somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষাংশঃএক ঝড়োবর্ষার রাতে,দুই মানব মানবী নিভৃতে।(১৮ + কিনা বলতে পারছিনা)

০৩ রা জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলের কথার পর........

মেয়ের কথাঃ
“বিয়ে করবে আমাকে ?” ওয়াক থু! বিয়ে ? কেন ? আমার সাথে ঐ নোংরা ব্যপারটা হয়ে গেছে বলে! এজন্য বিয়ে! ঘটনাটাকে বৈধতা দেওয়ার কি স্থুল চেষ্টা। কি এমন ঘটে গেছে? এটা ঠেকানোর কোন উপায় কি ছিলনা?কাল বিকালের দিকে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যখন এই অর্ধেক ভাঙ্গা ঘরে আশ্রয় নিই ,তখনি কি আমি এই ভয়ই করিনি? যে ভয় প্রতিটি মেয়ে করে থাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে। যে ভয় তাদেরকে শুধু দৃষ্টি থেকে মানুষ আর পশুর মধ্যে তফাত করতে শিখায়।

আমি কি প্রথমেই দেখিনি আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল ছেলেটা প্রথম থেকেই। ঐ দৃষ্টিতো আমি চিনি। কিশোরী হওয়ার পর থেকেই যখন বাড়তে শুরু করেছে আমার শরীর তখন থেকেই আমি চিনি ঐ দৃস্টি। তখন থেকেই আমার যত চেষ্টা নিজেকে ওই দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তাই ভয় হয়েছিল খুব। কিন্তু ভয় থেকেই সৃষ্টি হয় সাহস। আর সাহস করেই আমি তাই বসে পরলাম এক কোনে। খরের একটা গাদার উপর। যেখানে তুমি থাকবে চারপাশটা ভাল করে লক্ষ্য করে নাও মা বলতেন । দেখ প্রথম দেখায় যেমন ভেবেছিলে সব হয়তো তেমন নয়। কিছুক্ষন ছেলেটাকে লক্ষ্য করেই বুঝতে পারলাম , প্রথম দৃষ্টিতে একটু ভুল হয়েছিল । ছেলেটাকে খারাপ মনে হয়েছিল ,এখন মনে হচ্ছে না খারাপ নয় ছেলেটা। মাথা নিচু করে বসে আছে। আমার দিকে মুখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছেনা।
ছেলেটার সাথে কথা বলা দরকার। এতে আমারি সুবিদা হয়। ছেলেরা অপরিচিত মেয়েদের নিয়ে যেভাবে ভাবে পরিচিত দের নিয়ে সেভাবে নয়। কিন্তু কথা বলার জন্য ছেলেটা কি আগে এগিয়ে আসা উচিত নয়?

আমি আগবারিয়ে কথা বলব? কখনও নয় । কিন্তু লোকটা তাকাচ্ছেনা কেন এদিকে? সেই যে মাথা নিচু করেছে, প্রথম বার চোখাচোখি হওয়ার পরথেকে- আরে বাবা এরকমতো হতেই পারে। ভুল ! সবারি তো হয়। তাই বলে মাথা হাটুর নিচে গুজে রাখতে হবে?
এতখনে রাগ হচ্ছে লোকটার প্রতি। অসহ্য! মুর্তির মত বসে আছে হাটুর নিচে মাথা দিয়ে। মাথায় আবার টুপটুপ করে বৃষ্টির ফোটা পরছে কিছুখন পরপর। একটু সরে বস্লেই পারে । কিন্তু নড়ছেনা । সড়েবস্লে আমার কাছাকাছি হয়ে যাবে এজন্যি বোধহয়। পাগল নাকি লোকটা !

কথা বলার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রাগ উঠে গেল লোকটার উপর। তাই যখন প্রথম বার এসে লোকটা বলল ,আমি শামিম,তখন রাগ থামাতে পারিনি। ৫ ঘন্টা একসাথে থাকার পর ,হ্যালো, আমি শামিম! আমার দৃষ্টি কঠিন হয়ে গেল। কেমন অস্বস্তিতে পরে গেল লোকটা। হাসি পেল আমার । সম্ভবত আমার দৃষ্টি ছিল অগ্নি দৃষ্টি!! কিন্তু এমন মিনমিনে হয় কেঊ? লাজুক নাকি লোকটা ? লুকিয়ে মেয়েদের বুক দেখা ছাড়া সামনাসাম্নি কছু বলতে ভয় পায়!

আর কিছুক্ষন কাটতেই বুঝলাম ক্ষিদে পেয়েছে আমার । কিছু খাওয়া দরকার। ভ্যানিটি ব্যাগে বিস্কিট আছে ,পানিও আছে, অসুবিদে হবে না । কিন্তু একা একা খাওয়া কি ঠিক হবে ? শামিম মিয়াও আটকে আছে আমারি মত ,বলব আমার সাথে খাওয়ার জন্য?

