আমাদের সমাজে একটি নতুন ট্রেন্ড চালু হতে যাচ্ছে, সেটা হলো বাচ্চাদেরকে মসজিদ মুখি করার প্রচেষ্টা হিসাবে তাদেরকে সাইকেল গিফট দেয়া। যে যে টানা চল্লিশ দিন ফজরের নামাজ জামাতে উপস্থিত হয়ে আদায় করবে, সেই পাবে সাইকেল উপহার। আপাতঃ দৃষ্টিতে ব্যপারটি দারুন আইডিয়া মনে হলেও, বস্তুতঃ এই ধরণের আয়োজন হাদিস কোরআন সমর্থন করে কি না, সেটা আমাদের জানা নাই।
নামাজ শুধুই আল্লাহর সম্তুষ্টির জন্যে, সাইকেল পাওয়া বা দুনিয়াদারি হাসেল করার জন্যে নয়। নামাজের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্যে তাই এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা কি ঠিক, যেটা কাওকে দুনিয়াবি ফায়দা হাসিলে সহায়তা করে? পাশাপাশি মেয়েরা কি পাবে? মেয়ে শিশুদের অভ্যাস গড়তে তাহলে মসজিদ কমিটির কি ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিলো?
আমরা যদি গ্রামে গঞ্জে মফস্বল শহর গুলোর মাদ্রাসা গুলোতে খোঁজ নিই, তবে দেখা যাবে ছোট ছোট শিশু বাচ্চারা শুধু মাত্র আল্লাহর দ্বীনের বিধান পালনের উদ্দেশ্যে খেয়ে না খেয়ে, কি শীত কি গরম হাজারো ক্লেশ কষ্ট সহ্য করে কোরানের তালিম নিচ্ছে, কোরান হিফজ করছে, তাদের জন্যে কেউ সাইকেল চকলেট নিয়ে দাড়িয়ে নেই। নেই কোন বিনোদনের ব্যবস্থা। কোন রকম তিন বেলা খাবার খেয়েই তারা দ্বীনের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। আর আমরা শহুরে বাবুরা বাচ্চাদেরকে নামাজমুখী করার জন্যে কত রকম ফন্দি ফিকির করছি। আদৌ কি সাইকেল পাওয়ার লোভে ক দিন নামাজে গেলে কি এদের সেই নামাজ আদায় হবে?? এর দ্বারা আজীবন এরা নামাজ পড়বে, তার কি নিশ্চয়তা মেলে?
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজিরপূর্বক বলবেন, তুমি কি প্রকার ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি বলবে আমি নিজের প্রাণকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবান করেছি। আমি জেহাদে যোগদান করলে কাফেররা আমাকে শহিদ করেছে। আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি শুধু এই উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছিলে যে, লোকে তোমাকে বীরযোদ্ধা বলে আখ্যায়িত করবে। হে ফেরেশতাগণ! এ ব্যক্তিকে দোজখে নিয়ে যাও।
অপর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করে জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি কি প্রকারের ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমার ধন-সম্পদ যা কিছু ছিল আমি তা আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করেছি। আল্লাহপাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি শুধু এ উদ্দেশ্য দান-খয়রাত করেছিলে যে, মানুষ তোমাকে দাতা বলে প্রশংসা করবে। অতএব এ ব্যক্তিকেও দোজখে নিক্ষেপ কর।
অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি প্রকারের ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি বহু পরিশ্রম করে বিদ্যা অর্জন করেছি এবং কোরআন শরিফ পাঠ করেছি। আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যাবাদী, মানুষ তোমাকে আলেম বলবে এ উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করেছ। ফেরেশতাগণ! এ ব্যক্তিকেও দোজখে ফেলে দাও।
এখন আল্লাহ যদি এভাবেও বলেন যে, তুমি সাইকেল পাওয়ার জন্যে আমার মসজিদে এসেছিলে, সাইকেল পেয়েওছিলে, অতএব .... আর যারা এমন লোক দেখানো আয়োজন করেছিলো তাদের ব্যপারেও যদি আল্লাহ উপরোক্ত নির্দশ দেন, তখন এই সব আলেম গন কি করবেন?
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের জন্য ছোট শিরকের ভয় যত করছি, এত ভয় অন্য কোনো বিষয়ে করি না। উপস্থিত সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ছোট শিরক কি? হুজুর (সা.) উত্তর দিলেন, তা হচ্ছে- রিয়া।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ইবাদতের মধ্যে একটি ধূলিকণা পরিমাণ লোক দেখানো মনোভাব থাকলে আল্লাহতায়ালা ওই ইবাদত কবুল করেন না।
যে কোন কিছু করার আগে, তাই আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ, কাজটা কতটুকু যুক্তি সংগত। আমাদের দেশে কোটি কোটি মসুল্লি কি নামাজ পড়া শেখেনি? দুনিয়োর কোন জিনিসটা পাওয়ার লোভে তারা নামাজ পড়া শিখেছে ও পড়ছে? কোন কিছুই না, এক মাত্র আল্লাহকে রাজী খুশির জন্যেই সবাই নামাজ পড়া শিখেছে ও যারা পড়ার তারা পড়ছে। আমরা পারলে আমাদের ছেলে মেয়েরা কেনো পারবে না?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৪২