
মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রথম দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্ব মানবাধিকার সনদ স্পষ্টভাবে বলছে– প্রত্যেকেরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, এবং নিরাপত্তার অধিকার আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, আমরা সেই নীতির পথ থেকে কতটা সরে যাচ্ছি।
দেশজুড়ে “তৌহিদি জনতা” নামে সংগঠিত কিছু গোষ্ঠী মাজার ভাঙচুর, মন্দির আক্রমণ, এমনকি কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন ও পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ অপরাধ করছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, মরদেহ উত্তোলন ও পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য আমাদের মানবিকতা ও আইনের শাসনের জন্য গভীর লজ্জাজনক। পুলিশ হাজারো অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করলেও ঘটনাস্থলে আগে থেকেই যদি শক্ত অবস্থান নেওয়া হতো, এতটা ভয়াবহতা হয়তো ঘটতো না।
একই সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় শক্তির কঠোরতা স্পষ্ট। ভিপি নূরের দলের মিছিল ভাঙতে পুলিশ-সেনা একযোগে তৎপর, ফলে তিনি হাসপাতালে। অথচ ধর্মীয় আবেগের আড়ালে সংগঠিত সন্ত্রাসে সেই তৎপরতা বিরল। এই দ্বৈত মানসিকতা প্রশ্ন তোলে—রাষ্ট্র কি সবার নিরাপত্তায় সমানভাবে দায়বদ্ধ?
শুধু রাজনীতি নয়, সংস্কৃতিচর্চাতেও অস্বস্তিকর হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানের আগে “ফ্যাসিবাদবিরোধী” স্লোগানে চাপ তৈরি হয়ে অনুষ্ঠান স্থগিত হওয়া সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অশনি সংকেত। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যখন ভয় ও চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সমাজের সৃজনশীল শক্তি ক্রমেই অবদমিত হয়ে পড়ে।
একজন মানবাধিকার কর্মীর চোখে এ দৃশ্য স্পষ্টতই একটি অধিকার সংকট। রাষ্ট্রের নীরবতা বা আংশিক নিষ্ক্রিয়তা মূলত মবকে সাহস জোগাচ্ছে। আইনের শাসন দুর্বল হলে, মানুষ ন্যায়ের আশ্বাস হারায়; আর সেটিই মব ন্যায়ের জন্ম দেয়।
আমরা ভুলে যাওয়া যাবে না—অধিকার সবার জন্য সমান। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, রাজনৈতিক কর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠন—যেই হোক, তার নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়। সন্ত্রাসের মুখে নীরব থাকা কোনো সমাধান নয়; বরং অস্থিরতা বাড়ায়।
আজ প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, এবং নাগরিক শিক্ষার প্রসার—যাতে মানুষ বোঝে সহনশীলতা দুর্বলতা নয়, বরং সভ্যতার শক্তি। নইলে সহিংসতার এই চক্র আরো গভীরে শিকড় গেড়ে নেবে, ক্ষতবিক্ষত হবে আমাদের সমাজ, আমাদের মানবতা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


