somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড ষষ্ঠ পর্ব

২৫ শে মে, ২০১৯ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড ষষ্ঠ পর্ব



মৃত্যু দিয়ে কেনা ভালবাসা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভালবাসা মূল্য দিয়ে কেনা যায় না। কিন্তু মৃত্যু দিয়ে কেনা যায়। একে অপরকে ভালবাসে সেটা ভালবাসার বিনিময়ে। কেউ সংসার সীমান্তে দাঁড়িয়ে আজীবন চোখের জল ফেলে তার জন্য দায়ী ভালবাসা নয়, পবিত্র ভালবাসাকে যারা গলাটিপে হত্যা করে তারাই দায়ী। ভালবাসার মধ্য দিয়ে দুটি মন দুটি প্রাণ এক হয়। কিন্তু এই ভালবাসার জন্য তাদের কি মূল্য দিতে হয় তা কেউ জানে না। রাতে ওরা ঘুমোতে পারে না। আকাশ পাতাল চিন্তা করে একে অপরকে নিয়ে। অধিক রাত্রি জাগরণ, সারা দিনের ক্লান্তি, দুটি জীবন ও মনকে অবসন্ন করে তোলে। অবশেষে ইচ্ছামৃত্যুকে বরণ করে। আসুন আজ আমরা আপনাদের সকলকে শোনাবো মৃত্যু দিয়ে কিনেছি ভালবাসা। এক বিয়োগান্তক গল্প। বিষাদের গাঁথা আপনার মনকে বেদনার্ত করে তুলবে কিনা জানি না। তবে চেষ্টা করেছি এই অনন্ত জিজ্ঞাসাকে গল্পের মধ্যে তুলে ধরেছি। অশ্রু দিয়ে কেনা ভালবাসার অপর নাম মৃত্যু। এক বুক আশার পরিসমাপ্তি। এক মুঠো ভালবাসার অপমৃত্যু। মৃত্যু দিয়ে কেনা ভালবাসার জয় না পরাজয় তার বিচারের ভার আপনাদের হাতেই তুলে দিলাম।

গল্পের শুরু একটা ফুলের মত নিষ্পাপ এক মেয়েকে নিয়ে। তার নাম বেলা। বেলা জীবন দিয়ে ভালবাসার মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেছে। অনুপকে চিরকালের মত মুক্তি দিয়ে গেছে। তার বেদনাময় স্মৃতিকে অনুপ আজও ভুলতে পারে নি।

তাইতো তার মানস চোখে ভেসে ওঠে বেলার প্রতিচ্ছবি। তার কণ্ঠস্বর আজও ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে অনুপের কণ্ঠে ভেসে আসে। বেলা বলছে- “আমার জন্য তুমি কিন্তু চোখের জল ফেলো না। আমি আছি, তোমার পাশে পাশেই থাকব। আমি তোমায় আজও ভালবাসি”

অনুপের ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। লাইট নিভিয়ে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল তার খেয়াল নেই। রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখল- বেলা যেন তাঁর কানে কানে ফিস ফিস করে বলছে- এই কি ভাবছো। আমায় পূজোর মেলায় নিয়ে যাবে না?

অনুপের বেশ মনে আছে – দিনটা ছিল দুর্গা- অষ্টমীর দিন। ঐ অষ্টমীর দিনে বেলা তাকে চিরদিনের মত ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু কেন সে ইচ্ছামৃত্যু বরণ করলো আজও সবার অজানা।

স্বপ্ন কি কভু সত্যি হয়? প্যাণ্ডেলে পাণ্ডেলে দর্শকের প্রচণ্ড ভিড়। পূজা মণ্ডপের একটু দূরেই বসেছে পূজোর মেলা। সার্কাস, ম্যাজিক শো, পুতুলনাচ, খেলনার জিনিসপত্র, বাঁশি থেকে আরম্ভ করে হাতা, খুন্তি, থালা বাটি, গেলাস সব দোকানই মেলায় এসেছে। ওরা দুজনে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে সার্কাস শোতে ঢুকে পড়লো।

অনুপের পাশে বেলা চেয়ারে বসে আছে। দুজনে ভাবতে থাকে এই তো জীবন। জীবনের অনেক ঘটনাই স্মৃতির অতল তলে তলিয়ে যায় কে তার খবর রাখে? শুধু এই টুকু মনে আছে সেদিন ওরা অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছিল।

বেলার মা গর্জে উঠলো- “এত রাত্রে কোথায় গিয়েছিলে? কাকে বলে গিয়েছিলে? কার সাথে গিয়েছিলে।” কোন প্রশ্নের উত্তর বেলার কাছে জানা ছিল না। তাই চুপ করে রইল। কিছু না বলে না খেয়েই আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছিল।

রাত তখন বারোটা। মিটমিট করে রাতের আকাশে তারারা জ্বলছে। বেলা উঠে বারান্দায় আসে। মনের মধ্যে বইছে বিরাট একটা ঝড়। পৃথিবীকে স্বপ্নময় মনে হয় তার। ড্রয়ার খুলে বাবার লুকানো পিস্তলটা টেনে নেয় বেলা। চেম্বার খুলে দেখে ছয়টি বুলেটই আছে। ড্রয়ারে রাখা পিস্তলটা তেমনি করেই রেখে দেয় বেলা।

আত্মহত্যা করবে বেলা। কিন্তু অনুপের কথা মনে আসতেই সে ভাবতে থাকে- তার মৃত্যুতে পৃথিবীর কারো কোনো ক্ষতি হবে না। শুধু অনুপ নীরবে চোখে জল ফেলবে। চকিতে ডায়েরীর পাতা খুলে কলম দিয়ে লিখে রাখে তার শেষ চিঠি।

“বড় দুঃখে তোমাকে আমার এই শেষ চিঠি লিখছি প্রিয়। আমার মৃত্যুতে তুমি একফোঁটাও চোখের জল ফেলবে না। তাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না। অমাবস্যার রাতে যদি কোন দিন আমার কথা মনে পড়ে তাহলে অন্ধকার ঘরে একটি প্রদীপ জ্বেলো। প্রদীপের আলোর মাঝে আমার হাসিমুখ দেখতে পাবে। যদি পূর্ণিমার রাতে আমার কথা মনে পড়ে তাহলে চাঁদের দিকে একটিবারের মতো চেয়ে দেখো। চাঁদের হাসির সাথে আমার হাসি দেখতে পাবে। আমি তোমার পাশে আছি, চিরদিনই থাকবো।”

ড্রয়ার থেকে বাবার লুকানো পিস্তলটা টেনে নেয় বেলা। তারপর রাতের আঁধারে গর্জে উঠে পিস্তল। বেলার দেহটা লুটিয়ে পড়ে বারান্দায়। একটি নিষ্পাপ ভালবাসার মৃত্যু ঘটলো সেই রাতে। অভিমানী বেলা হারিয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে। কিন্তু বেলা মরে নি। ভালবাসার মৃত্যু নেই তাই সে আজও বেঁচে আছে অনুপের স্মৃতির পাতায়।

(চলবে)
আগামী দিনে ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড –সপ্তম পর্ব প্রকাশিত হবে। আক্রমনাত্মক বা কড়া সমালোচনামূলক মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৯ সকাল ১০:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×