somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহ্ নারী ! ওহ্ নারী ! উফ্ নারী ! ... ... ... হায় নারী !!!

২৬ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নারী বন্দনায় কোন কালেই, কোন কথা সাহিত্যিক ছাড় দেননি একরত্তি; সে দেশে হোক বা বিদেশে। পায়ের নখ থেকে শুরু করে চুলের ডগা অব্দি চুলচেরা বিশ্লেষণে কবিকূল ব্যতিব্যস্ত থেকেছেন যুগের পর যুগ। যারা লিখতে জানেন না তাদের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে নারী বন্দনার সেসব হাজারো পংক্তিমালা। হাজার বছর ধরে হেঁটে বেড়িয়েছে কেবল বনলতা সেনের রূপসূধা পানের তৃষ্ণায় কাতর কোন পথিক! নারী অপ্সরী; নারী প্রেমিকা; নারী আরাধ্য; নারী দেবী!

খু্‌বই সাম্প্রতিক খবর- যশোহরের নওয়াপাড়া জুট মিলে কোন নারী শ্রমিককে স্থায়ী শ্রমিকরূপে নিয়োগ দেয়া হচ্ছেনা। অস্থায়ী নারী শ্রমিকেরা সর্দারদের ২০/২৫ টাকা ঘুষ দিয়ে কাজ পায় বটে কিন্তু আট ঘন্টার কাজের পারিশ্রমিক মোটে ৬২ টাকা! বেতনভাতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে চাকরী খুঁইয়েছে বেঙ্গল টেক্সটাইলের নারী শ্রমিক দিপু।আট ঘন্টার বদলে ষোল ঘন্টা কাজ করে রিজিয়া পায় ৮০ টাকা; সেখানে একজন পুরুষ কর্মী পায় ১২০ টাকা! এলাকার বেশীর ভাগ কারখানাগুলোতে মাতৃত্বকালীন ছুটি পদ্ধতি মানা হয়না! [খবর সূত্র: পৃষ্ঠা-১৬, দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫শে অগাস্ট ২০০৯]

নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক, বাহ্যিক গড়নের পার্থক্য নারীকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশী বেশী নারী করে তোলে। নারী কোমল; নারী পেলব! মেয়ে-ছেলে বা মেয়ে-ছাওয়াল অর্থ্যাৎ নারী হয়ে ওঠার সাথে সাথে বাটোয়ারা হয় কাজে-কর্মে, দ্বায়িত্ববোধে, অধিকারে, জবাবদিহিতায়, দাবিতে, পারিশ্রমিকে ।

অহরহ নারীর উপর খড়গ নেমে আসে ধর্মীয় রীতির, সামাজিক নীতির আর পারিবারিক রেওয়াজের এবং এই পুরো অংশে দোর্দণ্ডপ্রতাপে আধিপত্য বিস্তারকারীরা আর কেউ নয় বরং নারী বন্দনায় নিবেদিত প্রাণ পুরুষকূল। পুরুষেরা সযত্নে নারীর চারপাশে এঁকে দেয় লক্ষণ রেখা! গণ্ডি পার হলেই ঢিঁ ঢিঁ পড়ে যায়! আয়োজন হয় অগ্নি-পরীক্ষার। যুগ যুগ ধরে চলে সতীদাহ! এখনও ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসে ঊনচল্লিশটি দোর্দার আঘাতে জর্জরিত কোন রমনীর আর্তচিৎকার! হুংকারে ফতোয়াবাজ কোন পুরুষ আর নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় নপুংসক সমাজ। নারী কুলটা! নারী নষ্ট! নারী বাজারে কেনা-বেচার অধিকার রাখবে কিনা সে ফয়সালা করার আগেই রঙ্গশালায় বিকি-কিনি হয় খোদ নারীই। দালাল কিংবা ক্রেতারূপে পুরুষের তৎপরতা পাশ কাটিয়ে চোখে বিঁধে কেবল স্বস্তা প্রসাধনীর প্রলেপে আবৃত নারী। নারী পতিতা; নারীই ছিনাল!

যুগে যুগে নিয়মনীতির ফাঁক-ফোকড় গলে কিছু নারী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে নারীকূলকে রক্ষা করেছেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, মাদার তেরেসা কিংবা ভেলরী - নারীর মমতার আশ্রয়ে পুরো বিশ্ব । নারী সেবিকা ! রণক্ষেত্রে নারীর রূদ্রমূর্তি বধ করেছিল শত্রুপক্ষকে। চাঁদ সুলতানাকে নিয়ে কবি নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ”শিখালে কাঁকন, চুড়ি পরিয়াও নারী, ধরিতে পারে যে উদ্ধত তরবারী”। নারী রণরঙ্গীনি ! বেগম রোকেয়া ভেঙ্গে দিয়েছিলেন নারীর উপর চাপিয়ে দেয়া কুসংস্কার। নারী অন্ধকারে আলোর দিশারী! নারী জ্ঞান-পিপাসু, বিদুষী!

