somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এডলফ হিটলারের নাৎসি নায়ক হয়ে ওঠার কাহিনী।

২১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নাৎসি মহানায়ক এডলফ হিটলার। যে নামটির সাথে জড়িয়ে আছে বিশ্বের সবথেকে কলঙ্কজনক ইতিহাস ,যার কারণে বেধে গিয়েছিলো দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ , যার নামের সাথে জড়িয়ে আছে লক্ষ্ লক্ষ ইহুদীবিনাশ, কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু, আসুন তার সম্পর্কে কিছু জানি। অবশ্য হিটলারের উপর লেখার ইচ্ছা আমার অনেকদিনের । লেখব লেখব করে এবারে লিখেই ফেললাম।
অস্ট্রিয়া ও ব্যাভারিয়া সীমান্তের যেখানে ইন নদী বয়ে গেছে তার কাছাকাছি ব্রায়ুনাউ নামের ছোট একটি শহরের পান্থশালায় হিটলার জন্মগ্রহন করেছিলো ১৮৮৯ সালের ২০ শে এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময়। সেসময় ইউরোপ ছিল ৪ টি সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্য ও রাজকীয় মহিমায় উজ্জ্বল , একটি ছিল হ্যাপ্সবুরগ বা ইউরোপের প্রাচীনতম রাজ বংশের অষ্ট্র- হাঙ্গেরি রাজবংশ, একটি হোহেনজলার্ন বা কাইজারের জার্মানি, একটি রোমানভ বা জারদের রুশ সাম্রাজ্য অ আরেকটি অটোমান বা তুর্কি সাম্রাজ্য। পারিবারিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় হিটলার বা তার বংশীয় কেউ আসলে জার্মানির নাগরিক ছিলেন না। এমনকি ক্ষমতার সিঁড়িতে আরোহণের দুই এক বছর আগেও তিনি জার্মানির নাগরিক ছিলেন না। পরে পেয়েছিলেন সেই নাগরিকত্ব। হিটলার নামের পারিবারিক পদবীটিও আসলে পরিবর্তিত পদবী। হিটলারের পূর্ব-পুরুষরা ছিলেন ‘হিয়েডলার’ পদবীর অধিকারী। হিটলারের দাদা ইওহান জর্জ হিয়েডলার ছিলেন ভবঘুরে প্রকৃতির লোক। ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারিয়া এনা শিক্লব্রুবার নামের এক কৃষক রমণীকে বিয়ে করেন। পাঁচ বছর আগে এই মারিয়ার গর্ভে এলোয়েস নামে একটি জারজ ছেলে জন্মায়। এই জারজ ছেলেটির আসল জন্মদাতা কে তা কখনো প্রমানিত হয় নি, যদিও হিটলারের দাদা ইওহান জর্জ হিয়েডলার পরে তার পিতৃত্ব স্বীকার করে নেন। কোনও কোনও মহলের ধারণা একজন ইহুদী এই জারজ সন্তানের আসল জন্মদাতা। এজন্যই কি হিটলার অল্প বয়স থেকেই ইহুদী বিদ্বেষী ছিলেন ? কারণ জানা যায় নি। যাই হোক এই এলোয়েস হিয়েডলার ১৮৭৭ সাল থেকে নিজেকে ‘এলোয়েস হিটলার’ নামে নিজেকে পরিচয় দিতে শুরু করলেন এবং এলোয়েস হিটলারের তৃতীয় স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান হচ্ছে এডলফ হিটলার। মোটকথা হিটলার কোনও সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান নন।
এলোয়েস হিয়েডলার সাধারণ এক কাস্টমস অফিসে সামান্য এক চাকরি করতেন এবং নিম্নমধ্যবিত্তশালি ছিলেন। তারা যদিও খুব দরিদ্র ছিলেন না তবে হিটলার তার আত্মজীবনীতে এই দারিদ্রের খুব বড়াই করেছিলেন। এগারো বছর বয়সে তাকে একটি সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিলো । পড়াশোনায় তার মন ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে তাকে অন্য একটি স্কুলে ট্রান্সফার নিতে হয়েছিলো এবং এখানে ১৬ বছর বয়সেই তার লেখাপড়া শেষ হয়ে যায়। লেখাপড়ায় মোটেই ভালো ছিলেন না। ‘স্কুল লার্নিং সার্টিফিকেট’ তিনি পান নি। ১৯০৩ সালে তার বাবা মারা যান এবং তার বিধবা মা যেটুকু পেন্সন পেতেন তাতে সংসার চলে যেত।
