somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক মসজিদে লেখা থাকে ‘লাল বাতি জ্বললে নামাজ পড়া নিষেধ’ এরকম লেখা কি ইসলাম অনুমোদন করে?

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উত্তরঃ’লাল বাতি জ্বলাকালে সুন্নতের নিয়ত করবেন না’, ‘লাল বাতি জ্বললে নামাজ পড়া নিষেধ’_ এ জাতীয় নিষেধাজ্ঞামূলক লেখা কিছু মসজিদে ঠিক লাল বাতির নিচে দেখা যায়। প্রশ্ন হলো, লাল বাতি জ্বালিয়ে সুন্নত পড়তে, নামাজ আদায় করতে নিষেধ করার ওই লেখা কি ধর্ম ও শরিয়তসম্মত বা কোরআন-হাদিস সমর্থিত? নাকি ধর্ম ও শরিয়ত-অসম্মত, কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক? আগে ফজরের পর নিষিদ্ধ সময়ে কেউ নামাজ পড়তে চাইলে সচেতন নামাজিরা একে অন্যকে নিষেধ করতেন। বর্তমানে মসজিদের ভেতরে আগের মতো নিষিদ্ধ সময়ের নিষেধাজ্ঞা হিসেবে নয়, প্রতি ওয়াক্তেই (তবে ফজরের ওয়াক্ত ছাড়া) ফরজ নামাজের পাঁচ মিনিট আগে সুন্নত নামাজ না পড়ার নিষেধাজ্ঞা হিসেবে লাল বাতি জ্বালানো হয়। ওয়াক্তমতো নামাজ আদায় করা যেমন ধর্মীয় দায়িত্ব, আবার নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকাও ধর্মীয় দায়িত্ব। আসলে ধর্ম হচ্ছে দুটি বিষয়ের সমষ্টি_ একটি হচ্ছে পালন করা, অন্যটি হলো বর্জন করা। শুধু পালন করা যেমন ধর্ম নয়, কেবল বর্জন করাও ধর্ম নয়। ইমানদারের জীবনে এ দুটিই থাকতে হবে। জেনে বা না জেনে নিষিদ্ধ সময়ে কেউ নামাজের নিয়ত করলে তাকে বারণ করাও ধর্মীয় দায়িত্ব। তাই বলে ফরজ নামাজের পাঁচ মিনিট আগে সুন্নত নামাজ পড়তে নিষেধ করাও কি ধর্মীয় দায়িত্ব

সূরা বাকারার ১১৪ নম্বর আয়াতে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদগুলোতে আল্লাহর নাম নিতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে?’ আল্লাহর নাম নিতে বাধা দেওয়া মানে কী? এর মানে হচ্ছে সব ধরনের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও তাসবিহ আদায়ে নিষেধ করা, বাধা দেওয়া, মসজিদে গমন করতে বাধা দেওয়া, মসজিদে হট্টগোল করা অথবা মসজিদের আশপাশে আওয়াজ, গান-বাজনা করে মুসলি্লদের নামাজ ও তেলাওয়াতে বাধা দেওয়ার যত পন্থা হতে পারে_ সবই হারাম। একইভাবে মসজিদে নামাজির সংখ্যা যাতে হ্রাস পায় সেই লক্ষ্যে পরিচালিত সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজকর্ম এবং পদক্ষেপও হারাম। নেক সুরতে হলেও বর্তমানে যেসব মসজিদে লাল বাতি জ্বালিয়ে সুন্নত নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়, এ নিষেধ কি নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়ার আওতাভুক্ত নয়? ফরজ নামাজের জামাতের আগে লাল বাতি জ্বালিয়ে সুন্নত নামাজ পড়তে নিষেধ করার পদ্ধতি যে বা যারা চালু করেছেন বা এখনও করছেন তারা কি বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখেছেন?

এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা জরুরি, কোরআন ও হাদিসে নামাজের নিষিদ্ধ সময় ছাড়াও কোন কোন সময়ে (উদাহরণ_ জুমার খুতবা চলাকালে, ফরজ নামাজের ইকামত দেওয়া হলে) সুন্নত বা নফল নামাজের নিয়ত করতে নিষেধ করা হয়েছে_ এ রকম সুস্পষ্ট নিষেধের উল্লেখ ছাড়া মনগড়া যেনতেন কারণে নামাজের নিয়ত করতে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার কি কারও আছে? ফরজ নামাজের জামাতের পাঁচ মিনিট আগে সুন্নত নামাজের নিয়ত করা যাবে না, এ মর্মে কি কোনো বর্ণনা বা সমর্থন কোথাও আছে? কোরআন-হাদিসের কোথাও কি এ জাতীয় নিষেধের তথ্য পাওয়া যাবে? কোরআনের বর্ণনার সঙ্গে বিষয়টি কি সাংঘর্ষিক নয়? বুখারি শরিফে বর্ণিত হাদিস হচ্ছে, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেয়।’ (সালাত অধ্যায়, হাদিস নম্বর-৪৩১)। হাদিসের আলোকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় (অসুস্থ-অপারগ বা শ্রান্ত-ক্লান্ত হলে ভিন্ন কথা) কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে আগে নামাজ পড়া এবং নামাজের শেষে বসাই ধর্মের নিয়ম বা নির্দেশ। লাল বাতি যখন জ্বলে অথচ ফরজ নামাজের ইকামতও হচ্ছে না তখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে নামাজ না পড়ে বসতে বাধ্য হওয়া কি হাদিসের বর্ণনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক নয়? দুই মিনিট সময়ই তো হাদিসের ওপর আমল করার জন্য যথেষ্ট।

লাল বাতি জ্বলাকালে জামাত শুরু হওয়ার আগে ২-৩ মিনিট সময় থাকতে কেউ নামাজের নিয়ত করলে অতি উৎসাহী হয়ে ‘লাল বাতি জ্বলে, দেখেন না’ বা ‘লাল বাতি জ্বলে, তারপরও তিনি নিয়ত করছেন’_ এ জাতীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকা দরকার। শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামা, মুফতি-ফকিহ, খতিব, ইমাম, পীর-মাশায়েখ, মসজিদ কমিটির প্রধানসহ সর্বস্তর ও সব পর্যায়ের ধর্মীয় খেদমতের সঙ্গে জড়িত এবং যারা ধর্ম যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট সবার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ_ ধর্মের কথা ধর্মীয় মূলনীতি বজায় রেখে বলুন এবং ধর্মীয় মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা পালন করুন। অত্যুক্তি নয় যে, কোরআন ও হাদিস থেকে জানতে চেষ্টা না করে আমরা এমন অনেক নেক আমল করছি, যাতে সওয়াব না হয়ে গোনাহ হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০০
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×