somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্যাক্সি টু দ্য ডার্ক সাইড অভ বাংলাদেশ

০৪ ঠা মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

["হোয়াই ডেমোক্রেসী" নামে দশটি ডকুমেন্টারী ফিল্মের একটি সিরিজ তৈরী হয়েছে, বর্তমান পৃথিবীতে গণতন্ত্রের নামে কিসের মচ্ছব চলছে সেটা জানার জন্য এই ছবিগুলো দেখা জরুরী]
*************************************************************
১.
আজ সকালের পত্রিকায় দেখলাম আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চিকিৎসার জন্য; তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন "দোয়া করবেন যাতে ফিরে আসতে পারি।"
এজায়গাটায় দৃষ্টি আটকে গেল! তার আগেই অবশ্য দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল আবদুল জলিলের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে।

দুটো প্রশ্ন জাগছে, আবদুল জলিল ভিআইপি প্রিজনার। তাঁর চেহারার এই দশা হবে কেন? আরেকটা প্রশ্ন হলো, আপনি কি প্রায়ই শোনেন, বিশেষ করে যখন কোন রাজনীতিবিদ বিদেশে যান চিকিৎসার জন্য তখন তিনি দোয়া চাচ্ছেন যাতে সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসতে পারেন?

দুটো প্রশ্নের উত্তরই একই সূত্রে গাঁথা, আপনি মানুন আর নাই মানুন, আমি নিশ্চিত এই লোকটার উপর জেরা করার নামে ভয়ানক অত্যাচার চালানো হয়েছে। একটা মানুষ কতটা অত্যাচারের শিকার হলে বেঁচে থাকবেন কি থাকবেননা সেটা নিয়ে মানসিকভাবে এত দূর্বল হয়ে পড়েন -- সেবিষয়ে ভাবার দরকার আছে।

কয়েকদিন আগে একটি ছবি বেরিয়েছিল পত্রিকাগুলোতে, যেখানে দেখা গেল ডোরাকাটা শার্ট পরা একটি ছেলেকে সিলিংয়ের হূকের সাথে দড়িতে ঝুলিয়ে পেটানো হচ্ছে। প্রথমে সম্ভবতঃ বিএনপিপন্থী কোন এক পত্রিকা সেটাকে তারেক রহমানের ছবি বলে চালিয়ে দেয়। পরে অন্য পত্রিকাগুলো সেটা তারেকের ছবিনা, বরং কোন এক সাধারণ ছেলের ছবি বলে দাবী করে, তারেকের ছবি বলে চালানোর অপরাধে পূর্বোক্ত পত্রিকাটিকে নিয়ে উপহাস করে। সেই ছবি নিয়ে ব্লগে ব্লগেও উপহাস হয়।

পরিহাসের ব্যাপার হলো, সেই ছেলেটার উপর যে অমানুষিক অত্যাচার হচ্ছে সে ব্যাপারটা সবার নজর এড়িয়ে যায়, এরকম অত্যাচারের দৃশ্য নিয়ে শুধু পলিটিক্সই হয়। ছেলেটার কথা কেউ ভাবেনা।

২.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান নেভীতে ইন্টেরোগেটর হিসেবে কাজ করতেন ফ্র্যাংক গিবনী। বর্তমান বুশ প্রশাসনের আফগানিস্তান/ইরানের উপর অন্যায় আক্রমণ এবং আল-কায়েদা নিধনের নামে নির্বিচারে আরব তরুনদের উপর পাশবিক অত্যাচার, যেগুলো ঘটেছিল "ওয়ার এ্যাগেইন্স্ট টেরর" ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা নানান বন্দীশালায়, সেগুলো দেখে ফ্র্যাংক হতভম্ব হয়ে যান। ষাট বছর আগে করা তাঁর নিজের কাজগুলোকে যথেষ্ট নিষ্ঠুর মনে হলেও সেখানেও অনেক নিয়ম মানা হতো, আর এখন কোন নিয়মই মানা হচ্ছেনা বন্দীদের জেরা করার ক্ষেত্রে। ফ্র্যাংকের ভ্রূ কুঁচকায়, সাথে সাথে তাঁর ছেলেরও।

ফ্র্যাংকের ছেলে এ্যালেক্স, এলেক্স গিবনী। হ্যাঁ, এই এ্যালেক্স গিবনীই ২০০৭ সালে প্রকাশ করলেন তাঁর সাড়াজাগানো এবং বুশ প্রশাসনের বারোটা বাজানো ছবি "ট্যাক্সি টু দ্য ডার্ক সাইড"। দেড় বছরের পরিশ্রমে আফগানিস্তান, ইরাক আর গুয়ান্তানামোর বন্দী, তাদের পরিবার, আমেরিকার সেনাবাহিনীর সদস্য, কর্মকর্তা, এ্যাডভোকেট, প্রফেসর মিলিয়ে অন্ততঃ পঁচিশজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষন করেছেন বন্দী নির্যাতন সমস্যাকে।

