somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের সুচনাভূমি রাজশাহী

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজশাহীতে প্রথমশহীদ মিনারের পাশে দাড়িয়েআন্দোলনে জড়িত ছাত্ররা

মহান ভাষা আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য রাজশাহী স্থান পেয়েছে ইতিহাসে। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালে প্রথম রক্ত ঝরেছিল রাজশাহীতে। ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী শহরের ভুবন মোহন পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের দাবিতে দেশের প্রথম জনসভা। আর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল রাজশাহী কলেজের নিউ হোস্টেলের পাশে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ভাষা দিবস পালনের দিন রাজশাহীতে ডাকা হয়েছিল ধর্মঘট। তখনো রাজশাহীর সাধারণ মানুষের মধ্যে মাতৃভাষা নিয়ে তেমন আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষের নিষেধ উপেক্ষা করে সাহস নিয়ে কলেজের ছাত্ররা গেটের সামনে শুয়ে পড়ে। এরপর কলেজের শিক্ষার্থীরা বের করে মিছিল। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্লোগান দিয়ে মিছিলটি যখন শহরের ফায়ার ব্রিগেডের সামনে আসে, তখন কিছু লোক মিছিলকারীদের 'ভারতের চর কম্যুনিস্ট' আখ্যা দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে আক্রমণ করে। এতে ছাত্রনেতা আবদুললতিফসহ অনেকেই আহত হন। ফলে বাংলা ভাষার দাবিতে প্রথম রক্ত ঝরে রাজশাহীতে।

মিছিলে হামলার প্রতিবাদে ওইদিন অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেন রাজশাহী কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। এর ১০ দিন পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে বলেছিলেন, 'পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। তীব্র স্বরে 'না' বলার মধ্য দিয়ে এক ধাপ এগিয়ে যান ঢাকার আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা। রাজশাহীর আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরাও 'না' উচ্চারণ করলেন। রাজশাহী কলেজ থেকে শুরু হলো জোরেশোরে আন্দোলন। কলেজ কর্তৃপক্ষ সক্রিয় আন্দোলনে জড়িত অনেক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের আদেশ দেন। তবে আন্দোলনের চাপে সে আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। তবে ১৯৪৮ সালে এখানকার ভাষা আন্দোলন রাজশাহী কলেজকেন্দ্রিক ছিল। রাজশাহী কলেজের সংগ্রামী ছাত্ররা আন্দোলনের গতিধারা চিহ্নিত করতেন। তারা সঠিক নেতৃত্বের দ্বারা ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হন।

রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনের গতি ক্রমশ বেগবান হওয়ায় ১৯৪৮ সালে যেসব নেতা বিরোধী ছিলেন, চরম পর্যায়ে তারাও বাংলা ভাষার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। এখানকার ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে ১৯৫০ সালে গঠিত 'দিশারী সাহিত্য মজলিশ' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সংগঠন দিশারী নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করে ভাষা আন্দোলনে তরুণদের উৎসাহিত করেছিল। এদিকে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহরের ভুবন মোহন পার্কে বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন রাজশাহী জেলা তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনসার আলী। তার মতে, ভাষা আন্দোলনের দাবিতে এটিই ছিল দেশের প্রথম জনসভা। এতে জননেতা ক্যাপ্টেন শামছুল হক, মোসাদ্দেরুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনসভার জন্য প্রচারিত লিফলেট মুদ্রিত হয়েছিল তমোঘ্ন যন্ত্রণালয় থেকে। এরপর রাজশাহীতে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ ীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহীতে দিনব্যাপী হরতাল পালিত হয়। বিকালে ভুবন মোহন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। রাজশাহী কলেজের ছাত্র হবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তৃতা করেন শামছুল হক, আব্দুস সাত্তার, বেগম জাহানা মান্নান। জনসভা চলাকালে খবর আসে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ভাষাসৈনিক শহীদ হয়েছেন। প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সমবেত জনতা। ঢাকার শহীদদের স্মৃতিরক্ষার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে আন্দোলনরত ছাত্ররা রাজশাহী কলেজের নিউ হোস্টেলের পাশে নির্মাণ করেন দেশের প্রথম শহীদ মিনার। এটি নির্মাণের আগে হোস্টেল প্রাঙ্গণে ছাত্রদের এক সভায় মেডিক্যাল স্কুলের ছাত্র এসএমএ গাফফারকে সভাপতি এবং হাবিবুর রহমান ও গোলাম আরিফ টিপুকে যুগ্ম সম্পাদক করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।

ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও ভাষা আন্দোলনের গতিকে বেগবান করতে ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ভুবন মোহন পার্কে প্রতিবাদ সভা ডাকে; কিন্তু আগে থেকেই পুলিশ পার্ক দখল করে রাখায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজের টেনিস লনে। এদিন ছাত্রদের ডাকে রাজশাহীতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। পুলিশ রাজশাহী কলেজের নিউ হোস্টেলের পাশে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনারটি গুড়িয়ে দেয়। এর ক'দিন পর ভুবন মোহন পার্কে আরও একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগ নেতা এমএলএ মাদার বখ্শ ও ক্যাপ্টেন শামছুল হক সভায় হাজির হয়ে নূরুল আমিনের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন। মাদার বখ্শ ঘোষণা দেন, যদি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া না হয় তাহলে আইন পরিষদের সদস্য পদ থেকে আমি পদত্যাগ করব। এর কয়েকদিন পর তিনি পদত্যাগও করেন। ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীতে অনেক নারী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এভাবেই ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয়?পর্যায়ের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রাজশাহী। মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের গৌরবে বলীয়ান বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বিজয়ের অংশীদার তাই রাজশাহীও।
- শ,ম সাজু, রাজশাহী, (বাংলাদেশ প্রতিদিন ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০১১ এ প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×