সম্প্রতি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমরা মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মারা যাচ্ছে।
এরদোগান বলেন, ‘এসব অসহায়, নিরাশ্রয় দরিদ্র লোকদের প্রতি আমরা কি সহানুভূতিশীল হতে পারি? ধনী দেশগুলোর এসব লোকদের জন্য কোনো সমাধান থাকা উচিত নয় কি? তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেকেরই উচিত নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা।’
ইসলামপন্থী এরদোগানের নেতৃত্বে তুর্কি সরকার মানবতার কল্যাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে আসছে।
যিনি মানবেতর জীবন পার করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনিই তো বুজবেন এই সব হত দরিদ্র মানুষ গুলোর মনের অবস্থা , একজন লেবু বিক্রেতা এরদোগান কিভাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হলেন সেই গল্প পড়ুন ...............
রিসেপ তাইয়েব এরদোগান এক সময় রাস্তায় লেবু বিক্রি করতেন। তিনি এখন আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা। সমর্থকরা তাকে দেশের রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখে থাকেন।
সুলতান’ হিসেবে খ্যাত এরদোগানকে গাজী পার্কে কয়েক মাসের বিক্ষোভ সহ্য করতে হয়েছে। তবে এক দশকে তুরস্কের নজিরবিহীন প্রবৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাপী নন্দিত তিনি।
গত বছর তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একনায়ক নই, এটা আমার রক্তে নেই।’
তুরস্কের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং ধর্মপরায়ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তার সৃদঢ় সমর্থন রয়েছে, যারা তার শাসনে উন্নতি লাভ করেছেন।
দা ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের তুরস্ক বিষয়ক গবেষক সোনার ক্যাগাপ্তে বলেন, এরদোগানের অর্থনৈতিক রেকর্ড এবং কর্তৃত্ববাদী মজলুম হিসেবে তার ইমেজই তাকে প্রেসিডেন্ট পদে জয় এনে দেবে।
তুরস্কে কয়েক দশকের ঘনঘন সামরিক অভ্যুত্থান এবং দুর্বল জোট সরকারের পর স্থিতিশীল সরকার উপহার দেয়ার জন্য এরদোগানের প্রশংসা করা হয়।
তিনি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর লাগাম টেনে ধরেছেন। নতুন ব্রিজ, বিমানবন্দর অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি এক সময়ের তলাবিহীন তুরস্ককে শক্তিশালী বাজারে পরিণত করেছেন। তার শাসনামলে সাধারণ তুর্কিদের আয় তিনগুণ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরেছেন তিনি।
নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন এরদোগান। ইস্তাম্বুলের গাজী পার্কের উপরে অটোমান যুগের আদলে শপিং মল তৈরি করা হবে।
কয়েদি থেকে ক্ষমতায়
ইস্তাম্বুলের পার্শ্ববর্তী কাসিমপাশায় জন্ম নেয়া এরদোগানের বাবা ছিলেন একজন কোস্টগার্ড কর্মকর্তা।
কিশোর বয়সে রাস্তায় রুটি এবং লেবু বিক্রি করতেন এরদোগান।
তরুণ বয়সে ইসলামিক ইয়ুথ সংগঠনে যোগদান করেন তিনি। এ সংগঠনটি তুরস্কের কট্টর সেক্যুলার নীতির বিরোধিতা করে। তুরস্কের ক্ষমতাধর জেনারেলরা মসজিদ ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিশাল ব্যবধান তৈরি করে।
এক সময়ে আধা পেশাদার হিসেবে ফুটবল খেলোয়াড় এবং ব্যবসায় শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রিধারী এরদোগান ১৯৯৪ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি দেড় কোটি লোকের এ শহরটির ট্রাফিক জাম এবং বায়ু দূষণ রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
যখন তার ইসলামঘেঁষা দলকে নিষিদ্ধ করা হয় তখন বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এ সময় একটি ইসলামী কবিতা পাঠ করেন।
সেই কবিতাটি ছিল এরকম- ‘মসজিদ আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনার আমাদের বেয়নেট এবং ঈমানদাররা আমাদের সৈনিক।’
এই কবিতার মধ্যে ধর্মীয় উসকানির গন্ধ পায় সেক্যুলার শাসকরা।
তবে এরদোগান বারবারই এ কবিতা আবৃত্তি করেন।
২০০১ সালে এরদোগান এবং তার সহযোগী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল ইসলামঘেঁষা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) গঠন করেন। পরের বছরের নির্বাচনে দলটি ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। এরপর আরো দুটি সংসদ নির্বাচনেও জয় পায় একেপি।
দেশবাসী বিশাল বিশাল নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি বিরামহীন অংশ নেন। অসুস্থতাও তাকে থামাতে পারে না। নির্বাচনী প্রচারণার মাঝেই হয়তো স্থানীয় কোনো ফুটবল খেলায় মেতে ওঠেন তিনি।
তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে দেশে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ককে সদস্যপদ দিতে গড়িমসি করায় ক্ষুব্ধ এরদোগান বলেন, ইইউর সদস্যপদের জন্য তুরস্ক অনাদিকাল অপেক্ষা করবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে এরদোগান তুরস্কে সেক্যুলারদের প্রবর্তিত হিজাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেছেন। মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন তিনি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছেলেমেয়েদের সহ-অবস্থান নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
এরদোগান বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে ইসলামিক সংস্কৃতি এবং গণতন্ত্র একত্রে চলতে পারে না।’