গিবনী ছবিটির শুরু করেন আফগানিস্তানের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার দিলওয়ারের কাহিনী দিয়ে, একগ্রামে যাত্রীদের পোঁছে দিয়ে ফেরার পথে তিন আফগান মিলিশিয়া ধরে দিলওয়ারকে, তারপর তাকে ছেড়ে দেয় আমেরিকান সৈন্যদের কাছে, বাগরাম কারাগারে। যে দিলওয়ার কোনদিন বাইরে রাত কাটায়নি, পাঁচরাত সেই দিলওয়ারের উপর চলে অমানুষিক অত্যাচার; নিরবচ্ছিন্ন অত্যাচারের ফলে পাঁচদিনের মাথায়ই মারা যায় দিলওয়ার। ডার্ক সাইডের সেই ট্যাক্সির হর্ন কি বেজেছিল? আমরা কি শুনেছিলাম? এ্যালেক্স গিবনী শুনেছিলেন, তিনি একে একে ইরাকের আবু গারিব জেল, গুয়ান্তানামো বে'র বন্দীশালা সবখানে ক্যামেরা নিয়ে উপস্থিত হন। বের করে আনেন মৌলিক কিছু তথ্য, সেনাবাহিনীর সদস্যদের মুখ থেকে। যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল, সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী বন্দীদের সাথে আচরণ সম্পর্কে জানলেও, এটা জানতেননা যে সেই দলিল ইরাক বা আফগানিস্তানে প্রযোজ্য কিনা।

আফগানিস্তানকে আর ইরাককে ব্যার্থ রাষ্ট্র ঘোষনা দিয়ে সরকারীভাবে তাঁদের মাঝে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করা হয়, তাদেরকে বলা হয় যেভাবেই হোক তথ্য বের করে আনতে হবে। তারা সেটাই করে, বন্দীদের কুকুরের খাঁচায় আটকে নির্যাতন করা হয়, দুহাতবেঁধে, বাঁধা দুহাতকে পেছনে নিয়ে দুপায়ের সাথে বেঁধে কালোকাপড়ে মুখ ঢেকে অত্যাচার করা হয়। দিনের পর দিন ঘুটঘুটে অন্ধকার ব্ল্যাকহোল (প্রফেসর আনোয়ার হোসেনের জবানবন্দী স্মর্তব্য) ধরনের ঘরে রাখা হয়, বলা হয় কেউ কোন কথা বললেই মেরে ফেলা হবে। আফগানিস্তানের বাগরামের বন্দী আরেক বৃটিশ নাগরিক মোয়াজ্জাম বেগ বলেন, তিনি দুজনের মৃত্যুর সাক্ষী, অন্যদের অত্যাচার করার সময় তাদের সেগুলো দেখানো হতো। মোয়াজ্জেমকে হাজারো নির্যাতন করেও যখন কিছু হলোনা, তখন তারা তাকে শোনায় একজন নারীকে নির্যাতনের অডিও রেকর্ড -- মোয়াজ্জেমের স্ত্রী আর একটি সন্তান ছিল। জেরার নামে পাপাচারের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া হয়।

ছবির শেষভাগে মোয়াজ্জেম বেগের একটি কথা ভীষনভাবে নাড়া দেয়, মোয়াজ্জেম বলেন তাকে পেটাতে পেটাতে আমেরিকান সৈন্যরা বলত,
" তুমি টেররিস্ট হও আর নাই হও, আমরা তোমাকে এমন ধোলাই দেব যে বেঁচে এখান থেকে বের হতে পারলে তুমি টেররিস্ট হতে বাধ্য হবে।"

চিন্তা করা যায়?

৩.
এ্যালেক্স গিবনী সাহস দেখিয়েছেন, সামরিক সরকারের ভয় নয়, জনমতের মতো ভয়কে জয় করে উল্টো স্রোতে ভেসে তৈরী করেছেন "ট্যাক্সি ফ্রম দ্য ডার্ক সাইড", লক্ষ্য একটাই, সত্যকে বের করে আনা।

আমাদের দেশে কি আবদুল জলিলদের উপর অত্যাচার নিয়ে কোন ছবি তৈরী হবে? হবেনা। সে আশাও আমরা করিনা। একটা কলামও ছাপবেননা সম্পাদকেরা, আবার ছবি! শখ কত!!! আমাদের তাসনিম খলিলের উপর নির্যাতন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে বিদেশী মিডিয়া, আমরা চুপচাপ দেখেছি।

এজায়গাটাতেই বুশের দেশের কাছে আমরা হেরে যাই, সেদেশে সহজেই ছবি তৈরী হয়। শুধু তাইনা, এ্যালেক্স গিবনীর ছবিটি এবার সেরা ডকুমেন্টারী ফিল্মের ক্যাটেগরীতে অস্কার পুরস্কার জিতেছে। আমাদের দেশে এরকম কিছু তৈরী করতে গেলে র‌্যাবের প্যাঁদানীর চেয়ে ভাল কিছু আশা করা যায়না।

কি আর করা, অবশেষে মইন সাহেবের গুনকেত্তন করিয়া শেষ করিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১:৩৪
৩৭টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×