somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুবাই টু ওমান ভ্রমণ (ছবিব্লগ)

২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওমান মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশী বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশের অধিকারী দেশ। সফল সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে ওমান।আকর্ষণীয় পর্যটন স্থলসমূহের মধ্যে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি, সৈকত, প্রাচীন বাজার, প্রাচীন বসতি, পাহাড়ে আরোহন কচ্ছপ ডলফিন ও পাখি দর্শন। যার আকর্ষণে প্রতি বছর ওমানে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়। পাভেল ভাই যাওয়ার প্রস্তাব দিতেই মনে হল এত কিছু দেখার লোভ সামলাই কী করে?
আমরা তেরো জন দুবাই থেকে চারটা গাড়িতে করে ১৪০ কিমি বেগে ছুটে চলছি শারজা(ইউএই স্টেট)হয়ে আজমানের (ইউএই স্টেট) ভিতর দিয়ে ‘রাস আল খাইমা’(ইউএই স্টেট) হয়ে ওমান বর্ডারে দিকে। কোন দেশের মানুষ কেমন তার একটা ভাল ধারনা পাবেন ঐ দেশের ইমিগ্রেশন অফিসে যেয়ে। তারা খুব সহায়ক এবং খুব অমায়িক ব্যাবহার করছিলেন।আমরা বর্ডার পাস নিয়ে ওমানের ভিতর যেতেই চোখে পড়ল পাহাড়ের কোল ঘেসে সমুদ্রের নীল পানির আভা।
আমাদের গাড়ি সমুদ্রের তীর দিয়ে খাসাব সৈকত পানে অগ্রসর হতে লাগল। বিশাল সমুদ্র এসে থমকে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের পাদদেশে। অশান্ত ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে পাড়ের কাছে। পাহাড়ের বুক চিরে এঁকে-বেঁকে রাস্তা কেটে তৈরি করা হয়েছে ওমান সড়ক। কখনো পাহাড়ের শরীর বেয়ে চুড়ায় উঠছি আবার নিচে নামছি। আমাদের গাড়ি গুলা চলছে ধির বেগে, বেশ রোমাঞ্চকর অনুভুতি।পুরো রাস্তা আকাবাঁকা উচুনিচু। খাঁজে খাঁজে সাজানো পাহাড়ের শরীর। অদ্ভুত এক স্থাপত্য! কি অদ্ভুত তার নির্মাণ কৌশল! প্রকৃতির অপূর্ব সজ্জার কাছে মানুষের মুগ্ধ সমর্পন। দৃশ্যগুলো ভাষায় বর্ণনা করার চেয়ে ছবিতে তুলে ধরা অনেক সহজ। চলন্ত গাড়ি থেকে ঝটপট কিছু ছবি তুলে নিলাম।


[আঁকা বাঁকা রাস্তা]













ওমান বর্ডার থেকে ঘণ্টা খানিক ভিতরে আসার পর আমরা পোঁছালাম কাসাব পোর্টে। আগে থেকেই আমাদের ক্রুজ (ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা) ঠিক করা ছিল। ঝটপট ক্রুজে উঠে পরলাম।মাথার উপরে প্রখর রোদ। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত আরব সাগরে প্রবেশ করলাম। সাগরের পানিতে হিমেল হাওয়া মৃদু ঢেউ তুলছে তা দেখে মনের মাঝে আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। খুশিতে মন মাতোয়ারা হয়ে উঠছে। ঝিকিমিকি সূর্যের কিরণে সাগর বুকে যেন আলোর খেলা। মুক্ত ও সতেজ বাতাস পরবাসী জীবনের পরিশ্রান্ত জীবনকে বলে একটু জিরিয়ে নাও। আমরা আনন্দে ছবি তুলছি।


[নীল সমুদ্রের অপূর্ব রূপ]




সাগরের স্বচ্ছ টলটলে পানিতে আমাদের ক্রুজ ভেসে চলছে। দুপাশে পাহাড় মাঝ দিয়ে সাগরে ভাসছি। যেতে যেতে আমরা কিছু গ্রাম দেখছি। নাদিফি, কানাহা, মাক্লাব ,সেবি ,শ্যাম গ্রামগূলো দেখলাম। ১৫ থেকে ২০ টা করে বাড়ি হবে প্রত্যেক গ্রামে। মাছ ধরাই তাদের প্রধান কাজ। তাদের কোন ল্যান্ড এক্সেস নাই। প্রতেকেই নিজেদের স্পিড বোর্ডে চলাফেরা করে। ওমান সরকার থেকে বিদ্যুৎ এবং বিশুদ্ধ পানি গ্রামে সরবরাহ করে থাকে।


