কাপল ভাল না খারাপ কিছু বুঝতে পারছি না, জীবনের প্রথমবার চাকুরী হারালাম কোন নোটিশ বা পূর্ব শতর্কতা ছাড়া, ঠিক যেন ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ঘটে যাওয়া সুনামির মত। বায়িং হাউজের জবে সাধারণত লোক ছাটাই করা হয় মৌসুম শেষে, তাই মৌসুম শেষে শতর্ক ছিলাম বা ধরে নিয়েছিলাম যে কোন সময় নোটিশ আসতে পারে, কিন্তু মৌসুম শেষ সেই অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে অক্টোবর গেল নভেম্বর গেল ডিসেম্বরও পেরিয়ে গেল জানুয়ারীতেও যখন অফিস করতে লাগলাম তখন ধরে নিয়েছিলাম আরেকটি মৌসুম মনে হয় টিকেই গেলাম কিন্তু কপালে সইলো না। সারাদিন অফিস করলাম কিছু বুঝলাম না দুপুরের খানা, সন্ধ্যা বেলার টিফিনও টেবিলে আসল ঠিক মত, বেতনের চেকটিও পেলাম সন্ধ্যে বেলায় কিন্তু বিপত্তি ঘটল যখন ফ্যাননান্স ডাইরেক্টরকে বললাম স্যার আজকে আসি। একাউন্ট এ্যাসিটেন্সকে বলল আপনি একটু বাইরে যান, বুঝলাম না ঘটনা!!!
সু-মধুর গলায় বললেন ”-------সাহেব, আপনাকে কি করে বলি, চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে আগামী কাল থেকে আসতে না করেছে। আপনার আগামী দু’মাসের বেতন প্রতি মাসের ৩০তারিখে এসে নিয়ে যাবেন। আমিতো শুনে হতবাক- বললাম স্যার কিছুই তো বুঝলাম না, কোথায় কোন সমস্যা ঘটালাম যদি বলতেন অন্য কোথাও গেলে সেগুলো মেনে চলতাম। বেচারা অতি ভাল মানুষ, উনার কিছু করার নাই, --বলল দেখেন আমি তো বলতে পারব না- চেয়ারম্যান সাহেব এই বের হবার আগে বলে গেলেন আমি আপনাকে বললাম। আবার বসলাম সিটে, পিসি অন করলাম, ড্রয়ার থেকে বের করলাম নিজের পারসোনাল জিনিস পত্র- ডায়রি, ওয়েবক্যাম, পেন ড্রাইভ, চশমা ইত্যাদি যেগুলো আমার ব্যক্তিগত। খামে ঢুকলাম, পিসিতে বাচ্চার কিছু ছবি ছিল যা আমার পেন ড্রাইভে জায়গা নিচ্ছিল না, মুছেও ফেলতে পারছিলাম না কষ্টে, নিজের ছবি হলে ডিলিট করে দিতাম, বললাম স্যার আগামীকাল আমাকে একটু আসতে হবে, বাচ্চার কিছু ছবি আছে আর কমপিউটারের পাসওয়ার্ড সহ, সবকিছু তো আপনাদের বুঝিয়ে দিতে হবে- বলল ঠিক আছে।
পরের দিন অফিসে গেলাম ১১টার পর, সব ছবিগুলো কপি করে নিলাম পোর্টএবল ড্রাইভে, কমপিউটারের পার্সওয়ার্ড ফ্রি করে সিনিয়রের কাছে বললাম বড়ভাই আসি। অল্পকদিন হল এই অফিসে জয়েন মাত্র ৯মাস। সবাই প্রায় কাছা-কাছি বয়সের হওয়াতে বন্ধুও বটে। এমনকি সবার ঘরের কথাও জানে সবাই। তাই সবার কাছে বিদায় নিতে যেতে পারলাম না, আর জীবনের প্রথম চাকুরী হারালাম সেই কষ্টে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল, বিদায় নিতে গেলে কি বিপত্তি ঘটে সেই ভয়ে আর যাওয়া হলো না, নীচে আসলাম সাথে সাথে সিনিয়রও। হেসে হেসেই কথা শেষ করলাম দু’জনে কিন্তু যখন বললাম-- গতকালও ছিল আমার আজ থেকে ঢুকতে হলে সিকিউরিটির পারমিশন লাগবে। ভাবতেই গলা ধরে আসলো। চাকুরী লাইফ কি অদ্ভুদ ব্যপার, যেন ফুল বাগানের মালি, সযত্নে গোড়ে তোলা গাছের ফুলের সুবাস শুধু মালিকেরই, না বললেই বেরিয়ে আসতে হবে বিনা বাক্য ব্যয়ে স্বহস্তে রোপিত ফুলের বাগন থেকে। কোন রকম বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
বাসায় বউ আমার অতি আবেগপ্রুত, প্রেমের বিয়ে, আমার চাকুরী নাই শুনেই তো তার মন ভারী, কাউকে বলতেও পারবে না চাকুরী চলে গেছে। ওর চোখের কোনে দেখি জল চলে এসেছে- জিজ্ঞেস করলা এত ভাবনা কেন? চাকুরী তো আমি আগেও ছেড়েছি তো!!! বলল তখন তো আমরা দু’জন ছিলাম, জিনিস পত্রের দামও কম ছিল এখন তিন জন, সবকিছুই বেশী। মেয়েদের এই একটা সমস্যা তারা অনেক কিছু ভাবে। মজার ব্যপার হচ্ছে- বউবাচ্চা নিয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনের টিকেট বুকিং দিয়েছি সেই জানুয়ারীর ২৮ তারিখেই ফেব্রুয়ারী ১৯ থেকে ২৬ পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ই বিপত্তি বউ আমার কিছুতেই যাবে না যতদিন না চাকুরী পাচ্ছি, নিজে টিকেট ক্যানসেল করল আস দুপুরে। আরো মজার ব্যপার হল নিজের সামান্য পাটনারশিপ ব্যবসাটিও সেটেল করলাম এই জানুয়ারীতেই। তাই বউয়ের চিন্তা আরো বেশী, ব্যবসাও নাই চাকুরীও নাই।
আমার কাছে প্রথম দিন বেশ ভালই লাগছিল, কাজ কর্ম নাই কদিন আয়েশ করে ঘুমাতে পারব, সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক কষ্ট লাগে। কিন্তু রাতে দেখি আর ভাল লাগছে না, ব্লগে নাই, ফোনে নাই, মনে হচ্ছে যেন ছিন্ন হয়ে পরেছি পৃথিবী থেকে। কি আর করা বসে পরলাম ব্লগে পুরোনে মডেমে ঝাড়ফুক দিয়ে।