মনে হয় ভালই খিদে পেয়েছিল ,একবার বলতেই এসে পড়ল। কিন্তু এক কামর দিয়েই কেমন বিকৃত করে ফেল্ল মুখ-জ্বর হয়েছে নাকি। জ্বরের সময় খাবার বিস্বাদ লাগে। বৃষ্টির ঠান্ডা পানি মনে হয় সহ্য করতে পারেনি। তা পারবে কেন ! দেখলেই বুঝা যায় কেমন পুতুপুতু টাইপ ছেলে।

জ্বরের ঘোরে যখন ছেলেটা কাত্রাচ্ছিল ,দেখে কেমন মায়া হল! আহারে বেচারা। হয়তো বৃষ্টিতেই ভিজেনি এর আগে। আমার কেমন লাগ্লো । ছেলেটার মাথা কোলে নিয়ে জলপট্টি দিতে থাকলাম –আমার রুমাল্টা ভিজিয়ে। এখন মনেহচ্ছে এটাই সবচেয়ে দুর্বল অংশ ছিল রাতের। কিন্তু কিইবা করার ছিল আমার আক্রোশ চেপে ভাবলাম আমি। একজন মানুষ রোগে কাতরাচ্ছে – দৃশ্যটা যেকোন মেয়ের জন্যি কঠিন;যারা সেবা করতে জানে।
সেবা করার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই ঘটল যখন আমি ওর মাথা কোলে নিলাম । কেমন যেন শিরশিরে একটা অনুভুতি। কেন এমন হল ? জানি না। লোকটি পরুষ বলেই কি ? কামবোধ?

জ্বর যখন ছেড়েগেল আস্তে আস্তে তখন স্বস্তিবোধ করলাম। তারমানে আমি লোকটার জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম? উদ্বেগ কেটে যেতেই আমার কেমন যেন আনন্দ হল- নিজের সেবায় কাওকে সুস্থ করে তুলার আনন্দ। যদিও তেমন কিছু নয় তবুও, যা করার আমিইতো করেছি !!

চোখ খুলেই লোকটা ধন্যবাদ জাতিয় কিছু বলবে হয়তো, ভেবেছিলাম আমি । হয়তো কেন নিশ্চয় বলবে। কিন্তু চোখ খুলে কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল লোকটা আমারদিকে। এখুনি বলবে, ভাবলাম আমি। কিন্তু না , হঠাতই লোকটা জড়িয়ে ধরল আমাকে। আমি বাধাদিলাম কিন্তু মনে হল যতটা না দিলেই নয় ততটাই যেন! মানে কি? আমি কি চাইছিলাম এমন হোক , অচেনা লোকটি জরিয়ে ধরুক আমাকে। চুমোখাক আমার ঠোঁটে,বুকে? তাহলে ? এমন হলো কেন?
যখন শেষ হলো তখন প্রবল রাগ হলো নিজের উপর। নিজেকে যখন ক্ষমা করার চেষ্টাকরছি তখুনি কানে এল কথাটা ,বিয়ে করবে আমাকে?

চোখে আগুন থাকলে পুরিয়ে ফেলতাম আমি লোকটাকে। বিয়ে? যদি আমাদের মধ্যে না হত কিছু তাহলে কি লোকটা বলতো কখনো বিয়েরকথা? কই আমার মাথায়তো বিয়ের কথা একবারও আসেনি। চুমোর বদলে পালটা চুমো কি আমিও দেইনি?এখন এই মুহুর্তে ,ঘটে যাওয়া ঘটনা কে অপরাধ বলেও মনে হচ্ছে না আমার । এটাতো দুর্ঘটনার মতই। নাকি?

আমি কেন গ্রহন করবো এই করুনামাখা বিয়ের প্রস্তাব?কেন? আমি আমার মনের সবটুকু শক্তি আর সাহস সঞ্চয় করে তাকালাম লোকটার দিকে। ওর মুখে কেমন একটা অপরাধবোধ! কেন ? আমারতো নেই!

এক ঝড়োবর্ষার রাতে দুই যুবক-যুবতি এক মুহুর্তের জন্য কি করেছে তার জন্য নিশ্চয় পৃথিবী থেমে নেই। কাজটা এমন কোন অবৈধ কাজও নয় যে বিয়ে করে একে বৈধতা দিতে হবে! কি হয় যদি এই অপরিচিত যুবক আমার অপরিচিতই থেকে যায় সারাজীবন। আমার পৃথিবীকি থেমে যাবে!? মনেতো হয় না।
নাহ।তড়িত সিদ্ধান্ত নিলাম আমি, আর কোন কথা নয়।এখানে আমি আর কিছুই ফেলে যাবনা! এমনকি আমার নামটাও নয়!!
***************
এক হতবিহ্বল যুবককে পেছনে ফেলে যখন একটা মেয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভাঙ্গা ঘরটা থেকে বাইরে বেরিয়ে এল তখন ঝড় বৃষ্টি থেমে গেছে;আকাশে হাল্কা সাদা মেঘ চিরে সোনালী রোদ এসে পরছে রাস্তায়।এই রোদের তীব্রতায় হয়তো রাস্তার কাদা শুকায় না কিন্তু এর আলোয় পথচলা যায়।
সেই আলোতেই মেয়েটি এগিয়ে চলছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৫
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×