ইদানিং ধর্মিয় বিষয়ে প্রায় প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রেই রয়েছে বিভ্রান্তি। নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত কোরবানী এমনকি কলেমা খুঁজে না পাওয়ার মতো হস্যকর বিষয়য়েরও অবতারণা হয়েছে। এখন প্রশন হচ্ছে, ইসলাম চর্চার মূল ভিত্তি হলো কোরআন শরীফ। এই মহা গ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন বোঝার জন্যে রয়েছে রাসুলের (সাঃ) কথা, কাজ অভ্যাস আচরণ নির্দেশ ও আদেশ নিষেধ ইত্যাদি। এক কথায় যাকে বলা হয় সুন্নাহ। তাঁর সুন্নাহকে নিজেদের আমল হিসাবে শরীরে ও মননে ধারণ করেন প্রথমতঃ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)। যদিও এই ক্ষেত্রেও রয়েছে স্তর বিন্যাস। অর্থাৎ সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আবার সম পর্যায়ের নন। মক্কা বিজয়ের পূর্বের সাহাবি মক্কা বিজয়ের পরের সাহাব গনকে এক হিসাবে ধরা হয় না। জলিলুল কদর সাহাবী সবাই নন। আশারায়ে মুবাশ্শিরা বা বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী (রাঃ)র সংখ্যা দশ জন। সবাই কিন্তু নন। আমার আজকের মূল আলোচনা সাহাবায়ে কেরামগনের স্তর বিন্যাস নয় বিধায় এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলছি না। তো যে কথায় আমরা ছিলাম তা হলো আল্লাহর তরফ থেকে আদিষ্ট হয়ে রাসুল (সাঃ) যে জীবনাচরণ আমাদেরকে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ দিলেন, তার ধারক বাহক হলেন সেই যুগের সাহাবায়ে কেরাম। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম গনকে যারা অনুসরণ করে ইসলাম চর্চা করে গেছেন তাঁদেরকে বলা হয় তাবেঈন। অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহর রাসুলর (সাঃ) সাক্ষাৎ পাননি, অথচ আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কোন একজন বা একাধিক সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এঁর সাক্ষাৎ পেয়েছেন, তাঁদেরকে বলা হচ্ছে তাবেঈন। ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞ্যান আচরণ অভ্যাস আমল নিঃসন্দেহে বর্তমানে গবেষণা করে আমল বের করা আলেমের তুলনায় হাজার লক্ষ কোটি গুন সহিহ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ তিনি সরাসরি রাসুলের (সাঃ) সংস্পর্শে থাকা কোন না কোন সাহাবি (রাঃ) থেকে আমল শিখেছেন। তাহলে এখন যদি দেখি যে কোন আলেম সেই তাবেঈ (রহঃ) গনের বাৎলে যাওয়া কৃত আমলকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে নিজের পান্ডিত্য জাহির করে নিজে নিজে মন গড়া কোরান হাদিসের ব্যাখ্যা করে কোন টা সহিহ আর কোনটা অ সহিহ বলে ফতোয়া দেয়, তাহলে তার কথা আমরা কেন আমলে নেবো? এই সব বর্তমান সময়ের আলেমের কোন ব্যাখ্যা যদি সেই তাবেঈ আলেমের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে আমাদের কাকে অনুসরণ করা উচিৎ? যে সাহাবায়ের কেরাম(রাঃ) থেকে আমল শিখেছেন সেই তাবেঈর কথা বা আমলকে গ্রহণ করবো নাকি এই ফেতনার যুগে সৃষ্ট হাদিস সমুহের মন গড়া ব্যাখ্যা দেন যে আলেম তার কথা শুনবো? যে কোন ঘটনা স্বচক্ষে দেখে শেখা মানুষে বর্ণনা অধিক সঠিক হয় নাকি শুনে শুনে বুঝে বুঝে ধারণা করে বলা মানুষের বর্ণনা অধিক সঠিক?
যে সকল আলেম সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বা তৎপরবর্তি আলেমগনকে অর্থাৎ তাবেঈ বা তাবে তাবেঈ যুগের আলেম গনকে অনুসরণ করে না, সেই সকল আলেমদেরকে আমরা কেন অনুসরণ করবো?
আপনি নির্দিষ্ট একটি হাদিস গ্রন্থের অনুসরণ করছেন? সেই হাদিস গুলোই বা কিভাবে সংগৃহিত হয়েছে? সেই সাহাবি, সাহাবি থেকে তাবেঈ, তাবেঈ থেকে তাবে তাবেঈর মাধ্যমেই তো এসেছে। যিঁনি হাদিস সমুহ সংগ্রহ করেছেন, তিনি কাকে অনুসরণ করেছেন? ঐ একই চেইন তাকেও অনুসরণ করতে হয়েছে।
সুতরাং বর্তমানে হাজার হাজার মতবাদ বাজারে প্রোমোট হলেও আমাদেরকে বুঝতে হবে প্রতিটা আমলের গোড়া কোথায়? যেই আলেম বক্তৃতা দিচ্ছেন, তার এলেমের সোর্স কি। তার ওস্তাদ কে বা কারা? তাদের জ্ঞ্যানের উৎস কোথায়!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:২৫