somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি কি দেখেছো কভূ জীবনের পরাজয় ? দু:খের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়...

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

|| ১ ||

আজকাল চারপাশে দৃষ্টি নন্দন কিছু দেখিনা; যা দেখি তাতেই ভ্রুকুটি হয়। কপালে ভাঁজ পড়লে তা মেয়েলী সৌন্দর্য্যের জন্য হানিকর হবে, তবুও বিরক্তিটা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন।

হাঁচড়ে-পাঁচড়ে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নাকে-মুখে দুটো গুঁজেই এক ছুটে বাস স্টপেজ। টিকেট কাউন্টার থেকে ফেরত দেয়া খুচরো কয়েন কিনবা টাকা ব্যাগে ভরতে যাওয়ার সময় বাড়িয়ে দেয়া একটা জীর্ণ হাত দেখে ক্ষণিক মায়া জন্মে; দু'টাকা দিয়ে দায়মুক্ত হই দ্রুত। পরেরদিন আবার সেই হাত; আমার মায়ার পরিমাণ একদিনেই কমে গেছে; মুখ ফিরিয়ে বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি।

|| ২ ||

আদর কথাটা খুব তুলতুলে। অবশ্য সম্পর্কের ধরণ অনুযায়ী তাতে উম্মাদনা, শিহরণের ছোঁয়াও থাকে; তবে এই লেখার স্রোত সেদিকে ধাবিত হবেনা। মায়ের কোলে শিশু - স্বর্গীয় দৃশ্য; অসম্ভব কোমলতা আর মমতায় ভরা। ছোট্ট বাচ্চাদের মোলায়েম শরীর, আর ফোলা ফোলা গাল- দেখলেই পন্ডস এর এ্যাডের মত আলতো করে টিপে দিতে ইচ্ছে করবে; মায়েরা তাদের আদরের সোনামনিদের টেলিভীষনে দেখানো এ্যাডের মত করে বেবী লোশন মাখিয়ে দিবে; এরকম মোলায়েম দৃশ্যই কাম্য।

প্রতিদিন সকালে মিরপুর-১০ ভলভো বাস স্ট্যান্ডের সাথের ফুটপাতে এক রুগ্ন মাকে তার ছোট্ট, অপুষ্টিতে ভোগা কোলের শিশুটিকে আদর করতে দেখতাম- নাকে নাক ঘষে দিচ্ছে। ওরা ফুটপাতেই থাকত কিনা কে জানে! মাঝে মাঝে দেখতাম সেই মা তার বাচ্চাকে দু'পায়ের গোড়ালির মাঝে বসিয়ে সাথের ড্রেনে মল ত্যাগ করাচ্ছে। সকাল বেলাতেই ভাবনার তুলতুলে অংশের সাথে বাস্তবতার বিশাল ফাঁড়াক বিরক্তিই জাগায়- যত্তসব! ফুটপাত দখল, ড্রেনের দুর্গন্ধ!

|| ৩ ||

তুমুল আড্ডা চলে বন্ধুদের সাথে পিজ্জা হাটে। পিজ্জা আসার আগে মুখরোচক সালাদ; ওদিকে পিজ্জা আসতে আসতে আলোচনা নানা ওলি-গলি ছাড়িয়ে যায়; এরপর দু'টো দশ ইঞ্চি ব্যাসের পিজ্জা দেশ ও জাতির সকল সমস্যার দফারফা করে দেয়। সাথের সফট ড্রিংকস চটুল কথা-বার্তার মত কাজ করে। ডেজার্ট পর্বে বিশাল ব্ল্যাক ফরেস্ট কেকের একেকটা টুকরা গেলার সাথে সাথে আমরা দেশকে সমৃদ্ধির চুড়ান্তে নিয়ে যাই। নিজেকে জাহির করার জন্য কিনবা প্রাধান্য বিস্তার করার জন্য কিনবা নিদেন পক্ষে ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য হলেও দেখা গেল বিল পরিশোধে সবার আগ্রহ। হাজার টাকার বিল দিয়ে পিজ্জা হাটের ঘন্টাটা জোরসে ঢং ঢং করে বাজিয়ে আমরা আজকের আধুনিক তরুণ-তরুনীরা গটগটিয়ে বের হয়ে আসি।

