সামর্থের অভাবে ব্যাক্তিগত কার বা গাড়ী না থাকায় আমাদের মতো মধ্যবিত্ত বা নিন্মমধ্যবিত্ত ফ্যামিলির একমাত্র ভরসা ঢাকা শহরের লোকাল বাস। রাস্তার জ্যাম আর রিকসার ঝনঝনানি আওয়াজ আমাদের কানের কখনো ১২টা বাজায় না। আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে তাই হয়তো ভাবি অভ্যাস মানুষের দাস যেমন সত্য তেমনি ক্ষেত্র বিশেষে মানুষ অভ্যাসের দাস হয়ে যায়।
প্রতিদিন লোকাল বাসের কল্যানে সকালের অফিস ধরতে ১৫মিনিটের রাস্তা ১৫০মিনিট আগেই বাসা হতে রওয়ানা দিতে হয়। আবার বাসায় ফেরার সময় বিকাল ৫টায় বের হলেও রাত ৭/৮টার আগে ঘরে পৌছতে পারিনা। তবু শুকরিয়া এই কারনে যে আমারতো আর বেকারদের যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়না। হাজারো বেকার ভাইদের অসহায়ত্ব থেকে যে দিন মুক্তি পেলাম সে দিন একটি দীর্ঘশ্বাষ ফেলে চাকুরী জিবনের ডিজিটাল চাকর হয়ে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।
যা হউক মূল কথায় আসি , বাসে ঝগড়া হচ্ছে কন্টাকদার আর একজন ছাত্রের মাঝে কন্টাকদার ভাড়া চাইতেই ছাত্র ভাইটি ৫টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিল। কন্টাকদার বল্লো ভাই ভাড়া ১০ টাকা আর ৫টাকা দেন। উত্তরে ছাত্রভাইটি বল্ল ভাড়া ৫টাকাই। এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক । হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাবার উপক্রম। বাপ মা তুলে গালাগাল চলছে। একজন শিক্ষিত মানুষের মুখতো অশিক্ষিত লোকের মুখের মতো এতো শানধার গালি দিতে পারেনা। তাই গালীর জগতে কন্টাকদার বরাবর এগিয়েই থাকলো। এক পর্যায়ে ছাত্র বন্ধুটি ৫টাকা ভাড়ার যুক্তি উপাস্থান করলো এই বলে যে সে ছাত্র। কন্টাকদার নরম সুরে বল্লো আপনি ছাত্র তা আগে বল্লেই পারতেন। এতো কথার দরকার ছিলনা। এখন তো আপনার ছাত্রত্ব নিয়েই সন্দেহ হয়।
কথাটা আমাকে ভাবনায় ফেলে দিলো আসলেই তো একজন কন্টাকদার সারা দিন গাড়ীতে ভাড়া কাটে। অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়। ভাড়া না থাকলে কখনো কোনো কন্টাকদেরকে বাস হতে নামিয়ে দিতে দেখিনি। তারা হয়তো আমাদের মতো ইউনির্ভাসিটিতে পড়ে নাই তাবপর ও প্রতিদিন কতশত মানুষের কথা হজম করে , অনেকক্ষেত্রে শারিরীরিক নির্যাতন সহ্য করে পেটের দায়ে পড়ে থাকে বাস মালিকের পায়ের কাছে। তার সাথে ঝগড়া করাটাকে আমরা অনেকে বাহাদুরি মনে করি । আমি ছাত্র কথাটা কথাটা অনেক ছাত্রভাইয়েরা কন্টাকদারকে বলতে চান না। পরিচয়টা দিতে কেন এতো সংকোচ ? বিষয়টা আমার মাথায় আসেনা। ২০ মিনিটের ঝগড়াটা হতো না , মা-বাপকে গালিও শুনতে হতো না আবার ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্নও উঠতো না যদি পরিচয়টা আগেই দিয়ে হাফভাড়াটা পরিশোধ করতো। বর্তমান ফ্যাশনাবল দুনিয়াতে কে ছাত্র, কে অছাত্র বুঝা মুসকিল। আমার নামার স্টেশন হলো সর্বশেষ তাই এক পর্যায় বাস অনেক ফাকা। পাশের সিটের ভদ্রমহোদয় নামতেই ডাকলাম কন্টাকদারকে বসতে বল্লাম পাশের সিটে। জানলাম তার হাল হকিকত। তার ভাষ্য হলো ভাই আমরাও মানুষ সারা দিন কতমানুষের সাথে কথা বলতে হয়। চিল্লাইতে হয়। মাথা এমনিতেই গরম থাকে। ছাত্র যদি না বলে যে আমি ছাত্র তাইলে কেমনে বুঝমু বলেন। আবার অনেকে বলে ভাড়া পরে নে আমারতো যাত্রি একজন না ৫০/৬০জন যাত্রি ভাড়াটা দিয়ে দিলেই হয় । বল্লাম আগে ভাড়া দিলে কিছুক্ষন পর পর ভাড়া চাস কেন? সে জবাবে বল্ল ভাই কতলোক, সারাদিনের ধকলের মাঝে কে কখন উঠে নামে মনে রাখা এতো সহজ না। সহজেই মনে রাখতে পারলে স্কুল পালাইয়া আজ বাসের কন্টাকদার হইতাম না। কথাটা বলে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। লক্ষ করলাম তার চোখ দুটো অশ্রুতে টলমল করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৬