somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃখ-জরা-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকর্তা কেন দিয়েছেন?

০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোহায়লা রিদওয়ানের একটি পোষ্টের উপর আমার চিন্তাসহ মতামতটি লিখার পর ভাবলাম এটি একটি পোষ্ট হিসেবে আসলে ভাল হত। তাই কিছুটা পরিবর্তন করে এখানে তুলে ধরছি।

আমাদের বড় বোন ছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী, আজীবন তাকে দু বছরের শিশুর বুদ্ধিতে দেখেছি, গত ২০০৪ সালে ৬৬ বছর বয়সে আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। শুনেছি ছোটবেলায় তার টাইফয়েড হয়েছিল। এখনকার বৈজ্ঞানিক তত্বে মনে হয় উচ্চ তাপমাত্রায় তার মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা হত, আল্লাহ তাকে এমন করে কেন রাখলেন, তিনি কি দোষ করেছিলেন?

এ সব বিষয়ে আমার মৌলিক কিছু চিন্তা এখানে তুলে ধরছি, আগে কখনও তা প্রকাশ করি নি।

আমরা আশে পাশে অন্য মানুষের কষ্ট, বিশেষ করে প্রিয়জনের কষ্ট যখন দেখি, তখন স্বাভাবিকভাবে একটি সমব্যথা বা সহমর্মিতার ভাব আমাদের মধ্যে তৈরী হয়, যাকে আমি একটি 'সহমর্মিতার রস' হিসেবে আপাতত: আখ্যায়িত করছি (সোহায়লার ব্লগে যারা মতামত দিয়েছেন, তাদের সবার মধ্যেও সেই 'সহমর্মিতার রস' এর চিহ্ন দেখতে পেয়েছি)। এ মানসিক রস আমদের মধ্যে যখন তৈরী হয়, সেটি কেবল যাকে দেখে তৈরী হয়েছে তার জন্য সীমাবদ্ধ থাকে না, এর ফলাফল আশে পাশের সমাজের সবার উপরেও কিছু না কিছু পড়ে। তার ফলে সুন্দর এক সহমর্মিতার সমাজ তৈরী হয়।

স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব বারডেমের অধ্যাপক ইব্রাহিম তার রোগীদেরকে বলতেন, "আপনি আমাকে সেবা করার যে সুযোগ দিয়েছেন এজন্য ধন্যবাদ।" আমার মনে হয় প্রতিবন্ধীরা আমাদের ভিতর যে সহমর্মিতার রস জাগিয়ে তুলছেন, যার ফলে একটি সুন্দর সমাজ তৈরী হবার সুযোগ হয়েছে, তার জন্য তারা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। তবে প্রশ্ন থেকে যায় তারা যে কষ্ট পাচ্ছেন তার লাঘব হবে কি ভাবে? আমার বড় বোনের কথায় ফিরে আসি। চিরকাল তিনি শিশুর মতই রয়ে গেছেন, তিনি তার কষ্ট কতটুকু নিজে অনুভব করেছেন জানি না।

আমার মনে হয় যিনি প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছেন, বা কষ্টের ভেতরে আছেন, আল্লাহ তার ভিতরে এক শক্তি তৈরী করে দেন সে প্রতিবন্ধকতা বা কষ্টকে আপন করে নেয়ার, কষ্টকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়ে যে ক্ষমতাগুলো অটুট আছে তা নিয়ে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। সোহায়লার ব্লগে অনেকের অভিজ্ঞতাতেও কিন্তু সে কথা ফুটে উঠেছে। হেলেন কেলারের অবিস্মরণীয় জীবনের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এঁরা আশে পাশের মানুষের মধ্যে 'সহমর্মিতার রস' তৈরী করতে বিশাল ভুমিকা রাখছেন, যা একটি সুন্দর সমাজের জন্য বিরাট পাওয়া। যদি তাঁরা না থাকতেন, তাহলে আমরা হয়ত ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে যেতাম। যে শিশু বিশাল বিত্তের পরিবেশে বড় হয়, চাইলেই সবকিছু যার হাতে সহজেই চলে আসে, দেখা যায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সে বড় হয়ে স্বার্থপর হয়ে ওঠে, কারও সঙ্গে কোন জিনিস স্বাভাবিকভাবে 'শেয়ার' করতে পারে না। অন্যদের দু:খ কষ্টের প্রতি সে তেমন সহানুভুতিশীল হয় না।

এক অর্থে আমাদের সবার মধ্যেই কিন্তু কিছু না কিছু দৈন্য আছে, অক্ষমতা আছে, তাকে মেনে নিয়েই আমার অন্য ক্ষমতাগুলোকে অবলম্বন করেই আমরা এগিয়ে যাই। তাই সে অর্থে আমরা সবাই কিন্তু প্রতিবন্ধী, আর এর ফলেই তৈরী হয় সামাজিক বৈচিত্র, যার দরকার সমাজে সবসময়ে। এর জন্যই আমাদের কেউ গণিতে পারদর্শী, কেউ বা বিজ্ঞানে, কেউ বা সাহিত্যে, কেউ খেলাধুলায় বা অন্য কিছুতে। বৈচিত্র ভরা মানুষের কারণেই পৃথিবীতে মানুষের গর্ব করার মতা যা কিছু অর্জন। তাই যাকে আমরা প্রতিবন্ধী হিসেবে দেখছি, তাকে সে প্রতিবন্ধকতার কথা মনে করিয়ে না দিয়ে, বা তাকে করুণা না দেখিয়ে তার যে ক্ষমতা অটুট আছে তাকে ভর করে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা দিতে হবে, তার নিজের শক্তির উপর ভর করে চলার সাহস দিতে হবে। কিন্তু তার প্রতি সহানুভুতি দেখানোর জন্য আলোচনা করব, কার্যক্রম নেব - তার অনুপস্থিতিতে, তার পেছনে।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×