somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ১: অপরাজেয় বাংলা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.

২০০৫ সালের মার্চ মাসে অচমকাই এক দিন মোস্তফা শামীম ওয়াহিদ তার ধানমন্ডির আড়িয়াল গ্যালারি থেকে আমাকে হাতে ধরে নিয়ে যান এলিফেন্ট রোডে শিল্পী আবদুল্লাহ খালিদের স্টুডিওতে। সেই থেকে শুরু। আমার কাঁধে তখন আমার প্রিয় সাথী ক্যাননের এক্সএলওয়ান ডিভি ক্যামেরাটি।

ময়নার মা'র বানানো সুপ খেতে খেতে চোখ রাখছিলাম ঘরের আশ পাশ দেয়াল। জানালার ওপরে ছোট্ট কাঁচের ফ্রেমে বাঁধানো সাধাকালো ছবি অপরাজেয় বাংলা। আমাদের অতি চেনা স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক। ছবিটা অপরাজেয় বাংলা হলেও কোথায় যেনো অন্যরকম লাগছিল। সুপ খেতে খেতে নীচু গলায় শামীম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম। শামীম ভাই হাসতে হাসতে বললেন, হেলাল এই কথা তুমি আমারে জিজ্ঞেস কর ক্যান! তোমার সামনে খোদ শিল্পী বসা তুমি তারে জিগাওনা ক্যান? বলেই শামীম ভাই তার স্বভাব সুলভ আন্তরিকতায় এক কদম আগ ঝুকে শিল্পী আবদুল্লাহ খালিদকে বলে বসলেন, খালিদ ভাই এ আমার ছোট ভাই হেলাল কানাডা থেকে এসেছে আপনের ছবি তুলতে চায়। সেই থেকে শুরু...

ভীষন মুডি শিল্পী আবদুল্লাহ খালিদ, ক্যামন করে যেনো রাজী হয়ে গেলেন! সে বার বেশ ক'দিন খালিদ ভাই'র পিছু পিছু ঢাকায় ছড়িয়ে থাকা উনার অনেক কাজের ছবি তুলেছি। হন্যে হয়ে ছবি তুলতে থাকলাম, খালিদ ভাই নানান প্রসঙ্গে কথা বলেন আমি কখনো তার তাল রাখতে পারি কখনো খেই হারাই। ঠিক জানতাম না কি করবো! ছবি আঁকতে আঁতে শিল্পী প্রায় ক্যানভাসের ওপর উঠে যাবার উপক্রম কখনো। অবাক হয়ে ছবি তুলি, কখনো হাসি থামাতে না পেরে ফ্রেম নষ্ট করে ফেলি। এ প্রসঙ্গ ও প্রসঙ্গ ঘুরে বারে বারেই আমার জিজ্ঞাসা অপরাজেয় বাংলা প্রসঙ্গে এসে পৌছে যায়। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম অপরাজেয় বাংলা নিয়ে একটা ছবি বানাবো।

সেবার সে পর্য্যন্ত রেখে কানাডায় ফিরে আসি। কানাডায় ফিরে আমার কাজ হয় টরন্টোর কোথাও থাকেন অপরাজেয় বাংলার তিন মডেলের একজন হাসিনা আহমেদকে খুজে বের করা। খুজতে গিয়ে আরেক আবিষ্কার! মিশুক মুনীর মানে মিশুক ভাই ইটিভি বন্ধ হয়ে যাবার পর কানাডা পাড়ি দিয়েছেন। থাকেন মেগাসিটি টরন্টোতে, কাজ করেন সিবিসি'র এক প্রডাকশনে। শুটিং এর কাজে আমি তখন সাপ্তাহে দু'দিন করে টরন্টো থাকি, মিশুক ভাইয়ের বাসায় পার্টি হয় প্রতি উইকএন্ডেই। ঐ পার্টির একটাতে হাজির থাকতে পরলে আমার আর কিছু লাগে না। মিশুক ভাই তখন তার কানাডিয় বন্ধুবান্ধবের সাথে মিলে দাড় করাচ্ছেন, রিয়েল নিউজ ডট কম। এক দিন মিশুক ভাই'র বউ মঞ্জুলি'দি আমার হাতে তুলে দিলেন এক মুঠ নেগেটিভ। মিশুক ভাইয়ের জীবনে ক্যামেরার হতে খড়ি, অপরাজেয় বাংলা নির্মান কালের তোলা অসাধারন দূর্লভ সকল ছবি! মিশুক ভাই হাসতে হাসতে বললেন যাও এগুলা তোমারে দিলাম। আমর চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এল। আমার কাজের স্পীড এক হাজার গুন বেড়ে গেল নিমিসেই।

