somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হযরতের জন্য কী আমরা কিছু করতে পারি না? (রি-পোস্ট)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

******((স্টিকি না হওয়া পর্যন্ত রিপোস্ট চলতে থাকবে।))******
দয়া করে এই পোস্ট এ কেও কমেন্ট করবেন না। মুল পোষ্ট এ কমেন্ট করবেন। মুল লেখাটি এখানে
সকল আপডেট মুল লেখাতে পাবেন
হযরত আলী। খুব সাধারণ একজন মানুষ। নিু মধ্যবিত্ত। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেলস সুপারভাইজার পদে কাজ করতেন। সাদামাটা জীবনের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু সেই হযরতই এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, যা এখন আর আমাদের সমাজে খুব একটা দেখা যায় না। পরোপকার করতে গিয়ে নিজের জীবনটাই বিলিয়ে দিয়েছেন ছিনতাইকারীদের হাতে।

হ্যাঁ, পাঠকরা হয়তো অনেকেই জানেন। গত শুক্রবার সকালে মিরপুরের রাইনখোলায় প্রাত:ভ্রমণে বেড়োনো তিন নারীকে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন হযরত। ছিনতাইকারীরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান হযরত আলী।

আমাদের সমাজটা এখন এমন হয়ে গিয়েছে, কেউ কারো বিপদে এগিয়ে যাই না। ঘরে কিংবা বাইরে কেথাও না। অযথা ঝামেলা না জড়ানোর প্রবনতা আমাদের মধ্যে জেকে বসেছে। তাই রাস্তায় কেউ যদি আহত হয়ে কাতর চিৎকার করতে থাকে, কিংবা ছিনতাইকারী বা চোর-ডাকাতের কবলে পড়ে কেউ সহযোগীতার জন্য চিৎকার করে, আমরা কেউ সেদিকে ভ্র“ক্ষেপ করি না। আমরা সবার আগে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবি। নিজেকে নিরাপদ স্থানে রাখতে চাই।

এই যখন সমাজের অবস্থা, তখন একজন হযরত আলী, যিনি বিরল সাহসিকতার পরিচয় দিলেন, তা আসলেই অবিস্মরণীয়। অপরিচিত তিন নারীকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের প্রাণটাই সঁপে দিলেন। কিন্তু এমন একজন বীরের মর্যাদা আমরা কী দিলাম। শুক্রবারের পর আজ যখন লিখটি ততক্ষণে তিন দিন প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ হযরতের পাশে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়নি। না তার পরিবারের কাছেও। হযরত যেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেই প্রতিষ্ঠান (কল্লোল গ্র“প) থেকে কিছু খরচ দেওয়া হয়েছে। তা দিয়ে ঢাকা থেকে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়েছে। সঙ্গে কয়েকজন সহকর্মীও গিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্র তার দায় এড়িয়ে গেছে। রাষ্ট্র যন্ত্রের কেউ তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর কথা চিন্তাও করেনি।

পেশায় সাংবাদিক হওয়ায় গত শনিবার হযরতের ওপর একটি ফলোআপ রিপোর্ট করতে আমি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মিরপুরের রাইনখোলার বাসায় কেউ নেই। পরিবারের সদস্যরা সবাই সাতক্ষীরার সদর থানার বল্লী গ্রামে গিয়েছেন। মোবাইল ফোনে হযরতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তার স্ত্রী সালমা সুলতানা কাতর কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ওতো অন্যের উপকার করতে গিয়ে নিজের জীবন দিল এখন আমাদের কী হবে? আমার দুই সন্তানের কী হবে?’ এটি এমন একটি প্রশ্ন শুধু আমার নয়, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ভাষা হয়তো কারো জানা নেই। বিলাপ করছিলেন তিনি। বলছিলেন ‘ভাই আপনারা কিছু করেন। আমি এখন দুই সন্তানকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? কীভাবে সন্তানদের মানুষ করব।’

আমি নিজে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। কী করব আমি? কি করতে পারি। সাংবাদিকতা পেশায় থেকে এমন কত ঘটনার মুখোমুখি হই। সব পাশ কাটিয়ে রেখে আমাদের কাজ করতে হয়। কিন্তু হযরতের স্ত্রীর এই কাতর কণ্ঠ, তার দুই সন্তানের ভবিষ্যত, একটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়া স্বপ্ন আমাকে ভীষণ আলোড়িত করে। আমি ভাবি আসলেই কী হযরতের জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না? আমাদের কী কিছুই করার নেই? আমরা কী তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারি না/

খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, দুই সন্তানের জনক ছিলেন সাহসী এই বীর। বড় ছেলে প্রিন্স মণিপুর স্কুলে পড়ে। আর ছোট্ট মেয়ে প্রীতি পড়ছে মিরপুরের একটি কিন্ডার গার্টেনে নার্সারীতে। হযরত নিজে সাতক্ষীরা থেকে গ্রাজুয়েশন করার পর ঢাকায় চলে আসে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছে সে। সর্বশেষ গত ১২ বছর ধরে কাজ করছে কল্লোল গ্র“প অব ইন্ডাস্ট্রিজে।

কল্লোল গ্র“পের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তারা সাধ্য মতো চেষ্টা করছে হযরতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। চাকরীতে ঢোকার পর করা জীবন বীমা, প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সুবিধাগুলি তারা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। রাষ্ট্র হয়তো পাশে দাঁড়াচ্ছে না। কিন্তু আমরা কি হযরতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারি না? সবাই যদি একটু ভেবে দেখেন।

একটা বিষয় ভেবে দেখুন তো। আজকে আমি কিংবা আপনি, আমার কিংবা আপনার ভাই-বোন-আÍীয়-স্বজন কেউ এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে। কেউ কোনো বিপদে পড়তে পারে। যদি আমরা হযরতদের সম্মান ও তার পরিবারের পাশে না দাঁড়াই, হয়তো কেউ কোনো দিন আর কারো বিপদে পাশে দাঁড়াবে না এবং যখন আমরাই এমন বিপদের মুখোমুখি হবো।

একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। ক’দিন আগে শেওড়া পাড়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন। আধা ঘন্টা পড়ে ছিলেন রাস্তায়। কেউ তাকে ধরেনি। সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছে, আর উটকো ঝামেলা এড়াতে দুরে সরে গেছে। অবশেষে এক তরুণ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এমন ঘটনার মুখোমুখি আমরাও যে কখনো পড়বো না তার কোনো নিশ্চয়তা আছে কি?

অতএব আর বসে থাকা নয়, উঠে আসুন, ভাবুন একজন হযরতের পরিবারের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায়। আসুন আমরা আলোচনা করেই সেটা ঠিক করি।

কোন পদকে ভূষিত করা হবে তাকে?

কিছু প্রস্তাবনা:
১. হযরতের স্ত্রী ও সন্তানরা এখন গ্রামের বাড়িতে। যতদুর জানা গেছে, তার এক সন্তান মণিপুর স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। মেয়েটি নার্সারীতে পড়ে। তাদের পড়াশুনার নিশ্চয়তার জন্য কিছু করা যেতে পারে। ফ্রি পড়াশুনা কিংবা কেউ যদি ব্যয়ভার বহন করতে চায়।
২. একটা ফান্ড গঠন করে তার স্ত্রীর হাতে তুলে দিলে কিংবা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়া যেতে পারে।
৩. তার স্ত্রী শিক্ষিত হলে তার জন্য একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে।
৪. তার সাহসিকতার জন্য সরকারেরর পক্ষ থেকে স্বীকৃতিস্বরূপ কিছু করার জন্য সরকারকে চাপ দেওয়া যেতে পারে।
৫. পরিবেরর সহায়তায় সরকারী ফান্ড থেকে সহযোগিতা করার জন্য চাপ দেওয়া যেতে পারে।
৬. ফান্ড গঠনের ক্ষেত্রে সরাসরি তার পরিবারের অর্থাৎ তার স্ত্রীর হাতে সহযোগিতার অর্থ তুলে দেওয়া যেতে পারে কিংবা একবারেও অর্থ হস্তান্তর করা যেতে পারে।
৭. খুনিদের ধরতে পুলিশকে চাপের মধ্যে রাখা যেতে পারে।
৮. আরো কি কি করা যায় সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে

হযরতের জন্য ফেইসবুকে একটি পাতা খোলা হয়েছে আপনারা জয়েন করতে পারেন।

আপডেট-২
১. আজ সোমবার দুপুরে সময়ের সাহসী বীর হযরতের স্ত্রী সালমা সুলতানার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি দুই সন্তানসহ সাতক্ষীরার বল্লীর গ্রামের বাড়ীতে অবস্থান করছেন।
২. বুধবার হযরতের গ্রামের বাড়ীতে কুলখানি তথা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
৩. আগামী শুক্রবার তিনি ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
৪. আমি তাকে আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগের কথা জানিয়েছি। তিনি যথারীতি ফোনে তার পরিবারের অনিশ্চয়তা নিয়ে কান্নাকাটি করছেন। কিছু একটা করার জন্য আকুতি জানিয়েছেন।
৫. পূবালী ব্যাংকে তার একটি চলতি হিসাবের একাউন্ট রয়েছে। ভাবছি ওই একাউন্টের মাধ্যমেই তার জন্য সহযোগীতার কাজটি করা যায় কি না। (কারো কোনো পরামর্শ থাকলে জানাবেন।)


এখান থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×