জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন,
ইসলামী বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার অধিকার কারও নেই। কারণ কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ইসলামী রাজনীতি করে থাকি। ওই নির্দেশনার আলোকেই নামাজ আদায় করে থাকি। তাছাড়া রাসূল (সা.) যে রাজনীতি করে গেছেন সেই রাজনীতির অনুসরণ করেই আমরা রাজনীতি করি। ফলে এই রাজনীতির ওপর আঘাতের অর্থ হলো ধর্মীয় অধিকার ও ইমানের ওপর আঘাতের শামিল। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী ধর্মভিত্তিক তথা ইসলামী রাজনীতি বন্ধের যে কথা বলেছেন, একথা বলার অধিকার তার নেই। একথা বলে তিনি সরকারকেই বিপদে ফেলেছেন বলে আমরা মনে করি। কারণ বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এ ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঘরে বসে থাকবে না। তারা তাদের ইমানের দাবি বাস্তবায়নে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে আসবে ইনশাল্লাহ। সব ইসলামী দলই একই ধরনের অনুভূতি রাখে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তারা এরই মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করেছে, করছে। তিনি বলেন, এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ চলছে। প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিয়ে তারা মাঠে নামবে। তবে আমরা আশা করি, দেশব্যাপী যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে, তাতে সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে এবং ধর্মভিত্তিক তথা ইসলামী রাজনীতি বন্ধের মতো গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকবে।
ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন,
এটা মুসলমানদের দেশ। আমরা এদেশে ইসলামী রাজনীতি নতুন করছি না। ইসলামী রাজনীতি বন্ধের অর্থই ইসলামী আদর্শ উত্খাত করা। কেননা ইসলামী রাজনীতি ইসলামেরই একটা অংশ। কোরআনে আছে, ‘যারা ইসলামের এক অংশ মানে আর আরেক অংশ মানে না তাদের জন্য দুনিয়াতেও আল্লাহর অভিশাপ এবং আখেরাতে কঠিন শাস্তি’। প্রকারান্তরে ইসলামের এক অংশকে অস্বীকার করা পুরো ইসলামকেই অস্বীকার করা। কাজেই ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ইসলামকে নিষিদ্ধ করার শামিল। ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণার পরে কোনো ইসলামপন্থী চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তাদের ওপর এ ঘোষণার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ফরজ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। একজন মুসলমানেরও জীবন থাকতে এ ঘোষণা বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। যারা মুসলমান নামধারী, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চান তারা প্রকৃতপক্ষে মুসলমান নন। এ সরকার ইসলামী রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে ইসলামের দুশমনের কাতারে চলে গেছে। এ সরকার মূলত এদেশ থেকে ইসলামকে উত্খাত করার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
তিনি বলেন, এ ইস্যুতে ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এক না হতে পারলেও নিজ নিজ কর্মসূচি দিয়ে যাবে। কোনো ইসলামী দল এ ঘোষণা মেনে নেবে না, যা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ এদেশে ইসলামী যে দলগুলো রাজনীতি করছে, তারা প্রত্যেকেই এর প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় আইনমন্ত্রীর নিজেরই পদত্যাগ করা উচিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৫ ফেব্রুয়ারি উলামা সম্মেলন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেও সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে পরে হরতাল, সারাদেশ থেকে লংমার্চসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দেন।
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন,
সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর এরকম অপরিণামদর্শী বক্তব্যের ফলে দেশ চরম অস্থিরতার দিকে ধাবিত হতে পারে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য আসলেই সরকারের বক্তব্য কি-না এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকার ভারতসহ যেসব রাষ্ট্রের তাঁবেদারি করছে ওইসব রাষ্ট্রেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিদ্যমান, অথচ সরকার দেশবাসীর মৌলিক অধিকারকে কেড়ে নিতে শুধু সংবিধানই লঙ্ঘন করছে না বরং আল্লাহ পাকের নির্দেশ ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করার ফরজ ইবাদত নিষিদ্ধ করতে সরাসরি আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। তিনি অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর ধৃষ্টতাপূর্ণ এ বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় দেশপ্রেমিক ইমানদার জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে কঠিন আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। যার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি বন্ধের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছি। তার দলের পক্ষ থেকে ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবে কর্মসূচি শুরু করেছি। বাংলাদেশের জনগণ যেমন ভোট দিয়ে এ সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে, তেমনি ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন,
আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। তারা কথা বলে একরকম আর কাজ করে আরেকরকম। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তারা ইসলামবিরোধী কিছু করবে না বললেও এখন ইসলামী রাজনীতি বন্ধের কথা বলে দলীয় ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। রাজনীতিকে তারা আদালতের ওপর চাপিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তিনি বলেন, ইসলামী রাজনীতি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ কাজ। আল্লাহর আইনবিরোধী কোনো রাজনীতি চলে না। কোরআনে ইসলামী রাজনীতির কথা আছে, রাসূল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনও এ রাজনীতি করেছেন, তাই এটা করতে হবে। এ রাজনীতি ব্যাহত করার অধিকার কারও নেই। মহাজোট তাদের পতন ডেকে আনার জন্যই এসব নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণার বিরুদ্ধে আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। কোনোক্রমেই এটা মানব না। আমরা নিজেরাও কর্মসূচি দিয়েছি, সম্মিলিতভাবেও দেয়া হবে। ১১ তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। মহাজোটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা সফল হবো ইনশাল্লাহ।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৩