স্কুলের লেখাপড়ায় হিটলার ব্যর্থ হলেন ঠিকই কিন্তু তার ঐ সময়ই একজন আর্টিস্ট হওয়ার ইচ্ছা মাথাচাড়া দিলো। ১৯০৭ সালে তিনি অস্ত্রিয়ার ভিয়েনায় বিখ্যাত আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসে ভর্তির চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে তিনি চিত্রশিল্প শিক্ষার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলেন না। আবার এদিকে তার মা মারা গেলেন ঐ বছরই। মায়ের সামান্য যা টাকা পয়সা ছিল সেটা সম্বল করে আবার ভিয়েনায় ফিরে এসে ১৯০৮ সালে আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসে ভর্তির চেষ্টা করেন। কিন্তু এবার তাকে আর পরীক্ষায় নেয়া হয় নি। ডাইরেক্টর তাকে উপদেশ দিলেন , ‘ তোমার আর্টে কিছু হবে না, আর্কিটেকচারে চেষ্টা করে দ্যাখো।’ আর্কিটেকচারেও তিনি ভর্তি হতে পারলেন না। কারণ ‘স্কুল লার্নিং সার্টিফিকেট’ তার ছিল না। নিদারুন হতাশায় ও মানসিক ক্ষোভে হিটলার গা ঢাকা দিলেন পাঁচ বছরের জন্য। এই পাঁচ বছর তার খুব কষ্টে কাটে।
অবশেষে হিটলার ১৯১৩ সালে ভিয়েনা ছেড়ে জার্মানির মিউনিখে উপস্থিত হলেন। কর্পদকশূন্য অবস্থায়। ১৯১৪ সালে শুরু হল প্রথম মহাযুদ্ধ। ছোটবেলা থেকেই হিটলার যুদ্ধের প্রতি খুব উত্তেজনা অনুভব করতেন। তীব্র আবেগ নিয়ে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরলেন, স্বেচ্ছায় ব্যাভারিয়ান রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে।
১৯১৮ সালের অক্টোবরে কর্পোরাল হিটলারকে দেখা গেলো পোমারুনিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। যুদ্ধে তিনি আহত হয়েছিলেন, ক্লোরিন গ্যাস লেগে তার চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। অবশ্য এ অন্ধত্ব ছিল সাময়িক।
হাসপাতালে শয্যাশায়ী অবস্থায় হিটলার জার্মানির পরাজয়ের খবর পেলেন। এ খবর পেয়ে হিটলার প্রায় ভেঙ্গে পড়লেন, তার কাছে এটাকে অবিশ্বাস্য মনে হতে লাগলো। সমস্ত জার্মানিতে তখন রীতিমতো বিপর্যয়, পরাজয়ের আঘাতে সবাই মুহ্যমান, । দেশে রুটি নাই, আইন- শৃঙ্খলা নাই, চতুর্দিকে দুর্যোগ । আর জার্মানির চিরশত্রু ফ্রান্স বিজয়ী। এই চিন্তা হিটলারকে পাগল করে তুলল। তিনি তার নিজস্ব ধারণা আর অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন - নিশ্চয়ই কোথাও মারাত্মক বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে, নাহলে জার্মানি এভাবে হারতে পারে না। কারা, কোন দুশমনরা এই পরাজয়ের জন্য দায়ী? - এই চিন্তা তার মাথায় ঢুকল। যদিও তিনি জার্মানিতে জন্মান নি , জার্মান নাগরিকও তিনি নন, তবু জার্মানি ও জার্মান জাতি বলতে তিনি অজ্ঞান।