somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাথার ভেতর গহ্বর নিয়ে

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু কিছু সময় নিজেকে এতোটা অপরিচিত মনে হয় যে অবাক হয়ে যাই। মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিযঅর্ডার এর রোগি বলে মনে হয়- যেন নিজের ভেতরে অপরিচিত কতিপয় মানুষকে নিয়ে ঘুরছি। কিছু কিছু চিন্তায় ঘেন্না হয়, রাগ ওঠে, ভাবতে ভয় হয় - আমিই কি ভেবেছি এগুলো! অস্বীকার করি। ভিন্ন নামে, ভিন্ন পরিচয়ে বাঁচি। নিজের 'প্রকৃত' ব্যক্তিত্বকে নিষ্পাপ রাখি।

অবশ্য স্পেশাল স্নো-ফ্লেক বলতে কিছু নেই দুনিয়ায়, একা নই এক্ষেত্রে, বুঝি, তবু ভাবলে অবিশ্বাস হয়। এখনো মানতে শিখিনি যে বিশুদ্ধ ভালো বা খারাপ বলতে কেউ নেই দুনিয়ায়, আমরা সবাই সংমিশ্রণে সৃষ্ট জীব মাত্র। আমার গুরুজনেরা, সমবয়েসিরা, ছোটরা, সবাই। যে বালক ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সামাজিক নিয়মে গুডি গুড বয় হয়ে থাকতে ভালবাসে, সেও আমি, আর যে নিষিদ্ধ আনন্দে পাগল হয়ে বিকৃত মানসিকতা উপভোগ করে, নির্বিকারভাবে মন্দে মুক্তি খোঁজে- সেও আমিই। স্বীকার করি আর না করি। আমার এবং আমাদের একটি বিপরীত ঋণাত্মক সত্ত্বা বিদ্যমান। একে নফসে আম্মারাহ বলি, বা id বলি, বা 'আনন্দই ঈশ্বর' বলে চিল্লানো হেডোনিস্টিক মতবাদ বলি, দিনশেষে কনসেপ্ট সেই একই।

লুকিয়ে রাখি এই দিকটাকে।

কারণ বেঁচে থাকা একটা কঠিন জিনিস। এতসব জাগল করে চলা কি চাট্টিখানি কথা? আমার জানা দরকার নেই বিকৃতির কথা, আমি ডমিন্যান্ট প্রধান দিকটা দেখব, সেটা ভালো হলে সম্মান, খারাপ হলে চটকানা। এইভাবেই তো সমাজ চলে? সুখি সমাজের সিক্রেট এটা।

আসলে, ভালো কথা, সুখ কি জিনিস? আমি আমার জীবনের এখনো পর্যন্ত সবচে আনন্দময় সময় কাটাচ্ছিলাম যখন- তখন যদি জিজ্ঞেস করত কেউ- আচ্ছা, তুমি কি সুখি? আমি উত্তর দিতাম- কিজানি, আমি তো ঠিক অসুখি না, ভালই যাচ্ছে দিনকাল, কিন্তু সুখি? তা বলব না। আছি ভালই। কিন্তু অতটা ভালো না। 'সুখি' না।

কারণ আসলে আমাদের সুখের মাপকাঠি অনেক বেশি ওপরে সেট করা। সুখ হওয়া উচিত দুঃখের অনুপস্থিতি, কিন্তু না, তাকে আমরা নরমাল বলি, স্বাভাবিক বলি, সুখ বলি তখন - যখন নরমালের সাথে আরও বোনাসএকগাদা যোগ হয়!

তাই সুখ আমরা উপভোগ করি না, বরঞ্চ সেটা জমিয়ে রাখি দুঃখের সময় হা-হুতাশ করার জন্যে- ইস! আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম! কি যুগ ছিল! আহা, কি নস্টালজিয়া!