আমাদের উচ্চবাচ্য তখনও তুঙ্গে। পাশ দিয়ে এক কিশোর ছেলে হাত বাড়িয়ে দেয়। কারো মুড অফ হয়ে যায়, কেউ পুরো ব্যাপারটা এমনভাবে এড়িয়ে যায় যেন কিছুই হচ্ছেনা; কেউ একটু ইত:স্তত করে ২ বা ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে অযাচিত ঝামেলা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে।

|| ৪ ||

ইয়োলো ক্যাব সিগন্যালে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ। শখ করেই এসি বন্ধ রেখে জানালা আধা খোলা রেখেছি। গাড়ি ছুটতে থাকলে, এলোমেলো বাতাসে একটা আনমনা ভাব আসে; "এই পথ যদি না শেষ হয়...", গানটা আওড়িয়ে যাই। অন্ধ এক লোক, একটি ছোট্ট মেয়ের কাঁধে হাত রেখে জানালার সামনে এসে দাঁড়ায়। বাড়ানো হাত গানে বাঁধা দেয়; কোন জবাব দেইনা। ছোট্ট মেয়ে বারকয়েক বলেও আমার অবজ্ঞা দেখে পাশের গাড়ির দিকে চলে যায়।

এরপর ১৪-১৫ বছরের এক বালক আসে পপকর্ণের প্যাকেট নিয়ে; না করে দেই। একজন যেতেই আরেকজন আসে। এই ছেলে বেশ চালাক; সে প্যাকেটটা আমার কোলের উপর ফেলে দেয়, ফেরত দিতে গেলে সরে যায়, অতএব ১০ টাকা দিতে হয়। সবে পপকর্ণের প্যাকেট ছিঁড়েছি , এক মেয়ে হাতে দুটো লাল গোলাপ নিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেয়। বড় ঝামেলায় পরা গেল দেখি ! জালানার কাঁচ তুলে দেই, "ড্রাইভার সাহেব, এসিই ছাড়েন আর রেডিও ঠিক থাকলে ওটাও ছাড়েন" । আমি মোবাইলটা বার করি, প্রিয় গানের রিকোয়েস্ট করে এস.এম.এস পাঠাবো রেডিওতে; on-air -এ নিজের নাম শোনার একটা charm আছে। জানালার কাঁচে আরো দুটো মুখ জড় হয়েছে, কাঁচে টোকা দিচ্ছে। আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মোবাইলের বোতমগুলো চেপে যাচ্ছি। ঠিক এসময়ই ক্যাব আবার চলা শুরু করল; মুখগুলো একটু সরে যায়, গাড়ি হুশ করে ছুটতে থাকে - বাঁচা গেল!

|| ৫ ||

সিডর কেন জানি মাথা থেকে যায়নি এখনও। সুযোগ পেলে জ্ঞানীর মত ভাবি। এক কলিগের কাছ থেকে শোনা গেল গ্রামের দিকে এখনও বিশাল বিশাল গাছের দুমড়ানো-মোচড়ানো, অসহায় রূপ দেখলে সিডরের তান্ডব বোঝা যায়। ঝড়ে ওলট-পালট এলাকাগুলো কি এখন স্বাভাবিক ? ক্ষতিগ্রস্থরা ত্রাণ পাচ্ছে কিনা কে জানে! ত্রাণ দিয়েও বা কয়দিন; কাজ দরকার জীবিকার জন্য। সেরা সপ্তম আশ্চর্যে সুন্দরবনকে ভোট দেয়ার তোড়জোড় চলছে। কিন্তু সুন্দরবনের সবুজ-সতেজতা আবার কবে ফিরে আসবে? আরেকটা সিডর আঘাত হানলে কে এমন করে আমাদের আগলে রাখতে নিজেকে বিলীণ করে দেবে!

ভাবনায় ছেদ পরে। মুঠোফোনটা আর্তনাদ করছে; ধরতেই ওপাশে বান্ধবীর উত্তেজিত গলা;

-এ্যাই শোন, সিডর দু:স্থদের সাহায্যার্থে কনসার্ট হবে ; চল যাই ।

- নাহ্! সাহায্য তো দিলাম কতই; এত টাকা টিকেট কেটে যাবো না।

- আরে! ফুয়াদ, বালাম - এরা সব আসবে ।

- বলিস কি ! (উত্তেজিত আমি); ফুয়াদ, বালাম এর কনসার্ট ! I am dying to see them ! যত টাকার টিকেটই হোক না কেন !

বান্ধবী হেসে ফোনটা রেখে দেয়।

সিডর ভাবনা এক পলকেই উড়ে যায়। winter night -এ এমন কনসাট কিছুতেই মিস করা যাবে না। আম্মা শুনেই স্বভাবসুলভ বকাবকি করল; আমি কানেই তুললাম না। অনেক ভিড় হবে নিশ্চয়ই; আগেই টিকেট কিনতে হবে । ঝটপট রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরি ।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৪৭
৩৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×