somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাকুরী নাইঃ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাপল ভাল না খারাপ কিছু বুঝতে পারছি না, জীবনের প্রথমবার চাকুরী হারালাম কোন নোটিশ বা পূর্ব শতর্কতা ছাড়া, ঠিক যেন ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ঘটে যাওয়া সুনামির মত। বায়িং হাউজের জবে সাধারণত লোক ছাটাই করা হয় মৌসুম শেষে, তাই মৌসুম শেষে শতর্ক ছিলাম বা ধরে নিয়েছিলাম যে কোন সময় নোটিশ আসতে পারে, কিন্তু মৌসুম শেষ সেই অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে অক্টোবর গেল নভেম্বর গেল ডিসেম্বরও পেরিয়ে গেল জানুয়ারীতেও যখন অফিস করতে লাগলাম তখন ধরে নিয়েছিলাম আরেকটি মৌসুম মনে হয় টিকেই গেলাম কিন্তু কপালে সইলো না। সারাদিন অফিস করলাম কিছু বুঝলাম না দুপুরের খানা, সন্ধ্যা বেলার টিফিনও টেবিলে আসল ঠিক মত, বেতনের চেকটিও পেলাম সন্ধ্যে বেলায় কিন্তু বিপত্তি ঘটল যখন ফ্যাননান্স ডাইরেক্টরকে বললাম স্যার আজকে আসি। একাউন্ট এ্যাসিটেন্সকে বলল আপনি একটু বাইরে যান, বুঝলাম না ঘটনা!!!

সু-মধুর গলায় বললেন ”-------সাহেব, আপনাকে কি করে বলি, চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে আগামী কাল থেকে আসতে না করেছে। আপনার আগামী দু’মাসের বেতন প্রতি মাসের ৩০তারিখে এসে নিয়ে যাবেন। আমিতো শুনে হতবাক- বললাম স্যার কিছুই তো বুঝলাম না, কোথায় কোন সমস্যা ঘটালাম যদি বলতেন অন্য কোথাও গেলে সেগুলো মেনে চলতাম। বেচারা অতি ভাল মানুষ, উনার কিছু করার নাই, --বলল দেখেন আমি তো বলতে পারব না- চেয়ারম্যান সাহেব এই বের হবার আগে বলে গেলেন আমি আপনাকে বললাম। আবার বসলাম সিটে, পিসি অন করলাম, ড্রয়ার থেকে বের করলাম নিজের পারসোনাল জিনিস পত্র- ডায়রি, ওয়েবক্যাম, পেন ড্রাইভ, চশমা ইত্যাদি যেগুলো আমার ব্যক্তিগত। খামে ঢুকলাম, পিসিতে বাচ্চার কিছু ছবি ছিল যা আমার পেন ড্রাইভে জায়গা নিচ্ছিল না, মুছেও ফেলতে পারছিলাম না কষ্টে, নিজের ছবি হলে ডিলিট করে দিতাম, বললাম স্যার আগামীকাল আমাকে একটু আসতে হবে, বাচ্চার কিছু ছবি আছে আর কমপিউটারের পাসওয়ার্ড সহ, সবকিছু তো আপনাদের বুঝিয়ে দিতে হবে- বলল ঠিক আছে।

পরের দিন অফিসে গেলাম ১১টার পর, সব ছবিগুলো কপি করে নিলাম পোর্টএবল ড্রাইভে, কমপিউটারের পার্সওয়ার্ড ফ্রি করে সিনিয়রের কাছে বললাম বড়ভাই আসি। অল্পকদিন হল এই অফিসে জয়েন মাত্র ৯মাস। সবাই প্রায় কাছা-কাছি বয়সের হওয়াতে বন্ধুও বটে। এমনকি সবার ঘরের কথাও জানে সবাই। তাই সবার কাছে বিদায় নিতে যেতে পারলাম না, আর জীবনের প্রথম চাকুরী হারালাম সেই কষ্টে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল, বিদায় নিতে গেলে কি বিপত্তি ঘটে সেই ভয়ে আর যাওয়া হলো না, নীচে আসলাম সাথে সাথে সিনিয়রও। হেসে হেসেই কথা শেষ করলাম দু’জনে কিন্তু যখন বললাম-- গতকালও ছিল আমার আজ থেকে ঢুকতে হলে সিকিউরিটির পারমিশন লাগবে। ভাবতেই গলা ধরে আসলো। চাকুরী লাইফ কি অদ্ভুদ ব্যপার, যেন ফুল বাগানের মালি, সযত্নে গোড়ে তোলা গাছের ফুলের সুবাস শুধু মালিকেরই, না বললেই বেরিয়ে আসতে হবে বিনা বাক্য ব্যয়ে স্বহস্তে রোপিত ফুলের বাগন থেকে। কোন রকম বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

বাসায় বউ আমার অতি আবেগপ্রুত, প্রেমের বিয়ে, আমার চাকুরী নাই শুনেই তো তার মন ভারী, কাউকে বলতেও পারবে না চাকুরী চলে গেছে। ওর চোখের কোনে দেখি জল চলে এসেছে- জিজ্ঞেস করলা এত ভাবনা কেন? চাকুরী তো আমি আগেও ছেড়েছি তো!!! বলল তখন তো আমরা দু’জন ছিলাম, জিনিস পত্রের দামও কম ছিল এখন তিন জন, সবকিছুই বেশী। মেয়েদের এই একটা সমস্যা তারা অনেক কিছু ভাবে। মজার ব্যপার হচ্ছে- বউবাচ্চা নিয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনের টিকেট বুকিং দিয়েছি সেই জানুয়ারীর ২৮ তারিখেই ফেব্রুয়ারী ১৯ থেকে ২৬ পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ই বিপত্তি বউ আমার কিছুতেই যাবে না যতদিন না চাকুরী পাচ্ছি, নিজে টিকেট ক্যানসেল করল আস দুপুরে। আরো মজার ব্যপার হল নিজের সামান্য পাটনারশিপ ব্যবসাটিও সেটেল করলাম এই জানুয়ারীতেই। তাই বউয়ের চিন্তা আরো বেশী, ব্যবসাও নাই চাকুরীও নাই।

আমার কাছে প্রথম দিন বেশ ভালই লাগছিল, কাজ কর্ম নাই কদিন আয়েশ করে ঘুমাতে পারব, সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক কষ্ট লাগে। কিন্তু রাতে দেখি আর ভাল লাগছে না, ব্লগে নাই, ফোনে নাই, মনে হচ্ছে যেন ছিন্ন হয়ে পরেছি পৃথিবী থেকে। কি আর করা বসে পরলাম ব্লগে পুরোনে মডেমে ঝাড়ফুক দিয়ে।
২৬টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×