somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডনের বৈঠক ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি: সমঝোতার সূচনা নাকি নতুন ফাঁদ?

১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নাকি পুরনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি? বিশ্লেষণ করুন এই ব্লগে—সমঝোতা, ইতিহাস, এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির সম্ভাব্য চিত্রপট।

বাংলাদেশের রাজনীতি আবারো একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৩ জুন, ২০২৫ – লন্ডনের ঐতিহাসিক ডরচেস্টার হোটেলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক শেষ হলো। বৈঠকের সময় নির্ধারিত ছিল দুই ঘণ্টা, কিন্তু এর প্রতিধ্বনি অনেক বেশি সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে বয়ে আনবে।
এই বৈঠককে ঘিরে দেশ-বিদেশে কৌতূহলের শেষ ছিল না। কফিশপ, টেলিভিশনের টকশো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবখানে ছিল শুধু এই আলোচনাই: কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এবং এর ফল কী হবে?

যদিও যৌথ বিবৃতি ছিল কূটনৈতিক ভাষায় মোড়া, কিন্তু আমরা যারা রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করি, তারা বুঝতে পারি—জলে কুমির নেই, কিন্তু ঢেউয়ের ধরণ বদলেছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির পক্ষ থেকে আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, ড. খলিলুর রহমানের মতো সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরাও, যিনি কিছুদিন আগেও বিএনপির রোষের শিকার ছিলেন। অথচ, আজ তিনিই বিএনপি নেতাদের পাশে বসে সংবাদ সম্মেলন করছেন।

এ দৃশ্য আমাদের একটি বিষয়ই ইঙ্গিত করে—পর্দার আড়ালে এমন কিছু সমঝোতা হয়েছে, যা এখনো প্রকাশ্যে না এলেও আগামী দিনের রাজনৈতিক চিত্রপটে বড় প্রভাব ফেলবে। তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গ, মামলা নিষ্পত্তির ইঙ্গিত, নির্বাচন আয়োজনের সময়—সবকিছু এক সুতোয় গাঁথা মনে হচ্ছে।

২০০৮ সালের ঘটনা কি ভুলে গেছি আমরা? সেবারও একটি সেনা-সমর্থিত সরকার চেষ্টা করেছিল রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে ‘কিংস পার্টি’ তৈরি করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বুঝেছিল, জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি কোনো টেকসই সমাধান নয়। ফলে তারা বাধ্য হয়েছিল মূল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় যেতে।

এবারও সেই পুরনো স্ক্রিপ্ট নতুন মুখে অভিনীত হচ্ছে। ড. ইউনূসের এনসিপি, জামায়াত এবং তথাকথিত নাগরিক রাজনীতি—সবই এক একটি ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। তার নিজের গড়া দলই এখন রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়, দুর্নীতিতে জর্জরিত এবং জনভিত্তিহীন। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে যতই শক্তিশালী হোন, বাংলাদেশের মাঠের রাজনীতিতে তার শক্তির ভিত্তি ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছিল।

ড. ইউনূস বুঝতে পেরেছেন, তার অবস্থান টেকসই নয়। দেশের প্রধান দুই পাওয়ার সেন্টার—বিএনপি এবং সেনাবাহিনী—যখন তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তখন তাঁর সামনে একটি মাত্র রাস্তা খোলা থাকে: সমঝোতা। আর এই সমঝোতাই সম্ভবত তাকে পরবর্তী সরকারের প্রতিশোধ ও আইনি ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে, অন্তত আপাতত।

তবে, এখনই বিজয়োল্লাস করার সময় নয়। বিএনপিকে বুঝতে হবে, বর্তমান সমঝোতা একটি কৌশলগত অর্জন মাত্র—চূড়ান্ত বিজয় নয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ এই চাপ ও আন্দোলন বজায় রাখা জরুরি।

যে এনসিপি ও জামায়াত ব্যর্থ হলেও, তারা এখনো হঠাৎ করে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আর ইতিহাস সাক্ষী, ড. ইউনূস একজন চতুর খেলোয়াড়। তাই বিএনপির উচিত হবে একদিকে সমঝোতার পথ খোলা রাখা, অন্যদিকে জনমত ও মাঠের সংগঠন দৃঢ় রাখা।

লন্ডনের বৈঠক একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা—এ নিয়ে সন্দেহের কোনো জায়গা নেই। কিন্তু এটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সূচনা নাকি একটি নতুন ধোঁয়াশার সূচনা—তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি কথা স্পষ্ট: রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে রাজনীতি হয় না, ইতিহাসও সেটা বারবার প্রমাণ করেছে।

সামনের দিনগুলো হবে গুরুত্বপূর্ণ—সমঝোতা, চ্যালেঞ্জ, চাপ এবং কৌশলের। আর এই প্রতিটি মুহূর্তে জনগণের চোখ থাকবে—এই আশায়, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল বাংলাদেশ গঠিত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৩১
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×