জেসমিন টুলী: দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ। নানা মহলে নির্বাচনটি বিশেষায়িত হচ্ছে অবাধ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ইত্যাদি শব্দে। আর জাতিকে এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে যিনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন, তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা জেসমিন টুলী। দায়িত্ব পাওয়ার পরই তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন জাতিকে একটি দৃশ্যমান ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেবেন।
তবে সর্বমহলে প্রশংসিত হলেও একটি আফসোস কাজ করছে জেসমিন টুলীর মনে। সেটা হলো, নির্বাচনের রাতের সহিংসতা। তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের ফল মেনে নেওয়ার মানসিকতা, ধৈর্য—এসব ক্ষেত্রে আমি পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। সেদিনের রাতের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাই আমার আফসোস।’
নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় রাত পৌনে ১০টার দিকে ফল ঘোষণায় বিলম্ব করা হচ্ছে—অভিযোগ এনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মন্জুর আলমের সমর্থকেরা বাইরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও ফলাফল ঘোষণার কেন্দ্র এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামের এলাকায় কর্মী-সমর্থকসহ সভা করে নানা অভিযোগ করেন।
জেসমিন টুলী বলেন, ‘প্রার্থীরা তো সব কেন্দ্রের ফল পেয়ে গেছেন আগেই। তাঁদের কাছে তো প্রতিটি কেন্দ্রের ফলাফলের তালিকা রয়েছে। ফলাফল দেরিতে আসছে কেন? কেন্দ্রের ফলাফল পরিবর্তন হয়ে যাবে—এটা তাঁদের মনে আসবে কেন? ফল ঘোষণার তো একটা প্রক্রিয়া আছে। আমি তো ফোনে নিয়ে ফল ঘোষণা করতে পারব না।’
যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের ফলাফল মেনে নেওয়া-না নেওয়ার জন্য তিনি নিজেদের অর্থাৎ কমিশনের কিছু উদ্যোগের ঘাটতির কথাও উল্লেখ করলেন, ‘আমরা কেবল নির্বাচন এলেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলি, ডায়ালগ করি। এটা বছরব্যাপী করা দরকার। তাঁদের সঙ্গে বসা দরকার। তাঁদের ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়াটাও বোঝানো যাবে।’
বাইরে যখন সহিংসতা চলছিল, ভেতরে ফলাফল ঘোষণার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা এ সময় মাইকে হুংকার দিয়ে ওঠেন। তিনি উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছি। আপনারা আপনাদের কর্মীদের থামান। আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না। কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত দিনের পরিশ্রম আপনারা নষ্ট হতে দেবেন না।’
হ্যাঁ, জেসমিন টুলী জাতিসংঘের আমন্ত্রণে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নির্বাচন প্রশিক্ষক ছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হলেও সেখানে এ রকম নানামুখী চাপ নেই বলে তিনি জানান, কাজ করছেন কসোভোতে। তবে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্য যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
‘নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর সরকারের সদিচ্ছা।
এই নির্বাচনে সেটার কোনো অভাব ছিল না। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ও আমাদের নিজস্ব কর্মকর্তারা রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি তাঁদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, যে যে নীতিতে বিশ্বাস করুন না কেন, সেটার প্রতিফলন যেন কাজে না পড়ে,’ বললেন জেসমিন।
শনিবার যখন তাঁর এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছিল, তখনো তিনি নির্বাচন-উত্তর দাপ্তরিক কাজকর্ম সারছিলেন। গেজেট তৈরি, বিভিন্ন খাতের খরচাপাতির হিসাব ইত্যাদি...। এত বড় একটি কর্মযজ্ঞের পরও মুখে কোনো ক্লান্তির ছাপ নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব পাই, তখনই ঠিক করে ফেলেছিলাম নির্বাচনটা দৃশ্যমান করে তুলব। আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকবে। অবাধ তথ্যপ্রবাহে যেন কোনো ঘাটতি না থাকে। আমার এই কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পেরেছি।’
তবে এই নির্বাচন করতে তাঁকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। নানামুখী চাপ, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ...সবকিছু তিনি শক্ত হাতে সামাল দিয়েছেন। কখনো কঠোর, কখনো নমনীয় অথচ দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে গেছেন জেসমিন টুলী। তিনি জানান, মাঝি কতটা দক্ষ সেটা বোঝা যায় নদীতে ঝড় উঠলে। যেমন, নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযোগ করে বসলেন, ৫৫ হাজার ভোটারের ছবি নেই। ভোটার তালিকা প্রণয়ন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলার আশ্রয় নিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। জেসমিন টুলী বলেন, ‘এটা এখন বিচারাধীন বিষয়। মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
একই ব্যক্তিকে নির্বাচনের আগের দিন আটক করল পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে শেষপর্যন্ত সাকা মুক্ত হন। বিষয়টি সামাল দিলেন কীভাবে? ‘নির্বাচনের আগের দিন এ রকম একটি ঘটনা হলে ভোটারদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ত। পরিবেশটা অশান্ত হয়ে যেত। আমি ভোটারদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে পুলিশকে এই গ্রেপ্তার না করার জন্য বলেছিলাম।’
তবে এত সব ঘটনা থাকলেও নির্বাচনকে ঘিরে জেসমিন টুলী দলগুলোর যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান। ‘দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। নির্বাচনের নতুন আচরণবিধি তাঁরা মেনে চলেছেন। সবার সম্মিলিত চেষ্টা ও টিমওয়ার্কে আমরা এই নির্বাচন সম্পন্ন করেছি।’
প্রথম আলো থেকে সংগৃহীত
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন