somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণজাগরন মঞ্চের সত্য ও আদর্শ বিচ্যুতি এবং তার ফলাফল

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে আজ শহীদের ছড়াছড়ি। বেঁচে থাকার চেয়ে শহীদ হওয়া যেন সহজ হয়ে গেছে। সর্বত্র যে সংঘর্ষ, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে এর জন্য দায়ী কে? অবশ্যই জামায়াত-শিবির, সাথে বিএনপি, আওয়ামী লীগ আর এরা মাঠে থাকলে পুলিশ তো থাকবেই। কোন যৌক্তিকতার ভিত্ততে জামায়াত-শিবির এই তান্ডব চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারছে? কোন যৌক্তিকতার ভিত্ততে বিএনপি জামায়াত কে অন্ধ সমর্থন দেওয়ার উৎসাহ পেলো? এই তান্ডব, অন্ধ সমর্থনের উৎসাহ তারা পেয়েছে গণজাগরন মঞ্চের আদর্শের বিচ্যুতির কারণে। গণজাগরন মঞ্চের আদর্শের বিচ্যুতি কিভাবে ঘটলো সেইটা দেখা যাক-

১) ফেব্রুয়ারি ৫ তারিখে যখন আন্দোলন শুরু হয় এবং তা পরবর্তীতে জনসমুদ্রে রূপ নিলো তখন বলা হলো আন্দোলন হবে অহিংস। নিঃসন্দেহে খুবই প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত কিন্তু বিপত্তি হলো তখন যখন স্লোগান দেওয়া হলো "একটা, একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর" এবং গণজাগরন মঞ্চ থেকে এই স্লোগানকে সমর্থন দেওয়া হলো। অহিংস আন্দোলনে সহিংস স্লোগানের কোনো স্থান থাকতে পারেনা। দেশপ্রেমের আবেগের অতিশয্যে এসে এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে বুঝলাম কিন্তু পরক্ষনেই যখন শুভবুদ্ধির উদয় হলো তখন উচিৎ ছিলো মঞ্চ থেকে এই স্লোগান বর্জনের জন্য ঘোষনা দেওয়া। ফাঁসি চওয়া আর জবাই করা এক কথা নয়। অনেকে বলবেন যে এইটা প্রতীকি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাদেরকে বলি যে আমাদের দেশের আপামর জনসাধারন যদি এতোই প্রতীকি অর্থ বুঝতো তাহলে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের সঠিক অর্থ সবার বোধগম্য হতো। ব্লগার রাজীবের হত্যাকান্ডের পর শিবির মানুষকে বোঝালো "নাস্তিকরা আমাদের জবাই করতে চাই"। আর তো কিছু লাগেনা কিন্তু এইখানেই শেষ নয়।

মহাসমাবেশে বলা হলো জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠাপোষকতায় চালিত সকল আর্থিক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বর্জনের। জামায়াত শিবিরের তান্ডব এর প্রতিবাদে হউক আর আবেগের অতিশয্যে হউক দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইসলামী ব্যাংকের শাখা, এটিএম বুথ ভাঙচুর করা হলো এবং এইগুলো অহিংস আন্দোলন থেকে সমর্থনও পেলো। সহিংস কার্যকলাপকে সমর্থন দিলে আন্দোলন কিভাবে অহিংস থাকলো?

অহিংস আন্দোলন জনপ্রিয় করেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি নিজে অহিংস মতবাদে বিশ্বাস করতেন এবং বৃটিশ রাজ অথবা তাঁর স্বদেশীর কোনো প্রকার সহিংসতাকে তিনি সমর্থন করতেন না। আর এই কারণে তার সমসাময়িক ভগত সিং, নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু প্রমুখকে সমর্থন দেননি কিন্তু তাদের দেশপ্রেমকে শ্রদ্ধা করতেন। ১৯২২ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে সংঘর্ষের পর আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে মোড় নিতে দেখে গান্ধী "অসহযোগ" আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

অহিংস আন্দোলনের আদর্শ এমন হবে যে আমি নিজে সহিংস হবনা এবং কোনো প্রকার সহিংসতাকে সমর্থন দিবনা। আমি নিজে ভাংচুর করলাম না কিন্তু আমার কথা, স্লোগান দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে অন্য আরেকজন ভাংচুর করলো আবার সেইটাকে আমি সমর্থনও দিলাম তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই অহিংস আন্দোলনের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি।

২) ব্লগার রাজীব দেশপ্রেমিক এবং নাস্তিক ছিলেন (স্পষ্ট করে বললে ইসলাম বিদ্বেষী)। তার দেশপ্রেমের জন্য তিনি যতটুকু প্রশংসার যোগ্য ঠিক ততটুকুই ইসলাম বিদ্বেষী লেখনীর জন্য ধিক্কারের যোগ্য। কিন্তু তার এই 'ইসলাম বিদ্বেষী' পরিচয়কে গণজাগরন মঞ্চ থেকে বার বার অস্বীকার করা হলো। তখন যদি এই সত্য স্বীকার করে নেওয়া হতো তাহলে আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেতো, কমতোনা। শত্রুপক্ষ ইস্যুটি ব্যবহার করে খুব বেশী সুবিধা করতে পারতো না। এই অস্বীকার করার ফলাফল এই যে পরবর্তীতে নিজেদেরকে আস্তিক প্রমান করার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নামা। এই অস্বীকার করা কি গণজাগরন মঞ্চের মিথ্যাচারের পরিচয় বহন করেনা? যে একটা মিথ্যা কথা বলে সে যে আরো দশটা মিথ্যা বলবেনা তার নিশ্চয়তা কি? তাহলে দেখা যাচ্ছে গণজাগরন মঞ্চ সত্য থেকেও বিচ্যুত হয়েছে।

সত্য ও আদর্শ বিচ্যুত যে কোনো আন্দোলন দেশের জন্য কল্যাণকর কিছু বয়ে আনেনা। গণজাগরন মঞ্চের এই আদর্শ ও সত্য বিবর্জিত আন্দোলনই প্রকারান্তরে জামায়াত-শিবিরকে সহিংসতা ছড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। বিএনপিকে সুযোগ করে দিয়েছে জামায়াতকে সমর্থন করার। সত্যের পথ থেকে শিবির ও গণজাগরন মঞ্চ উভয়ই বিচ্যুত। আর এই বিচ্যুতির ফলাফল আজকের এই সহিংসতা, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা। এই বিচ্যুতির ফলাফল সাধারন মানুষের ভোগান্তি, অকাল মৃত্যু।










সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×