নারী অবাধ্য হয় কখনো। নারী ছন্নছাড়া হয় কখনো। নারী তোয়াক্কা করেনা নারীসূলভ জীবন-যাপনের। নারী আঙ্গুল তুলে বসে পুরুষের দিকে। নারী হয়ে যে কথা বলা একেবারেই জায়েজ নয়, নারী তাই বলে বসে সদম্ভে! ভ্রষ্টা নারীর নষ্ট গদ্যে নারীর আরেক পরিচয় দাঁড়ায় তসলিমা নাসরিন!

সংকীর্ণমনা পুরুষ বলে ওঠে ”সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি, বলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে” । অবশ্য নারীও ধোঁকা দেয় নয়তো নারী হিসেবি হয়ে ওঠে চাওয়া-পাওয়ায়। নারী বরুণা হয়ে খুঁজে নেয় জীবনে অর্থ আর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। পুরুষের নাম নিজের নামের আশেপাশে জুড়ে নারী পূর্ণতা খুঁজে পায় সমাজের বেঁধে দেয়া নিয়মে। পৃথিবীর আধেক সূধীজন নারীকে দেবে আশীর্বাদ- নারী বাস্তববাদী, নারী সংসারী! আর আধেক দেবে অভিসম্পাত- নারী ছলনাময়ী!

পুরুষের লোলুপতার শিকার নারী হরদম। নারীকে রক্ষায় আইন! সম্ভ্রমহানীর প্রতিবাদে মিটিং-মিছিল। প্রতিবাদের স্বর জোড়ালো হয় পুরুষের কারণেই! নারী যে অবলা!

অথবা নারীই দোষী! কেউ ”দেখালে” অন্যেরা ”দেখবে” না কেন! তাই সমস্যার একমাত্র সমাধান- নারীকে ঢেকে ফেলো আপাদমস্তক! অথচ পুরুষের দৃষ্টির কলুষতা, নিয়তের স্খলণ নিয়ে কেউ ভ্রুকুটি করেনা! কুকর্ম করছে পুরুষ, সামলানো হচ্ছে নারীকে!

নারীকে বাগে রাখতেও আইন! পূণ্যভূমি আরবে বিচারক, স্বামীকে অধিকার দিলেন অমিতব্যয়ী স্ত্রী’র গায়ে হাত তোলার! আফগান সরকার আরো এক কাঠি সরেস! নব্য খসড়া আইন বলে দেয় ২০০৯ সালেও নারীর জন্যে আসলে কিছুই বদলে যায়নি! আফগান নারীকে ঘরের চৌহদ্দির বাইরে যেতে হলে স্বামী নামক পুরুষটির অনুমতি নিতে হবে। এমনকি স্বামীর অনুমতি ব্যতীত চাকরী, শিক্ষা বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়া আইন বহির্ভূত ! সন্তানের অভিভাবক হিসেবে নারী নয়, কেবল চাই পুরুষের নাম! তদুপরি স্বামী তার শারীরবৃত্তিয় চাহিদা পূরণে অবজ্ঞাকারী স্ত্রী'কে শাস্তিস্বরূপ অভূক্ত রাখার পূর্ণ অধিকার বহন করে! নারীই কেবল ভোগ্য! নারীর উপভোগ্য বলে কোন স্থান-কাল-পাত্র নেই!

নারী কোথায় যাবে! মৃত্যুর পরে কি নারী তাবৎ ঝুট-ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে? পুরুষের জন্যে জান্নাতে আয়তলোচনা হুরপরীরা ব্যতিব্যস্ত থাকবে, এই বলে বলে মসজিদের ঈমাম পুরুষদের ঈমান সবল করেন! আহ! ইহকাল আর পরকাল - দু’কালেই নারী-ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে বটে পুরুষ! নারী কেবল চরণ-দাসী!

নারীকে নিয়ে রঙ্গ! নারীকে নিয়েই ব্যঙ্গ! নারীর উপর ক্ষোভ! নারীতেই আবার প্রীতি। যুগ বদলেছে। রুচি পাল্টেছে। বদলে যাচ্ছে পুরুষ। বদলে যাচ্ছে নারী। নারীকে বদলে দেয়ার মিছিলে শরীক খোদ পুরুষ! পুরুষই বাতলে দিচ্ছে এখন নারীকে বদলাতে হবে! পুরুষই মাপ-ঝোঁক করছে কতটুকু বদলাতে হবে! নারী কি বোধহীন! নারী কি স্বল্প বুদ্ধির অধিকারীনি!

বাসে ছয়টি মহিলা-সিট্ পেলেই নারী অধিকার সংরক্ষিত হয়না একথা কবে বুঝবে নারী! নারীর অধিকার নারীকেই আদায় করে নিতে হবে, নারী বদলাবে কি বদলাবে না, কতটুকু বদলাবে, তার মাপকাঠি নিজের হাতে না রাখতে পারলে কিসের আধুনিকতা তবে! নারী নির্যাতন আইন করলেই নারীর প্রতি অসম্মান বন্ধ হয়ে যাবেনা। নারীকেই বলতে হবে চিৎকার করে , ”বিচার চাই ওই কুলাঙ্গারের”...!

প্রকৃত অর্থে স্বাবলম্বী হও নারী।

জাগো, নারী জাগো বহ্নি শিখা ...!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩২
১১১টি মন্তব্য ৭৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×