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে কি দেখলেন হিটলার? চার্চিলের ভাষায়, “ তার চারপাশে হতাশা এবং প্রবল উত্তেজনার লাল বিপ্লব ( কমিউনিস্ট বিপ্লব) উঁকি দিচ্ছিল। সাঁজোয়া গাড়ি লিফলেট বিতরন করতে করতে এবং পলায়নপর মানুষের উপর গুলি করতে করতে মিউনিখের রাস্তায় দৌড়াচ্ছিল। তার সহযোদ্ধারা তাদের ইউনিফর্মে লাল আর্মব্যান্ড পরে তিনি যার প্রতি আগ্রহ অনুভব করতেন তার বিরুদ্ধে চেঁচাচ্ছিল। জার্মানির পীঠে ইহুদীরা ছুরি মেরেছিল, মুনাফাবাজরা এবং বলশেভিকরা তাকে টেনে নামিয়েছিল ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তার চোখের সামনে ছিল সে কর্তব্য, জার্মানিকে এইসব প্লেগরোগ থেকে রক্ষা করা, প্রতিশোধ নেয়া এবং এই জাতিকে তাদের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নেতৃত্ব দেয়া।”
জার্মানিতে তখন বিপ্লবের নামে বিপর্যয় চলছে। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জার্মান সম্রাট দেশ ছেড়ে নেদারল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। রাজতন্ত্র বিলোপ করে জার্মানিকে রিপাব্লিক ঘোষণা করা হলেও কার্যত সেই পুরাতন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই চলে আসছিলো।
হিটলারের এই সঙ্কল্প পুরন করার প্রথম সুযোগ আসল মিউনিখে জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির সভায় যোগদান করার ফলে। সেখানে প্রথম হিটলার তার মনের কথা শুনতে পেলেন। অর্থাৎ কারা জার্মানির সর্বনাশ করেছে যারা জার্মান বাহিনীর এ অসম্মানের জন্য দায়ী তাদের কথা , দুশমন ইহুদীদের কথা ইহুদীদের সাবাড় করতে হবে - এই ধরণের ক্রুদ্ধ কথাবার্তা হিটলার শুনতে পেলেন সেই সভায়। ১৬ই সেপ্টেম্বর তিনি এই পার্টিতে যোগ দিলেন এবং ছোটবেলা থেকে যে বক্তৃতাবাজিতে তার অভ্যাস ছিল সেটা ব্যবহার করে পার্টিতে তিনি প্রোপাগান্ডার স্রোত বইয়ে দিলেন। ১৯২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখে জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রথম জনসমাবেশ হয় । এ সমাবেশে হিটলার ২৫ দফা কর্মসূচী পেশ করেন, সমগ্র সভায় তিনিই আধিপত্য বিস্তার করেন এবং সেদিনের সমাবেশেই হিটলার কার্যত একজন রাজনৈতিক নেতা বনে গেলেন। পরের বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দলের সমস্ত পুরনো নেতাদের হটিয়ে দিয়ে নিজের প্রতিভা আর শক্তির জোরে সমস্ত পার্টির উপর ইন্দ্রজাল বিস্তার করলেন, তার নেতৃত্বের মোহে পার্টি আচ্ছন্ন হয়ে গেলো এবং বলা যেতে পারে যে তখন থেকেই তিনি ‘ফুয়েরার’ রুপে দেখা দিলেন।
জার্মানির সেই ভীষণ দুর্দিনে হিটলারের প্রচণ্ড উত্তেজক বক্তৃতাগুলি যেন স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে লাগলো। আস্তে আস্তে সমস্ত জার্মান তার কথা শুনার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। ১৯২৩ সালে ফ্রান্স দখল করে নিল জার্মানির খনিসমৃদ্ধ বিখ্যাত রুঢ় অঞ্চল । সারা জার্মানিতে ক্রোধ আর ক্ষোভের ঝর বয়ে গেলো। সেই সাথে জার্মানির মুদ্রা মার্কের পতন জার্মানির মধ্যবিত্ত সমাজকে একেবারে পথে বসিয়ে দিলো। এই দুর্দশা থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায় ১৯২৩-২৪ সালে জার্মানির মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিটলারের দলে প্রচুর সংখ্যায় যোগ দিলো এবং যারা বেকার এবং সংখ্যায় অজস্র