somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরতমেঘের চিঠি

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টানা বৃষ্টির জবরদখলে এবার শরত এল ক্লাসে লেট হওয়া ছাত্রের ভীরুতায়। তবে এসেই নীল খামে সাদা মেঘের পোস্টকার্ড পাঠিয়ে আসবার জানান দিতে দেরী হয়নি। প্রতি বছর আশ্বিনের শুরুর দিনগুলো এলেই আমার মনটা ভারী খুশি হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি আমি বোধ হয় সঙ্গোপনে অপেক্ষাও করি এই সময়টার জন্যে। করবার কারণও তো থাকে।

এই দেখইনা, এই সময়টায় কত মজা হয়। আকাশটাকেই দেখ, কী গভীর নীল হয়ে থাকে। সেই ঝর্নার নিচের রঙিন নুড়িগুলোর মত রোদ ঝলমলে নিটোল এক একটা দিন। উঠোনের সিঁড়িটার শেষ ধাপে বসে চারপাশের ঝেঁপে থাকা গাছপালা, তার ওপরের আশ্চর্য নীল আকাশ আর ঝলমলে রোদের দিকে তাকিয়ে মনে হয় চারপাশে অদ্ভুত এক প্রশান্তি আলো আলো হয়ে ছড়িয়ে আছে। সূর্যের আলোটা পাতাগুলোয় ঠিকরে পড়ে যেন সবজেটে হয়ে ছড়িয়ে যায় এদিক ওদিক । সেই আলো গায়ে মেখে বুলবুলিগুলো ঝাঁকবেধে সজনে গাছটার নিচু ডালটায় বসে সেই সকাল থেকেই শুরু করে বকরবকর...

স্মৃতির ভেলায় ভেসে আসে হিমেভেজা ঘাসেদের ওপর বিছিয়ে থাকা শিউলির চাদর...সেই শিশির আঙ্গুলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ফুল কুড়োতাম আমরা। সেই কোন ভোরবেলায় উঠে কার মালাটা কত বড় হল তাই নিয়ে কি ভীষণ এক হুড়োহুড়ি। একটু বাদেই অমল কাকাদের বাড়ি থেকে শাঁখের পোঁ সহ ধুপের গন্ধ আর ঢাকের ডুম ডুম ভেসে আসত। ওমনি বাতাসটায় কেমন পূজো পূজো ঘ্রাণ হয়ে যেত। ওদের পূজো হলে আমাদের কোন লাভ লোকসান নেই বটে কিন্তু ওদের খুশিটা উচ্ছ্বাসটা আমাদেরও ছুঁয়ে যেতই। সুস্মিতা অনামিকারা পূজোর জামা কাপড় কিনলে মা আমাদেরও একটা করে আটপৌরে জামা করে দিতেন। কি ভালো যে লাগত। বাণী মাসি ধরে নিয়ে গিয়ে কাঁসার রেকাবিতে করে কতরকম মিষ্টি খাওয়াতেন। খাওয়া শেষে দুটো নাড়ু ফ্রকের পকেটে ভরে থুতনি নেড়ে দিয়ে বলতেন, বিকেলে আবার আসিস কিন্তু ! সাথে বোনাস হিসেবে তিন দিনের মাইকে করে হিট সব পূজোর গান শুনতে পাওয়া যেত। অচেনা কি এক গায়ক দরদ দিয়ে বলত, "মাধবী ফুটেছে ওই !" সাথে সাথে গায়িকার সাথে গলা মিলিয়ে আমরাও বলে উঠতাম "হ্যাঁঅ্যা" আর গড়াগড়ি দিয়ে কি হাসি। প্রতিমা দর্শন, গুড়ের জিলাপি, চালতার আচার, হজমি বড়ি সহ পূজোর মেলার সাড়ে সতের মজা তো এন্তার চলত। আর একটা দারুন মজা কি বলতো ? সে হল পূজো সংখ্যা। ওফ, গরমাগরম গল্পগুলো এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে কি দারুণই না লাগত। বছরের আর সময়টায় যে এমন হয় না ।

ছেলেবেলার এই দিনগুলো সেইভাবে ফিরে আসেনা কখনও। আসাটা বোধ করি উচিতও নয়। সেই দিন গুলোর মত স্বচ্ছতা কই আর আমাদের মাঝে। সময়ের পলি জমে ঘোলা হয়েছি কত। তার থেকে এই ভাল। এই দূরে দূরে থেকে মনে করা। অপূর্ব মায়ার ঘ্রান মেশানো ছোট বেলার সেই দিনগুলো মেঘের ভাঁজে পুরে বুকের গহীনে লুকিয়ে রাখি। তুলো তুলো মেঘেদের দেখেই তাই দুম করে মনে হয়ে যায় পুরনো দিনের কথা।

আজ ভীষণ মন ভালো দিন।

অনেক অনেকগুলো দিন পরে এই শরতদিনে বাঁচতে ভালো লাগলো আজ। দুপুরে জানলাটার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে বড় ভালো লাগলো আবার। তাকিয়ে দেখলাম জানলার জাফরির ওপারে ইলেকট্রিকের তার...তার ওপারে পুরনো কুৎসিত ঘরবাড়ি...কিন্তু তার ওপারে ? তার ওপারে এক চিলতে ঝলমলে নীল আকাশ। ওই অদ্ভুত গভীর নীলটার দিকে তাকিয়ে এক লহমায় মন ভালো হয়ে গেল । দেখলাম... দেখলাম...দেখলাম দু চোখ ভরে ওই আকাশ। ওই চিলতে আকাশের নীল বেয়ে ভেসে যাওয়া সাদা মেঘের টুকরোটাও কি থেমে আমাকেই দেখল কতক্ষণ ? দেখে কি ভাবতে ভাবতে আনমনে ভেসে চলে গেল যেন। ওই রোদেলা দুপুরটায় ওই টুকরো নীল-সাদা মাখতে মাখতেই আবার বেঁচে উঠতে বড় ভালো লাগলো। আবার ভাবতে ভালো লাগলো আমার জীবনে তুমি আছ। আর তাইতেই বোধ হয় আমার মেঘলা আকাশটা রোদের আলোয় হেসে উঠল ঝলমলিয়ে ।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×