শ্রদ্ধেয় খায়রুল আহসান ভাইয়ের "আসুন আমরা সবাই দর্শন চর্চায় উৎসাহিত হই - চমৎকার এ আহ্বান জানানোর জন্য ধন্যবাদ"- এই মন্তব্যটি পড়ে ভাবলাম এসম্বন্ধে তাকে কিছু কথা বলবো। আমি ব্লগে বহুদিন ধরেই একেবারে অনিয়মিত বলা যায়। তবু, তিনি যখন প্রথম ব্লগে আসেন, তার লেখা পড়ে বুঝেছিলাম যে, তিনি অবসর নেয়া একজন সেনা কর্মকর্তা। আর তার লেখা থেকে দু'টো জিনিস বুঝেোছিলাম:
১)তিনি একজন বিশ্বাসী মুসলিম!
২) পিতা-মাতার প্রতি তিনি খুব শ্রদ্ধাশীল!!
এই দু'টো বৈশিষ্ট্যই, আমার তাকে "শ্রদ্ধেয় খায়রুল আহসান" বলে সম্বোধন করার পেছনের কারণ। তার লেখা আমি খুব একটা পড়িনি। তবে ব্লগে আসলে যদি দেখি উনি কোন মন্তব্য করেছেন, তখন হয়তো একটু চোখ বুলাই। আজ আরেকজনের ব্লগে
তার ঐ মন্তব্য দেখে, সেটার নীচেই কিছু কথা টাইপ করতে শুরু করলাম। তারপর মনে হলো কথাগুলো বোধহয় সকল মুসলিমকেই জানানো উচিত, আর তাই তা পোস্ট আকারে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম:
যারা মুসলিম, তাদের জন্য "দর্শন" কথাটা শুনলে, একটু ভাববার বিষয় রয়েছে। আমি বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন ইসলামী স্কলারকে বলতে শুনেছি যে, বাগদাদের খলিফারা (হারুনুর রশীদ, মামুনুর রশীদ) যখন গ্রেকো-রোমানসহ পৃথিবীর তাবৎ দর্শনের তত্ত্ব ও তথ্য সম্বলিত বইগুলো wholesale তরজমা করিয়ে তাদের পাঠাগার ভরে তুললেন, ইসলামের ১২টা বাজার সূচনা সেখান থেকেই। এরপর অনেক বড় মাপের স্কলাররা সেই জঞ্জাল সাফ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। এদের ভিতর উল্লেখযোগ্য ছিলেন আবুল হাসান আল-আশারী এবং আবু হামিদ আল-গাজ্জালী (যাকে আমরা ইমাম গাজ্জালী বলে থাকি)। দ্বিতীয়জনের লেখা "তাহফুতুল ফালাসিফা" বা Incoherence of the Philosophers একটা বিশ্ব-মানের বই।
দর্শন যে subjective বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যাপার, objective বা নৈর্ব্যক্তিক নয় - এটুকু মনে রাখতে পারলেই হয়তো সমস্যাটা অনেক কম হতো। কিন্তু আমাদের মত বাংলাদেশের আম-জনতারা সেটা মনে রাখতে পারেন না! Science আর Philosophy of Science-এর পার্থক্য করতে না পেরে, আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নাস্তিকদের সংখ্যা geometric progression-এ বেড়ে চলেছে!