তারা এবং দরিদ্র -বঞ্চিতরাও হিটলারি মতবাদের ভক্ত হয়ে উঠলো। জার্মানির সামরিক বাহিনীর এক শ্রেণীর অফিসারও হিটলারের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। এভাবে নবগঠিত হিটলারের দল Nazional Sozialist Party ( নাতসিওনাল সতসিয়ালিস্ত পার্টি ) বা সংক্ষেপে Nazi বা নাৎসি পার্টি শক্তিশালি হয়ে উঠলো। ‘ঝটিকাবাহিনি’ নামে তাদের একটি প্রাইভেট আর্মি গঠিত হল । তাদের ইউনিফরম ছিল বাদামী রঙের শার্ট । এজন্য নাৎসিদের ‘ব্রাউন শার্টস’ ও বলা হত, যেমন ইতালিও ফাশিস্তদের ‘ব্ল্যাকশার্ট’ বলা হত। আর স্বস্তিকা চিহ্ন হয়ে গেলো নাৎসিদের প্রতীক, যেটা ক্রমে হয়ে উঠলো ভয়ের এবং নৃশংসতার প্রতীক।
একে একে হিটলারের চারপাশে এসে জুটতে লাগলো সেই সমস্ত দুর্ধর্ষ নাৎসি নেতারা, যারা ইউরোপ তো বটেই, গোটা পৃথিবী কাঁপিয়ে দিলেন। সেই গোয়েরিং , গোয়েবেলস, রোয়েম, রোজেনবার্গ, কাইটেল, এবং আরও অনেকে আসতে শুরু করলেন।
হিটলারি বৈপ্লবিক অভিযানে মিউনিখের পুলিশ বাধা দিলো। হিটলার পালিয়েছিলেন , কিন্তু পরে ধরা পড়েন এবং তার চার বছরের জেল হয় । ল্যান্ডসবার্গ দুর্গে বন্দি হয়ে থাকার সময় হিটলার রচনা করলেন তার সেই বই ‘মাইন কাম্ফ’। ব্যক্তিগতভাবে হিটলার এই বইয়ের রয়্যালটি বাবদ ১৯৩৩ সালে ১০ লক্ষ মার্ক বা ৩ লক্ষ ডলার পেয়েছিলেন। যাই হোক , এই বই পড়লে বুঝতে পারা যায় যে হিটলার একজন জাতিবিদ্বেষপরায়ন যুদ্ধোন্মাদ ব্যক্তি ছিলেন। তার কোনও গভীর জ্ঞান, পাণ্ডিত্য বা মনীষা ছিল না, ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ সহজাত বুদ্ধি, প্রবল যুক্তিতর্কের ক্ষমতা এবং সাধারন মানুষকে ভোলাবার জন্য বড় বড় চটকদার কথা আর বক্তৃতার আশ্চর্য শক্তি, যে শক্তিতে তিনি সেদিনের জার্মানদের অভিভূত করে ফেলেছিলেন। এই বইতে তার ভবিষ্যৎ রনপরিকল্পনার আভাসও ছিল। হিটলার কেবল যুদ্ধেই বিশ্বাস করতেন না, তার আরও বিশ্বাস ছিল যে জার্মানরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আর্যজাতি এবং Nordic রা তাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি - খাঁটি বিশুদ্ধ রক্তের জার্মানরাই Nordic. অবশ্য হিটলার এবং তার নাৎসি দলের এই বিকৃত বিশ্বাসের মূলে প্রেরনা জুগিয়েছিলেন সে সময়ের জার্মানির এবং পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক অসভাল্ড স্পেংগ্লার, যেটা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়।
অসভাল্ড স্পেংগ্লারের প্রচারণায় হিটলার এবং তার নাৎসি দলের মনে ধারণা হল যে, জার্মানরা শান্ত গরুর মত নিরীহ নয়। তারা সিংহের মতো শক্তিশালী। অতএব হিংসা ও যুদ্ধের মাধ্যমে অপরকে শিকার করে বড় হতে হবে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু কারা এই শ্রেষ্ঠ আর্যজাতিকে কলুষিত করছে? হিটলারের মতে এই শ্রেষ্ঠ আর্যজাতি পৃথিবীব্যাপী ইহুদীদের চক্রান্তে ধ্বংস হচ্ছে। এই ইহুদীরা জার্মানিতে ব্যাবসা বাণিজ্য করে এবং ধনিক শ্রেণী হয়ে মানুষকে শোষণ করছে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বলশেভিকরা বিপ্লব ও যুদ্ধ করে জার্মান জাতিকে বিপন্ন করছে।
