
—একটি ব্যক্তিগত ভ্রমণ ও আত্মউপলব্ধির গল্প
২৩ জুলাই ২০২৫, বুধবার। বিকেল সাড়ে চারটা। দীর্ঘ উনিশ দিন পর আমি ফিরে এলাম আমার নিজ গৃহে, সাভারে। ঘরের চেনা চার দেয়াল, পরিচিত বিছানা, জানালা দিয়ে আসা বিকেলের আলো—সবই যেন নতুন করে আপন হয়ে উঠলো।
এই উনিশ দিনের যাত্রা শুধুই ঘোরাঘুরি ছিল না। এটি ছিল আত্মীয়তা, আত্মদর্শন এবং বাস্তবতার এক অনন্য অভিজ্ঞতা। খুলনা আর বাগেরহাট—এই দুই জেলা ঘুরে আমি শুধু নতুন জায়গাই দেখিনি, দেখেছি মানুষের রূপ, সম্পর্কের নতুন ব্যঞ্জনা, সময়ের প্রভাব আর নিজের ভেতরের পরিবর্তনও।
খুলনাতে গিয়ে পরিচিতদের মধ্যে নতুন কিছু মানুষ পেয়েছি। আর বাগেরহাটে, চাচার বাড়িতে গিয়ে মনে হলো—এ যেন এক অজানা জগৎ। চাচী ছাড়া আর কাউকেই আগে চোখে দেখিনি। দুই ভাবী, তাদের ছেলে-মেয়ে—সবাই আমার কাছে অপরিচিত ছিল, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সম্পর্কের উষ্ণতায় সেই অচেনা দেয়াল কোথায় যেন গলেই গেল। কেটে গেল সময়, যেন বহুদিনের চেনা।
আরও আশ্চর্য হয়েছি অন্য এক দিক দেখে—কিছু অতি পরিচিত মানুষকে সামনে পেয়েও মনে হয়েছে, যেন দূরে কোথাও আছে তারা। পাশে বসে থেকেও অনুভব করেছি অনেক অনেক মাইলের দূরত্ব। সময় হয়তো মানুষকে শুধু বুড়িয়ে দেয় না, মাঝে মাঝে একে অন্যের ভেতর থেকেও সরিয়ে দেয়।
এই ভ্রমণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নতুন মানুষদের সাথে পরিচয়—ব্যবসায়িক এবং পারিবারিক, উভয় ক্ষেত্রেই। কেউ কেউ অল্প সময়ে আপন হয়ে উঠেছে, কেউ হয়তো চুপচাপ তাদের পৃথিবী থেকে আমার জানালাটা বন্ধ করে দিয়েছে। তবুও অভিজ্ঞতা জমেছে হৃদয়ের ডায়েরিতে।
এই যাত্রা শেষে একটা কথাই জোর দিয়ে বলতে পারি—
"বাড়িতে বসে থাকলে পথের সন্ধান পাওয়া যায় না। পথ খুঁজতে হলে রাস্তায় নামতে হয়।"
এই বাস্তবতা কোনো বইয়ের পাতায় নয়, আমি পেয়েছি বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোয়।
এই ভ্রমণ আমাকে শিখিয়েছে—মানুষ, সম্পর্ক, সময়—সবকিছুই প্রবাহমান। কিছুই স্থির নয়, এবং এই গতিময়তার ভেতর দিয়েই আমরা নিজের সাথে একটু একটু করে পরিচিত হই।
এই লেখাটা যখন লিখছি, তখনও খুলনার রেলস্টেশনের কোলাহল, বাগেরহাটের দরগাহ মোড়ের মালাই চায়ের স্বাদ আর পরিচয়ের উষ্ণতা যেন মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জীবনের পথে চলার এই ছুটে চলা কখনো কখনো ক্লান্তিকর হলেও, একসময় বুঝি—এটাই জীবন। চলতে চলতেই পথ ধরা দেয়, আর পথই আমাদের নিজের কাছে ফিরিয়ে দেয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