টরন্টো শহরের এক অভিজাত এলাকায় যেয়ে এক উইন্টারের দুপুরে নাজেল হয়ে গেলাম ৩২ বছরের প্রবাসী হাসিনা আহমেদ'র বাড়ীতে। সে এক অনুভুতি বটে! আমাদের পেয়ে হাসিনা আপা ভীষন আনন্দে শেয়ার করলেন মুক্তি যুদ্ধ আর অপরাজেয় বাংলার কথা। আমার দেখা পাথরের মূর্তি জীবন্ত কথা বলছে, ফিরে ফিরে অতীত ঘেটে তুলে আনছে অসাধারন সব হিরেজহরতের মত কথা। আমরা অবাক হয়ে সব শুনি। বলতে বলতে স্মৃতি কাতর হয়ে উঠছিলেন কখনো, আনন্দে ছল ছল করে উঠছিলেন মমতাময়ী এ নারী। বার বার খেয়াল করি রেকর্ড হচ্ছেতো? রেকর্ড বাটন চেপে ধরে বসে থাকি। আমার এক বদ স্বভাব হলো আমি ভীষন ক্যাসেট অপচয় করি। ছবি তোলার সময় হিতাহিত জ্ঞ্যান করি না। এতে সমস্যা যেটা হয়, এডিটিং এর সময় ফুটেজ ভলিউমর কারনে হিতিবিচ্ছিরি পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়! আমার কাজের সম্পাদনা আমি নিজে করি সে কারনে জেনে শুনেই নিজের বারোটা বাজাতে থাকি। উপায় কি, বাড়তে থাকে ফুটেজ!

আজীবন ক্যামেরার পেছনের মানুষ মিশুক মুনীর, আমার পীড়াপিড়িতে তাকেও বসতে হলো ক্যামেরার সামনে। তিনি বললেন তার জীবনে প্রথম ছবি তোলা প্রজেক্ট অপরাজেয় বাংলা নির্মান সময়ের গল্প। আমার সঞ্চয় আসতে আসতে বাড়তে লাগল। ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে হয়রান হই অপরাজেয় বাংলা নিয়ে কোথাও যদি কিছু পাই। এক দিন দেখলাম ফেইস বুকে অপরাজেয় বাংলা একটা গ্রুপ খোলা হয়েছে, সাথে সাথে এড করে নিলাম। ঐখানে পেলাম গুগল ম্যাপে স্যাটেলাইট ক্যামেরায় আসমান থেকে দেখা যায় অপরাজেয় বাংলার অবস্থান! উইকিতে দেখলাম লেখা আছে দুই তিন লাইন। ব্যাস ঐটুকুই এর বাদে দেখলাম বেশ কিছু নাম আসে অপরাজেয় বাংলা সার্চ দিলে: সংগঠন ওয়েবজিন ইত্যাদি ইত্যাদি।

আবদুল্লাহ খালিদের কিছু ফুটেজ, হাসিনা আহমেদ'র ইন্টারভিউ আর মিশুক ভাই'র কথা এটুকু করে বসে ছিলাম বাকীরা সব বাংলাদেশে। জীবন/ জীবিকায় কেমন করে যেনো পার হয়ে গেল তিন তিনটা বছর (২০০৫-২০০৮)। তত দিনে বন্ধু বান্ধবের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে হয়রান, কি হেলাল তোমার অপরাজেয় বাংলার কতদূর? শেষের দিকে প্রশ্নটা পরিহাসের মত লাগতে থাকে কানে। আমি তখন কাজ করছি নিইজার্সিতে, টিভি এশিয়ায়। সেখানে আছেন আমার আরো একজন কাছের মানুষ প্রিয় এনায়েত করিম বাবুল। দুই ভাইয়ে মিলে সারারাত কাজ করি আর হ্যাইনেক্যানের গুষ্টি উদ্ধার করি। ভোর রাতে বাবুল ভাইয়ের জীবনের সকল দুঃখ 'উথলাইয়া' উঠতে দেখি। ফিল্ম করতে যেয়ে পুনে ফেরত বাবুল ভাই টিভি এশীয়ার ডাবিং করেন, ট্রান্সমিশন চালান ফিল্ম আর করা হয়ে উঠল না! মাঝে মাঝে ভোর সকালে ট্রান্সমিশন রুমের বাইরে দাড়িয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকি। আর ভাবি হায় হায় আমি এখানে কি করি? আমার না দেশে গিয়ে অপরাজেয় বাংলা নিয়ে ছবি বানানোর কথা, আমি এখানে কি করি!

টাকা পয়সা যা কামাই তাই খরচ করে ফেলতাম সারা জীবন। এইবার ১৪/১৬ ঘন্টা টিভি এশিয়ার ট্রান্সমিশন চালিয়ে যা রোজগারপাতি করেছি তার সবটা ঢেলে ক্যামেরা এডিটিং প্যানেল আর আনুসাঙ্গিক সরঞ্জাম কিনে পরিবারের সবাইর কাছ থেকে অনিদৃষ্ট বিদায় নিলাম। বললাম, আমারে মাফ কইর আমি ছবি বানাইতে গেলাম...

(চলিবেক)

ছবি: সম্প্রতি লালন ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে সচেতন শিল্পী সমাজ অধুনা বাংলার সংস্কৃতি আন্দোলনের বন্ধুদের প্রতিবাদের প্রথম দিন চারুকলার গেটের সামনে থেকে তুলেছিলাম আমি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১০
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×