সুখের সিক্রেট হয়তো ব্যস্ততা এবং সেই ব্যস্ততা বজায় রাখার জন্যে প্রেরণার সমষ্টি। কারণ ব্যস্ত মানুষ আমার মতো ভোর পাঁচটার সময় উঠে ভাবতে বসবে না- সুখ কি জিনিস, বেঁচে আছি কেন, কেমন আছি! তারা কাজ করবে, এবং কাজের ফাঁকে যখন মুহূর্তের জন্যে জীবনের পর্যালোচনা করবে, তখন ভাববে- বাহ! ভালই তো আছি। আমি সুখি! তারপর কাজে ফিরে যাবে আবার। এটাই সুখ।

সুখ, কিংবা সুখের খোঁজ - আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। সামনে এগিয়ে যেতে প্রণোদিত করে। Driving force of life টাইপ জিনিস।

পড়ালেখা কেন করছি? শিখব, সুখ পাব। কিংবা চাকরি নেব, কামাব টাকা, তারপর সেটার উপযুক্ত ব্যবহার করে সুখ পাব। এটা কেন করছি, ওটা কেন করছি - সকল প্রশ্নকে সরলীকরণ করে এই এক জায়গায় আনা যায় - কারণ আমি সুখ চাই। মানব জাতির একমাত্র স্থির অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য এটা।

তবে আসি এমন একটা পরিস্থিতিতে, যেখানে একজন লোক সুখি। সে তার বর্তমান অবস্থান পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন বোধ করছে না। এটা কি পজিটিভ না নেগেটিভ?

ধরি, আমি বড় হয়েছি এমন পরিবেশে যেখানে একজন মানুষ আমার জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। আমি তাকে কেন্দ্র করে বড় হয়েছি। হয়তো আমার মা মারা গেছেন জন্মের পর, বাবার কাছে বড় হয়েছি। আমি ভেবেছি বাবার সব কষ্ট দূর করব- সেই প্লান নিয়ে প্রায় নিজের অজান্তেই ক্যারিয়ার আর লাইফ প্লানিং শুরু করে দিয়েছি।

কিংবা হয়তো আমার মা-বাবা নেই, একজন লাইফ-পার্টনার আছে, যে একইভাবে আমার কেন্দ্রবিন্দু। আচ্ছা। ধরা যাক, আমার বাবা, বা আমার সেই লাইফ পার্টনার, মারা গেল হঠাৎ করে। তখন?

আমি নিশ্চয়ই বড় একটা ধাক্কা খাব। নিজের জীবনকে নতুনভাবে ভেবে নতুন উদ্দেশ্য খোঁজার চেষ্টা করব, অর্থাৎ আমার বাকি কর্তব্য দায়িত্বগুলো পালন করব।

ধরি সেরকম কর্তব্য দায়িত্ব নেই আমার। আমার কোন ছোট ভাইবোন বা সন্তানসন্ততি নেই যাদের পেছনে খাটব। আমার একটা সুস্থিত আয়ের উৎস আছে, যাতে নিজের প্রয়োজন মিটে যাবে, আমি সেই খরচে সন্তুষ্টি নিয়ে জীবন যাপন করতে পারছি। কিন্তু আমি সারা জীবন প্লান করেছি আরেকজনের জন্যে, নিজের বেঁচে থাকায় সুখ দেখিনি, এখন সেই জন নেই, তাহলে?

পরের জন্যে বাঁচব? মানুষকে হেল্প করব? যদি সেই প্যাশন না থাকে? উৎসাহ না পাই? জোর করে তো লোকসেবা হয় না।

ধর্মের কারণে বাঁচব? বিশ্বাস আছে, মানি, কিন্তু অত কি জোরদার?

এভাবে আস্তে আস্তে কারণগুলো সরিয়ে নিয়ে ভেতরের হাড়গুলি প্রকাশ করলে আসলে বোঝা যায় যে সকল ক্রাইসিসের মাঝে কেন এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস প্রধান- কেন মানুষ বেঁচে থাকার কারণ হারিয়ে ফেললে পাগল হয়ে যায়- কেন আমরা নিজেদেরকে এরকম আপাতঃদৃষ্টিতে অর্থহীন জীবনব্যবস্থায় জড়িয়ে নিয়ে বেঁচে থাকছি। কারণ এরা বেঁচে থাকার উপযুক্ত কারণ না হলেও, ভাল অজুহাত।

সুতরাং থ্রি চিয়ার্স অ্যান্ড হালেলুইয়াহ ফর এভরি লিটল বন্ড ইন লাইফ, ফর এভরিথিং দ্যাট হার্টস আস অ্যান্ড এগস আস অন, অ্যান্ড লেটস আস ফরগেট দা হরর অ্যান্ড ড্রেড দ্যাট উই কল এক্সিস্টেন্স।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:১২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×