somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাপমাত্রা অসহনীয় হলে রোজা অবস্থায় নবীজী যা করতেন

২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








অসহনীয় তাপমাত্রা দেখা দিলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় পানি ঢালতেন। আবু বকর বিন আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত, রাসুলের কয়েকজন সাহাবির উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন : আরজে (স্থান বিশেষ) অত্যধিক পিপাসা বা তাপমাত্রার ফলে রাসুলকে দেখেছি যে, তিনি মাথায় পানি ঢালছেন।

অসহনীয় তাপমাত্রা দেখা দিলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় পানি ঢালতেন। আবু বকর বিন আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত, রাসুলের কয়েকজন সাহাবির উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন : আরজে (স্থান বিশেষ) অত্যধিক পিপাসা বা তাপমাত্রার ফলে রাসুলকে দেখেছি যে, তিনি মাথায় পানি ঢালছেন। [আবু দাউদ : ২৩৬৫। হাদিসটি সহিহ।]

দৈহিক প্রশান্তি ও স্বস্তি এবং উদ্যম লাভের জন্য এমন করা দূষণীয় নয়। এর ফলে রোজাদারের ইবাদত বৃদ্ধি পাবে। কারণ, বান্দা স্বতঃস্ফূর্ত ও সানন্দচিত্তে বিনয়-বিগলিত হয়ে রবের দরবারে উপস্থিত হবে, পালন করবে তার আদেশ-নিষেধ—রোজার প্রধান উদ্দেশ্য এটিই। দৈহিক কষ্টভোগ, নির্যাতন কিংবা কঠোরতা আরোপ রোজা রাখার উদ্দেশ্য হতে পারে না কখনো।

পূর্ণ গোসল, কাপড় ভেজানো, পানিতে ডুব দেয়া—সবই মাথায় পানি ঢালার হুকুম-ভুক্ত, যেমন উল্লেখ করেছেন ইমাম বোখারি তার সহি গ্রন্থে। কয়েকজন সাহাবি ও তাবেইনের উদ্ধৃতি সহ—যারা ছিলেন অনুবর্তনের ক্ষেত্রে রাসুলের আদর্শ অনুসারী—তিনি গোসল বিষয়ক পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেন যে, ইবনে উমর রা. একটি কাপড় পানিতে ভিজিয়ে শরীরে জড়িয়ে নিলেন। তিনি ছিলেন রোজাদার। শা’বী রোজা রেখেই গোসলের জন্য হাম্মামে প্রবেশ করেন।

হাসান বলেন



: কুলকুচা কিংবা শীতলতা গ্রহণ রোজাদারের জন্য দূষণীয় নয়। ইবনে মাসঊদ বলেন : তোমাদের যে রোজা রাখবে, সে যেন তৈলযুক্ত, বিন্যস্ত কেশবিন্যাস নিয়ে সকাল যাপন করে। আনাস বলেন : আমার একটি টব রয়েছে, রোজা রেখেই আমি তাতে প্রবেশ করি। [বোখারি : খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৬৮০-৬৮১]

এগুলোর উপর ভিত্তি করে বর্তমানে এ-সি রুমে সময় কাটানো একই হুকুম ভুক্ত ধরা হবে।

এ ক্ষেত্রে মৌলিক ও সাধারণ নীতিমালা হল, ব্যক্তির জন্য ইবাদত পালন যা সহজ করে দেয়, স্বতঃস্ফূর্ত-উদ্যমী ও প্রশান্ত মন নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে যা সহায়ক, তা করা রোজাদারের জন্য বৈধ। যে পরিশ্রম ও কষ্টভোগের ফলে ইবাদত হতে বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিধায়কের পক্ষ হতে তাকে কখনো উদ্দিষ্ট করা হয়নি, তাকে বরং, ত্যাগ ও এড়িয়ে যাওয়াই কাম্য।

তবে, যে কষ্টভোগের ফলে ইবাদত হতে বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাকে মেনে নেওয়া উত্তম। কারণ, তা এবাদতের বিনিময় বৃদ্ধি করে, যেমন অধিক শীতেও ওজু করা, হজের জন্য সফর, অত্যধিক শীত বা গরম সত্ত্বেও জামাতে সালাত আদায়ের জন্য গমন।

এই প্রসঙ্গে ইবনে তাইমিয়া বলেন : এ স্থলে যা জ্ঞাতব্য, তা এই যে, অযৌক্তিকভাবে আত্মাকে কষ্টদান কিংবা কঠোরতা আরোপ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভের উপায় হতে পারে না। অধিকাংশ মূর্খ যেমন ভেবে থাকে যে, আমল যত কঠিন, পুরস্কারও তত বিপুল। তাদের ধারণা, কষ্টের মাত্রা অনুসারে প্রতিফল নির্ধারিত হয়। প্রতিফল, বরং, নিরূপিত হয় আমলের উপকারিতা, কল্যাণ ও পরিণতি হিসেবে।

বান্দা যতটা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যে নিজেকে লীন করবে, তার আমল সে অনুসারে গ্রহণযোগ্য হবে। এ দু প্রকার আমলের মাঝে যা হবে সুন্দর, সুষম, এবং যে আমলকারী হবে অধিক অনুগত, তবে—সন্দেহ নেই, তার আমলই আল্লাহ পাক কবুল করবেন। সংখ্যাধিক্যের বিচারে আমলের মাঝে প্রবৃদ্ধি আসে না, বরং, তা সমৃদ্ধ হয় আমলকালীন অন্তরের অবস্থা অনুসারে। [ইবনে তাইমিয়া : মাজমুউল ফাতাওয়া : খন্ড : ২৫, পৃষ্ঠা : ২৮১-২৮২]

শরিয়তের পরিধি খুবই বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ। তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, সার্বিক বিবেচনায় তা খুবই সহজ ও সরল এবং অনায়াস সাধ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য স্থাপন করেছেন হেদায়েতের যে আলোকবর্তিকা, আত্মাকে কষ্টদান ও এ জাতীয় বিষয় তার স্পষ্ট বিরোধী।

কুলকুচা করা ও নাকে পানি দেয়া রোজা অবস্থাতেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুলকুচা করতেন, পানি দিতেন নাকে। তবে নাকে পানি দেওয়ার ব্যাপারে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতেন। লাকিত বিন সাবরা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিস বিষয়টিকে প্রমাণ করে ; তিনি বলেন :—

... فقلت: يا رسول الله أخبرني عن الوضوء!، قال: أسبغ الوضوء، وخلل بين الأصابع، وبالغ في الاستنشاق إلا أن تكون صائماً.

...আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল ! আমাকে ওজু বিষয়ে শিক্ষা দিন ! তিনি বললেন, তুমি ওজু করবে পূর্ণাঙ্গরূপে, খেলাল করবে আঙুলগুলো। যদি রোজাদার না হও, তবে নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে গভীরে পৌঁছে দেবে। [আবু দাউদ : ১৪২, হাদিসটি সহি।]

মধ্যপন্থা অবলম্বনের এ এক অনুপম দৃষ্টান্ত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিচ্ছন্নতা ও সিয়ামের নীতিমালা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে উম্মতের জন্য অতুলনীয় সমন্বয় সাধন করেছেন। কোন একদিকে অতিরঞ্জনের ন্যূনতম সুযোগ রাখেননি।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×