somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড পঞ্চম পর্ব

২৪ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড পঞ্চম পর্



ভালবাসার বালুচরে খেলাঘর
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভালবাসার বালুচরে বাঁধা খেলাঘর। তিল তিল করে প্রেম, প্রীতি আর ভালবাসা দিয়ে গড়ে তোলা হয় জীবন নদীর বালুচরে ভালবাসার খেলাঘর। অবিচারের ঝড় এসে যখন ভেঙে দেয় সেই খেলাঘর তখন পাথরের চোখেও অশ্রু ঝরে। আসুন, আজ আপনাদের নিয়ে যাব আমি ভালবাসার বালুচরে বাঁধা খেলাঘরে। যেখানে আনন্দের অশ্রুধারা বইবে স্বপ্নের সাজানো বাগানে।

জীবন নদীতে ভেসে চলেছে প্রেমের তরী। প্রেমের তরী জলে ডোবে না। মনমাঝি তাই ভাটিয়ালী সুরে গান ধরেছে
“জীবন পথের পথিক রে তুই—
বাঁধলি কেন ভালবাসার খেলাঘর?
জীবন নদীর ঝড় তুফানে
ভাঙবে রে তোর সেই খেলাঘর।
……………………………ও মন রে-------- মন রে আমার….

জীবন নদীর তটে তরী এসে ভিড়ে কিনারায়। তরী থেকে নেমে আসে নব-দম্পতি। কোথায় যাবে ওরা? ওরা নিজেই জানে না। উদ্দেশ্য-বিহীনভাবে নব-দম্পতির যাত্রা হয়েছে শুরু। নদীর তটে বিনু দাসের চায়ের দোকান। চোখের মোটা ফ্রেমের চশমা খুলে নব দম্পতিকে দেখে। কিছু পরেই ধূতি পাঞ্জাবী পরিহিত নব-যুবক তার দোকানে এসে বলে চা হবে। সকাল সকাল চা না খেলে ভাল দিন শুরু হয় না। তাই নব-যুবক চায়ের দোকানে দুটি চায়ের অর্ডার দিল।

বেনারসী শাড়ি পরিহিতা নব-যুবতীও তার পাশে এসে দাঁড়ায়। চায়ে চুমুক দিতে দিতে নবদম্পতি লক্ষ্য করে নদী কিনারায় লাগানো নৌকাটি ওপারের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে। এপারের নদীর কিনারায় প্রকাণ্ড একটা বটগাছের ডালে বাসা বেধেছে দুটি বিহগ-বিহগী। এরা বেশ সুখেই আছে। কেউ ওদের কিছু বলে না।

ওরা ভাবে- এই রকম স্থায়ী ঠিকানা যদি তাদের থাকত। যদি তারাও এরকম সংসার বাঁধতে পারতো তাহলে কি ভালোই না হতো। ভাবতে ভাবতে নবদম্পতি অন্যমনস্ক হয়ে যায়। চকিতেই দোকানের মালিক বিনু দাস জিজ্ঞাসা করে- “আপনারা কোথা থেকে আসছেন আরা কোথায় যাবেন?”

কিছুটা অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পড়লো এবার নব-দম্পতি। কিছু না বলে নব- যুবক চায়ের দাম মিটিয়ে বললো – ধন্যবাদ। আবার যাওয়ার পালা। দুজনে রাঙাপথ ধরে হাঁটতে থাকে। গাঁয়ের রিক্সাওয়ালা কলিম মিঞা এই পথে প্রতিদিন রিক্সা নিয়ে যাতায়াত করে। দাঁড়িয়ে যায়। বলে- “কোথায় যাবেন বাবু! আসুন আমি পৌঁছে দেব।”

কিছু না বলেই ওরা দুজনে বসে এসে রিক্সায়। রিক্সা ছুটে চলেছে। কিন্তু কোথায়? রিক্সাওয়ালাও জানে না। রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞাসা করে- কোথায় যাবেন আপনারা? এবার কি উত্তর দেবে রিক্সাওয়ালাকে ওরা জানে না। অগত্যা রিক্সাওয়ালা রাঙা রাস্তার চৌমাথায় রিক্সা থামিয়ে বলে- কোন গাঁয়ের লোক আপনারা? কোন গাঁয়ে যাবেন? কেননা এই চৌমাথায় রাস্তা আলাদা আলাদা গাঁয়ে গিয়ে মিশেছে।

ঠিক সেই সময় গাঁয়ের জমিদার ভুবন নারায়ণ রায় ঘোড়ার গাড়ি করে চলেছেন নিজের কাছারিতে। সাথে নায়েব হরিহর নাথ। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। জমিদার ভুবন নারায়ণ রায় তার নায়েব মশাইকে জিজ্ঞেস করেন- এই নব-দম্পতি কোথায় যাচ্ছেন? ঘোড়ার গাড়ি তাদের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। সহাস্যে জমিদারবাবু সাদরে ডেকে নিলেন নব-দম্পতিকে।

তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন – “আমার স্ত্রী নেই, আমার পুত্র নেই, আমার সংসার আমি একা। তাই তোমাদের আমি আমার পুত্র ও পুত্রবধূর মর্যাদা দিয়ে আমার কাছে রাখতে চাই। এসো তোমরা।”

কূল ভাঙা ঢেউ যখন সবকিছুকে প্রবল বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়, যখন আশ্রয়হারা বিহঙ্গের সকরুণ আর্তনাদ আমাদের হৃদয়ের গভীরে গিয়ে অন্তরটাকে তোলপাড় করে দেয়, ঠিক তখনই তারা পায় বাঁচার ঠিকানা। ঠিক তেমনি নব-দম্পতিকে আশ্রয় দিলেন স্থানীয় জমিদার ভুবননারায়ণ রায়। শুধু তাই নয় তাঁদের পরিচয় এখন ওরা জমিদার পুত্র ও পুত্রবধূ।

এরপর তিনটি বছর পার হয়ে গেছে। সারা গাঁয়ে আজ আনন্দের ঢেউ। আজ জমিদার ভুবন নারায়ণ রায়ের নাতির অন্নপ্রাশন। কত লোক খাবে। চারদিকে ময়রা, রাঁধুনি, ও কাজের লোকের হৈ চৈ। প্যাণ্ডেল টাঙানো হয়েছে। রাতেও লোকের আতিথ্যে ভরে উঠবে তার সুখের রাজপ্রাসাদ। ভালবাসার বালুচরে বাঁধা খেলাঘর এত সুখের হতে পারে তা দম্পতি-যুগল স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি।



(চলবে)
আগামী দিনে ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড -ষষ্ঠ পর্ব প্রকাশিত হবে। আক্রমনাত্মক বা কড়া সমালোচনামূলক মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×