somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিকথা: তিন গোয়েন্দা

১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"তিন গোয়েন্দা" পড়েনি এমন কোন মানুষ হয়ত বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সকল বাংলাদেশি কিশোর কিশোরির প্রিয় তিন চরিত্র কিশোর, মুসা, রবিন। কিশোরের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক আর যৌক্তিক চিন্তাচেতনা, মুসার অসীম সাহসিকতা আর সময়ে অসময়ে মজার কার্যকলাপ এবং শান্তশিষ্ট আমেরিকান ছেলে রবিনের তথ্য ভান্ডার একটা সময় অসাধারন লাগত। তবে তিন জনের মধ্যে কেন জানি মুসার প্রতি আমার আলাদা একটা সফ্‌ট কর্ণার ছিল এবং এখনো আছে। স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে তিন গোয়েন্দা নিয়ে গল্প হয়নি এমন কোন দিন গিয়েছে কিনা মনে পড়েনা। মনে মনে বিশ্বাস করতে ভালো লাগত "তিন গোয়েন্দা" বাস্তবে আছে, তারা আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় রকি বীচে থাকে। স্কুলে থাকতে একবার সেবা প্রকাশনীর কাজীদা বরাবর ছদ্ম নামে চিঠি পাঠিয়েছিলাম আমরা ক'জন মিলে। সেই চিঠিতে তিন গোয়েন্দাকে স্বশরীরে বাংলাদেশে নিয়ে আসার আবেদন করা হয়েছিল।

প্রথম তিন গোয়েন্দা পড়ি আমার ভাইয়ার মাধ্যমে। সে তখন তিন গোয়েন্দা ফেলে মাসুদ রানা, জেমস্‌ বন্ডদের দিকে ঝুঁকেছে। আর আমি ঠাকুর মার ঝুলী ফেলে ফেলুদা, শার্লক হোমস্‌, টিনটিন এদের নিয়ে মজে আছি। তিন গোয়েন্দা সিরিজের প্রথম পড়া বই "কাকাতুয়া রহস্য"। বইটা পড়ার পর অনুভূতি বলে বোঝানো যাবেনা। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া যেকোন শিশুর মনে দারুন ঝড় তুলে ফেলার মত বই সেটা। "কাকাতুয়া রহস্য" পড়ার পর আরো কয়েকটা বই গোগ্রাসে গিললাম। তারপর শুরু হলো "তিন গোয়েন্দা" কিনে দেওয়ার জন্য ঘ্যানর ঘ্যানর। অনেক পরিবারেই গল্পের বই কিনে দেওয়ার প্রতি কার্পন্যতা দেখা যায়। আমি অনেক ভাগ্যবতী কারণ ছোটবেলায় আমার বাবা বই মেলা উপলক্ষে আমাদের ভাইবোনদের একটা বাজেট দিতেন। সেবছর বইমেলায় গিয়ে সব টাকা দিয়ে শুধু তিন গোয়েন্দা কিনে ফেললাম। একসাথে ৫টা ভলিউম।

আমরা সব বন্ধুরা বই আদান প্রদান করে পড়তাম। সে বই এত বেশি হাত ঘুরত যে বইয়ের মূল মালিকের কাছে পৌঁছাতে ৬/৭ মাস লেগে যেত এবং সেই বইয়ের বিচিত্র রকমের পরিবর্তন হয়ে যেত......তিন গোয়েন্দা সিরিজের বইগুলো নিউজপ্রিন্টের ছিল তাই দেখা যেত হয়ত পেছনের মলাট গায়েব, ভিতরে অসংখ্য পাতা ভাঙ্গা, কোন কোন পাতা সুতা ছিঁড়ে চলে এসেছে, কেউ কেউ তার নিজের নাম লিখে রেখেছে, কেউ আবার পছন্দের অংশটুকু আন্ডারলাইন করে রেখেছে। বিরক্তির সীমা যখন ছাড়িয়ে গেল তখন একটা আইন করল আমাদের এক বান্ধবী "বইয়ের কোন ক্ষতি করলে মালিককে নতুন আরেকটি বই উপহার স্বরূপ কিনে দিতে হবে"। আইনটা কার্যকর হয়েছিল ভালোভাবেই। আমরা ছোটবেলায় আইন মেনে চলি.....যত বড় হই আইনকে ততই বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে ভালোবাসি।

স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে প্রায়ই তিন গোয়েন্দার কোন বই পেতাম। এটা একটা বাঁধা নিয়ম ছিল। একটা সময় ঘরে তিন গোয়েন্দার পাহাড় হয়ে গিয়েছিল। সেই গুলো আবার পাড়ার প্রতিবেশী ভাইবোনেরা কেউ কেউ নিয়ে আর ফেরত দিতনা। কে নিয়েছে মনে করতে পারতামনা বলে কারো কাছে চাইতেও লজ্জা লাগত। আমার অনেক বই এভাবেই হারিয়ে গেছে। ( একবার একটা ফেলুদা সমগ্র হারিয়ে সিরিয়াসভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম, যে নিয়েছে তাকে মনে মনে বোমা মেরে উড়িয়ে দিতেও খারাপ লাগছিলোনা, ঐ হতাশাজনক সময় কাটতে একই রকম আরেকটা ফেলুদা সমগ্র কিনা পর্যন্ত সময় লেগেছিল :) )

তিন গোয়েন্দা শুরু করেছিলাম হঠাৎ করে। প্রায় টানা ৫/৬ বছর তিন গোয়েন্দার সাথে লেগেছিলাম আঠার মত। একটা সময় তিন গোয়েন্দার প্রতি উদাসীন হয়ে যেতে লাগলাম। নতুন বইগুলোর সবকিছুই হাস্যকর মনে হত। মনে হত তিন গোয়েন্দা যেন খুব সহজভাবেই সমস্যা থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। তখন বুঝতে পারলাম আমি বড় হয়ে যাচ্ছি......আমার মস্তিষ্ক আরো জটিল কোন রহস্য চায়। তিন গোয়েন্দার "রত্নদানো", "অথৈ সাগর", "ছায়াশ্বাপদ", "রূপালী মাকড়সা", "রক্তচক্ষু", "পুরনো শত্রু", ছুটি", "মমি", "ইন্দ্রজাল" .....এসব বই পড়ে যেমন উত্তেজিত হয়েছি তেমনি বিরক্ত হয়েছি "রাত্রি ভয়ঙ্কর", "ভ্যাম্পায়ার দ্বীপ", "চাঁদের ছায়া" টাইপ বই পড়ে। একটা সময় তিন গোয়েন্দা পড়াই বাদ দিয়ে দিলাম। তবুও পুরনো বন্ধু বলে একটা ব্যাপারতো আছেই......তাই অনেক বড় হয়েও তিন গোয়েন্দা পড়েছি। এখনো মাঝে মাঝে কোন ছুটির দিনে "তিন গোয়েন্দার" পুরনো বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখি আর বারে বারে নস্টালজিক হয়ে যাই আর স্কুলের বন্ধুদের কথা, টিফিন পিরিয়ডের কথা, বইমেলায় সবার আগে সেবা প্রকাশনীর স্টলে ঢুঁ মারা সবকিছু একসাথে মনে পড়ে যায়। প্রতিটি বইয়ের পুরনো নিউজপ্রিন্টের পাতাগুলো যেন ছেলেবেলার একেকটা দিনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।



সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:৪৩
৫০টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×