মনে আছে, সন্ধ্যায় বাবার কাছে পড়তে বসতাম, সবকিছু মনপ্রাণ দিয়ে বোঝাতেন তিনি; এগল্পটিও খুব ভাল করে বোঝালেন।
গল্পটা মনে হয় সবাই পরেছেন, অনেকটা এরকম ছিল:
"সুলতান একদিন পাখি শিকারে বের হলেন। একপাখিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেন, কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে গুলিটি গিয়ে আঘাত হানে এক বাচ্চা ছেলেকে।
ছেলেটি সাথেসাথেই মারা যায়; সুলতানের হাতের গুলি, সেটাও তো আশীর্বাদের মতোই হবার কথা।
কিন্তু ছেলেটির গরীব মা কিছুতেই এ আশীর্বাদ মেনে নিতে পারলেননা।
সন্তানের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি কাজীর কাছে প্রতিবাদ জানালেন।
কাজী দয়িত্বপরায়ণ ছিলেন, সুলতানকে ডেকে পাঠালেন। ভয় পাননি। সুলতানও এলেন।
সুলতানকে যখন ছেলেটির মায়ের অভিযোগ শোনানো হলো, সুলতান রেগে গেলেননা; বরং মহিলাকে অবাক করে দিয়ে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করলেন, ক্ষমা চাইলেন । তারপর মহিলাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রচুর টাকা/মোহর (May be!) দিলেন।
মহিলা সুলতানের মহানুভবতায় মুগ্ধ হন, সমস্ত অভিযোগ তুলে নিয়ে বাড়ী ফিরে যান।
সুলতানের মাহাত্ন্য নিয়ে চারিদিকে রব পরে যায়।"
গল্পটা শুনে আমার একটু খটকা লেগেছিল; বাবাকে ভয় পেতাম একটু একটু (সবাই পায় হয়তো) ... তাও ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
"একটা ছেলে মরে গেল, আর টাকা দিয়ে মিটমাট হয়ে গেল!!"
বাবা একটু থমকে গেলেন, পরমুহূর্তেই আনন্দের হাসি হাসলেন।
মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, "সেইযুগে সুলতানরা যা বলতেন সেটাই আইন ছিল; তাই তিনি চাইলে নিজের দোষ স্বীকার না করেও পারতেন। এমনকি তাঁর মতো ক্ষমতাধর মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাটাই হয়তো দোষ হয়ে যেত ......" এরকম আরও অনেক কিছুবাবা বললেন।
আমি হাঁ হূঁ করে মাথা নাড়লেও, মানতে পারিনি। প্রাণের দাম অর্থ দিয়ে হয়না, ক্লাস সিক্সে পড়া আমিও বুঝতাম, সব শিশুরাই বোঝে।
আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, ছেলেটির মা'র যদি অভাব না থাকত! যদি তার কাছে অনেক মোহরও তেমন দামী কিছু না হত! তাহলে? বাদশা কি দিয়ে পাপ ঘোচাতেন?
বলা হয়, ভিয়েতনামের প্রত্যেকটি মানুষই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের দ্্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আজ দেখলাম ভিয়েতনাম সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বীরের সম্বর্ধণা দেয়া হচ্ছে;
তিনি নিঃসংকোচে আমেরিকান যুদ্ধবাজির পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন, আর সবাই হাততালি দিেেচ্ছন।
হা ভগবান!!
(এই লেখার সাথে কোন সম্পর্ক নেই:
লিখতে লিখতে খবরে শুনলাম 'ফুটবলের রুপকথার রাজকুমার' পুসকাস মৃত্যুবরণ করেছেন ... তাঁর হয়ত ফুটবলকে দেয়ার আর কিছু ছিলনা ... তাও বেশ কষ্ট পেলাম ...সমবেদনা জানাচ্ছি ... শান্তি কামনা করছি তাঁর)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