বলা বাহুল্য যে সেদিনের জার্মানিতে ব্যাঙ্ক, স্টকমার্কেট, প্রেস, মিডিয়া এবং ব্যবসায় বাণিজ্যে ইহুদীরা বেশ প্রভাবশালী ছিল। প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলোর অর্ধেক ছিল ইহুদীদের দখলে, খবরের কাগজগুলোর প্রায় অর্ধেক চালাত ইহুদীরা ।
গোঁড়ার দিকে নাৎসি দল তেমন সমর্থক পায়নি । ১৯৩০ সাল থেকে পৃথিবী জুড়ে বাজার মন্দা শুরু হল এবং ১৯৩৩ সালে সেটা চরম আকার ধারন করলো আর জার্মানির দুর্গতির শেষ থাকল না। সেসময়কার সরকার এর কোনও প্রতিকার করতে পারল না। এদিকে হিটলার ও নাৎসি পার্টি তাদের ‘ঝটিকা বাহিনী’, ‘এস এস গার্ড ’ ইত্যাদি নামে কিছু প্রাইভেট আর্মি গঠন করে তাদের বিপক্ষের দল , এমনকি সরকারকেও ভয় দেখাতে লাগলো। অন্যদিকে জার্মানির অর্থনৈতিক দুর্দশা যত বাড়তে লাগলো সাধারণ মানুষও তত চরমবাদীদের প্রতি ঝুঁকতে লাগলো। কমিউনিস্ট পার্টি জার্মানিতে বেশ শক্তিশালী ছিল এবং তাদের সাথে নাৎসিদের প্রায়ই সংঘর্ষ হচ্ছিলো। দুই দলই মানুষের দুর্গতি লাঘবের জন্য বৈপ্লবিক পরিবর্তনের উপর জোর দিতে লাগলো। এই সময় রাইনল্যান্ডের শক্তিশালী শিল্পমালিকরা কমিউনিস্টদের ভয়ে আতঙ্কিত ছিল। তারা হিটলারকে সমর্থন জানালো কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে সহায়তা পাবার আশায়। অন্যদিকে যুদ্ধবাদী জার্মানির মেরুদণ্ড হিসেবে যারা ছিলেন, সেই সব প্রুশিয়ার বড় বড় জমিদার , যারা ছিলেন অভিজাত শ্রেণী , তারা হাত মেলাল রাইনল্যান্ডের শিল্পপতিদের সাথে। এই সমস্ত জমিদার ও শিল্পপতি উভয় শ্রেণী মিলে বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গ এর উপর চাপ দিলেন হিটলারকে ‘ চ্যান্সেলর’ বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। ১৯৩৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গ এর আমন্ত্রনে হিটলার এই পদ লাভ করেন।
হিটলার সরকারী ক্ষমতা হাতে পেয়ে ধাপে ধাপে সমস্ত জার্মান রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে নিজের হাতের মুঠোয় আনলেন এবং বিরোধীপক্ষকে একেবারে নির্মূল করলেন। নাৎসি দালালদের সাহায্যে রাতে রাইখস্ট্যাগে (জার্মান পার্লামেন্ট ) আগুন ধরিয়ে দেয়া হল এবং ‘এটা কমিউনিস্টদের কাজ’ এই অজুহাত তুলে আস্ত কমিউনিস্ট পার্টিকে নির্মূল করা হল। ভেইমার রাষ্ট্রতন্ত্র বাতিল হয়ে গেলো এবং তৃতীয় রাইখের অভ্যুদয় ঘটলো। মাত্র এক বছরের ভেতর হিটলার জার্মানির উপর তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা, প্রভাব ও শক্তি প্রয়োগ করে সমস্ত রাষ্ট্রকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসলেন। গর্বে - আনন্দে হিটলার জার্মান ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ‘ সর্বশ্রেষ্ঠ জার্মান’ বলে ঘোষণা করলেন। তিনি কেবল নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ জার্মান বলেই ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হননি, ১৯৩৩ সালের ৩০ শে জানুয়ারি তার নেত্রিত্বে যে তৃতীয় রাইখের জন্ম হল, হিটলার গর্বের সাথে দাবি করলেন ‘এই রাইখ হাজার বছর টিকে থাকবে।’
