somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫ মার্চের ভয়াবহতা দুঃস্বপ্ন দেখায় এক পাকিস্তানীকে

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের ৩মে আমি যখন পাকিস্তান আর্মির অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল পরিদর্শন করি, তা ছিলো দুঃস্বপ্নের মতো। জানতে পারলাম আমাদের সুবিধার্থে পুরো জায়গাটি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য তার পরেও সব মুছে যায়নি, যতটুকুই বা চিহ্ন ছিলো তা ই গভীর ছাপ ফেলেছিলো আমার সচেতন, অবচেতন এমনকি অচেতন মনে।

ঐ বছর ২৫ ও ২৬ মার্চের ভয়ানক রাতে ঠিক কি হয়েছিলো তা দেখতে আমরা তিনজন গিয়েছিলাম সেখানে। পরিদর্শনের শুরুতেই দেখলাম হলের বাইরের দেয়ালে বোমার আঘতে তৈরী গর্তগুলি। হলের ভেতর ঢুকে যা দেখলাম তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রতিটি জিনিস আমি আজও ভুলিনি।

আমার মূল ধারণা ছিলো পাকিস্তান আর্মি নির্বিচারে ঐ রাতে অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করেছে। কিন্তু সব দেখার পরে বুঝলাম যে এলোপাতাড়ি কিছুই করা হয়নি, সব কিছুর মধ্যে ছিলো পরিকল্পনার ছাপ যা ঘটনার এতদিন পরেও মুছে যায়নি।

পুরো জায়গাটি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে এবং আমি সেখানে গিয়েছিলাম ঘটনার ৪৩ দিন পরে। সিড়ির পাশের দেয়ালে লেগে থাকা রক্তের ছাপ প্রমান দিচ্ছিলো যে মৃতদেহগুলো সিড়ি দিয়ে টেনে নামানো হয়েছে।

শরীরের নানা অংশের যেমন চুল, আঙ্গুল, নাক বা কানের টুকরা হওয়া বিচ্ছিন্ন অংশগুলো তখনও লেগেছিলো দেয়ালে।

আগে বলেছি যে আমার ধারণা ছিলো হত্যাকান্ড হয়েছে এলোপাতাড়ি, কিন্তু সব কিছু দেখে আমার ভুল ভেঙ্গে গেলো। প্রতিটি কক্ষেই আলাদা করে হত্যা করা হয়েছে ছাত্রদের। ঘরগুলো ধোয়া মোছার পরেও সেখানে প্রচুর ছেড়া বই খাতা কাগজ পড়েছিলো। বাংলা ও ইংরেজীতে লেখা কিছু চিঠি দেখতে পেলাম যার কিছু হয়তো বাবা মায়ের আর কিছু প্রিয়তমার।

সবকিছুতেই নির্দিষ্ট একই ধাঁচ ছিলো; প্রতিটি ঘরের সব জানালায় ঠিক একই অংশ ভাঙ্গা যা কিনা রাইফেলের বাটের আঘাতের চিহ্ন বহন করে। ঘরগুলোর বিছানার পাশের দেয়ালে ঠিক একই রেখায় গুলির দাগ(যা কিনা বিছানায় বসলে মাথা যে উচ্চতায় যায় সেই পর্যন্ত) দেখে বোঝা যায় ছাত্রদের বিছানায় দেয়াল মুখী হয়ে বসতে বলা হয়েছিলো।
প্রতিটি ঘরের একই জায়গায় বড় কালো ছোপ দেখেছি যাতে অনুমান করা যায় চারপাশে থেকে রক্ত গড়িয়ে সেখানে জড় হয়ে জমাট বেঁধে গেছে।

এটা বুঝেছি যে তাদের একই সাথে একই সময়ে হত্যা করা হয়েছে তা না হলে তাদের কেউ কেউ হয়তো পালানোর চেষ্টা করতো বা অন্য কিছু যাতে ঘরের অন্য কোথাও গুলির চিহ্ন দেখা যেতো, কিন্তু প্রতিটি ঘরেই দেখেছি সেই একই রকম নিদর্শন; জানালার নির্দিষ্ট অংশ ভাঙ্গা, দেয়ালে গুলির দাগের তৈরী রেখা, মেঝেতে রক্তের দাগ- এসব ই ঐ রাতের এক ভয়ঙ্কর ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলো।

এসব বলে কি আমার ভার কিছু কমলো? এ দুঃস্বপ্ন প্রায় রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গায়। ১৯৭১ সালের বেদনাতুর স্মৃতিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম যা আজও আমি বয়ে বেড়াচ্ছি।

প্রয়াত পাকিস্তানী সাংবাদিক এম বি নাক্বভীর এই লেখা ইংরেজী দৈনিক ডেইলী স্টার ছেপেছিলো কিছুদিন আগে। এ লেখা পড়ে বুকটা কেবলই মুচড়ে উঠছিলো, তাই অনুবাদ করে ব্যথাটা ছড়িয়ে দিলাম সবার মাঝে। বিজয়ের এই মাস যতবার আসবে ততবার যেন আমরা স্মরন করি এ দেশের ভাষা থেকে শুরু করে ভাত কাপড়ের অধিকার ও পবিত্র ভূ-খন্ড রক্ষার্থে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা কেমন অকাতরে প্রান দিয়েছিলেন। তাঁদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে দলমত নির্বিশেষে সবাই চেষ্টা করি নিজেদের জায়গা থেকে এ দেশকে কিছু দেবার।

লেখাটির মূল লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৪১
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×