আমি এখানে দু'টো উদাহরণ দেবো।
প্রথমত ডারউইন যা বলেছিলেন, তা ছিল Philosophy of Science - অত্যন্ত ব্যক্তিগত কিছু অনুভব - কোন প্রমাণিত বা প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়। কিন্তু সাধারণভাবে সারা বিশ্ব এবং বিশেষভাবে বাংলাদেশে বহু মানুষ ডারউইনের লেখা পড়ে নাস্তিক হয়েছেন। এদের অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ডারউইন তত্ত্ব আজ obsolete - অথচ, এটা জানার জন্য জীববিজ্ঞানে PhD হবার দরকার নেই, খুব সাধারণ যুক্তিতেই বোঝা যায়। ডারউইন তত্ত্বের একবারে মূলে ছিল এই assumption যে, জীবন হচ্ছে geocentric [অর্থাৎ, accidentally এই পৃথিবীতেই প্রথম জীবনের সূচনা হয়েছে] - কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেনের primordial soup থেকে কাকতালীয়ভাবে জীবনের সূচনা ঘটেছে। কিন্তু এখন আমরা জানি যে, মহাশূন্য থেকে আসা উল্কাপিন্ডের টুকরার মাঝে জীবনের উপাদান পাওয়া গেছে। তা হলে কি দাঁড়ালো? ডারউইনের প্রথম assumption-টাই ভুল। তাহলে তার পরের অনুসিদ্ধান্তগুলো কি আর ধর্তব্যে আসে?? [শুধু সহজে বোঝানোর জন্য বলছি] এই ধরনের ব্যাপারের ভাষার equivalent হচ্ছে এমন: আপনি মনে করুন ইংরেজীতে একটা চিঠি লিখেছেন আমাকে, কিন্তু কোন কারণবশত আপনি ইংরেজী অক্ষরগুলো সঠিক শেখেন নি - আপনি যেটাকে 'A' মনে করেছেন, সেটা আসলে 'Z', আর আপনি যেটাকে 'B' জেনেছেন, সেটা আসলে 'K' - এভাবে আপনি ইংরেজী বর্ণমালাটাই ভুল শিখেছেন। আপনার ঐ চিঠির কোন অর্থ আছে? নেই, কারণ কেতাবী ভাষার foundation-ই হচ্ছে বর্ণমালা! সেটা ঠিক না থাকলে সামনে এগিয়ে যাওযার সুযোগ নেই! এই ব্যাপরে যাদের জানার আগ্রহ আছে তারা
The Birth of Planet Earth নামের এই ডক্যুমেনাটারিটা দেখতে পারেন:
দ্বিতীয় উদাহরণ হচ্ছে: Astro-Physics নিয়ে। আদার ব্যাপারী থেকে জাহাজের ব্যবসায়ী - সকলের মুখে এই বিষয়ের উপর লেখা যে বইটির কথা সবচেয়ে বেশী শোনা যায়, সেটা হচ্ছে Stephen Hawking-এর A Brief History of Time। এটার বিষয়বস্তুও কিছু ব্যক্তিগত প্রস্তাবনা, ধ্যান-ধারণা, তত্ত্ব - subjective বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু suggestions, যার বেশ কিছু বইটির এক সংস্করণ থেকে আরেক সংস্করণের মাঝেই বদলে গেছে - এগুলো সব-কিছু-ব্যাখ্যা-করা কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়! কিন্তু বহু মানুষের নাস্তিক হবার কারণ হিসেবে দেখা যাবে এইধরনের বইয়ের একটা বিরাট অবদান রয়েছে। অথচ [একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে বলছি] মহাবিশ্বের পরিণতি কি হবে, শুধু সেই নিয়ে সম্ভাবনার ত্ত্ত্ব ১৯৮২ সাল থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত তিনবার বদলেছে - প্রথমে ছিল Big Crunch, তারপর এলো Big Chill এখন চলছে Big Rip!
যাহোক, আমার কথা প্রায় শেষ। আমরা মুসলিমরা কৌতুহলবশত বা মহা-বিশ্বের মজার মজার সব তথ্য জানতে একটা বই পড়তেই পারি - তবে সবসময় মনে রাখবো যে, আমাদের মুসলিমত্বের মূলে রয়েছে এই বিশ্বাস যে, Revealed Truth বা অহী দ্ধারা আমাদের মহাবিশ্বর স্রষ্টা আমাদের যা জানিয়েছেন, সেটাই হচ্ছে Absolute Truth - এমন কি তা অনুধাবন করতে আমাদের যদি আরো ৫০০০ বছর লাগে তবুও। আর Acquired Truth, অর্থাৎ আমরা কষ্ট করে, গবেষণা করে যা শিখি বুঝি সেগুলো হচ্ছে relative truth বা আপেক্ষিক সত্য - আজ সত্য মনে হচ্ছে কাল তা নাও মনে হতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৫৪