[নীল সমুদ্রের অপূর্ব রূপ]














টেলিগ্রাফ আইল্যান্ডে আমাদের ক্রুজ লাঞ্ছের জন্য থেমে গেল। এই আইল্যান্ডের পানি গাঢ় নীল, স্বচ্ছ, এতটাই স্বচ্ছ যে পানির নিচে মাছের ঝাক দেখা যায়।


[স্বচ্ছ পানিতে মাছের ঝাঁক]



[ফারহান ভাই এর সাথে আমাদের নায়ক]


[আশরাফ ভাই-ভাবি]


[চুপচাপ ------------ ফাহিম ভাই , দুজন দুদিক থেকে ছবি তুলতে ব্যাস্ত]


[আড্ডায় মগ্ন]


[তোহা ভাই এবং নোবেল ভাই]


[আপু দ্বয় ]


[ছোটো পরি তাশফিয়া ]


[ডলফিন গুলো ঘুরছে আর নিজেদের মধ্যে টিকটিক করে ভাবের আদান প্রদান করছে।




[মিশেল ভাইয়ের সাথে আমি]


[রোম্যান্টিক জুটি রাশেদ ভাই ভাবি]

শুরু হলো সমুদ্রে দাপাদাপি। গায়ের লোনা ধুয়ে খাওয়া দাওয়া। তারপরই আবার নব উদ্যোমে আড্ডা। এদিকে ক্রুজের ভেতর শুরু হয়েছে পাঁচমিশালী গানের আসর। যে যেই গান পারে সে সেই গান গাইছে। ঢেওয়ের তালে তালে আমরা গানে মেতে উঠলাম। পাভেল ভাই, মিশেল ভাই,নোবেল ভাই, তোহা ভাই, নওরিন আপু, শারিফ ভাই, তাশফিয়া, আশরাফ ভাই-ভাবি, রাশেদ ভাই-ভাবি, ফারহান ভাই , ফাহিম ভাইয়ের গানের সুরের মুর্ছনায় কখন যে বিকেল হয়ে গেল টের পেলাম না।


[সমুদ্রে লাফালাফি, ঝাপাঝাপি]


[সমুদ্রে লাফালাফি, ঝাপাঝাপি]


[সমুদ্রে লাফালাফি, ঝাপাঝাপি]


[সমুদ্র স্নানে আমরা]


[সদা হাসিখুশি পাভেল ভাই। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা ট্যুর আয়োজন করার জন্য]




[পাহাড় জয়ের দুই নায়ক তোহা ভাই এবং শরিফ ভাই]

শেষ বিকালে আবারও পুরোপুরি সঁপে দিলাম সমুদ্রে। সমুদ্রে লাফালাফি, সাঁতার কাটা , ছবি তোলা উফ্, সে কী আনন্দ! সমুদ্রে লাফালাফি, ঝাঁপা-ঝাঁপি করে দিনটা বেশ ভালই কেটে গেল। ৬ ঘণ্টা সমুদ্রের বুকে কাটানোর পর জেটির দিকে ফিরতে শুরু করলাম।


[হরমুজ প্রণালী যা পশ্চিমের পারস্য উপসাগরকে পূর্বে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে। আরব উপদ্বীপকে ইরান থেকে পৃথক করেছে।


[পাহাড়ের ফাকে পাখির দল]


[গোধূলির শেষ বিকেল]

আজকের দিনটা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কিছু মুহূর্তের মধ্যে অন্যতম!! বিদায় পাহাড় বিদায় সমুদ্র। তবে চিরদিনের জন্য নয়।কথা দিয়ে আসলাম, সময় পেলে আমরা আবার আসব, বারবার আসব।

[ফটো ক্রেডিট : তোহা ভাই , ফারহান ভাই , পাভেল ভাই, মিশেল ভাই এবং আমি নিজেও কিছু তুলছিলাম :) ]
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×