এর পরে ১৯৩৪ সালে রাষ্ট্রের সর্বচ্চ পদে বসলেন হিটলার। ২রা আগস্ট ৮৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গ মারা গেলেন। ঐদিনই দুপুর বারোটার সময় ঘোষণা করা হল যে আগের দিন ক্যাবিনেটের গৃহীত এক আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রির পদ এক করা হল এবং এডলফ হিটলার রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদেও বৃত হলেন। প্রেসিডেন্ট পদটি বিলোপ করা হল। এখন থেকে হিটলার ফুয়েরার (Führer) ও রাইখ চ্যান্সেলর নামে অভিহিত হবেন। প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্র্গের খালি আসনটিতে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল না। এভাবে সংবিধান অগ্রাহ্য করেই হিটলারকে রাষ্ট্রের সর্বচ্চ পদে ‘মনোনীত’ করা হল। এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতালাভের মধ্যে যাতে কোথাও কোন ফাঁক না থাকে সেজন্য হিটলার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সদস্যদের কাছ থেকে আনুগত্যের শপথ আদায় করে ছাড়লেন। এই শপথ জার্মানির নামে নয়, সংবিধানের নামেও নয় ব্যক্তিগতভাবে হিটলারের নামে গ্রহন করতে হত। এটি ছিল -
“ I swear by God this sacred oath , that I will render unconditional obedience to Adolf Hitler, the Führer of the German Reich and people, supreme commander of the armed forces, and will be ready as a brave soldier to risk my life at any time for this oath.”
এরকম ভয়ঙ্কর চরিত্রের লোকটিকে নিয়ে সেনাপতিরাও অনেক ভোগান্তি এবং বিরোধের মধ্যে পড়লেন । তাকে কয়েকবার অপসারন এবং হত্যার চেষ্টাও করা হয়। তবে সেদিনের জার্মানিতে হিটলার অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা দিলেন। একে একে তিনি জার্মানির দিগ্বিজয়ের পরিকল্পনাগুলি কার্যকরী করতে লাগলেন। যে ইতালীয় ডিক্টেটর মুসলিনি এতদিন তর্জন-গর্জন করছিলেন রোমান সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশায় তিনিও পেছনে পড়ে গেলেন। এরপর হিটলার বিনা রক্তপাতে কেবলমাত্র হুমকি, সন্ত্রাসবাদ এবং যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে জার্মানির পাশের রাজ্যগুলো দখল করে ফেললেন। ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি কমিউনিজমের আশঙ্কায় হিটলারকে কোনওরকম বাধা দিলো না। একে একে হিটলার ভার্সাই চুক্তি, লোকোর্ণ চুক্তি, কেল্গ চুক্তি ইত্যাদি বাতিল করে দিলেন। জোর জবরদস্তি, সন্ত্রাস , হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে হিটলার ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে রাইনল্যান্ড থেকে চেকোস্লোভাকিয়া পর্যন্ত নিজের দখলে আনলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধাবার পথে আরও একধাপ এগিয়ে । একটি মাত্র ব্যক্তির এহেন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রান্তসীমায় এসে দাঁড়ালো।

( সুত্রঃ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস - বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় )

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৫
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×