধু রনিকে আবারো রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে তাদের চামেলীবাগের ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়। ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭ আগস্ট দুপুরে পল্টন থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের মেয়ে ধানমণ্ডির অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ও-লেভেলের শিক্ষার্থী ঐশী রহমান। পরে গৃহকর্মী সুমিকেও থানায় দিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আটক করা হয় ঐশীর বন্ধু রনিকে।
১৮ আগস্ট আদালতে পাঠিয়ে ঐশীসহ তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
ঐশীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জানায়, ইয়াবা সেবনে বাধা দেওয়ায় মেয়ে ঐশীর পরিকল্পনাতেই হত্যার শিকার হন মাহফুজ দম্পতি। বাবা-মা খুন হয়ে যাওয়ার পরও একমাত্র মেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
তবে কিশোরী ঐশী ও সুমিকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেওয়ার ব্যাপারটি সমালোচিত হয়ে আসছিল। মানবাধিকার কর্মীরা আরো বলে আসছিলেন, নাবালিকা ঐশীকে কোনোভাবেই কারাগারে পাঠানো যাবে না।
নিহত মাহফুজুর দম্পতির অন্য সন্তান ছেলে ঐহী রহমান (৭) রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র।