somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিটেকটিভ গল্প: ওয়াইম্যাক্স (WiMAX) - পর্ব ১, ২

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
হোটেল লন্ডন টাওয়ার। চল্লিশ তলার রুমের জানালা আর পর্দার প্রাচীর ভেদ করে অবিরত নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে রাত দশটার ব্যস্ত শহরের অগুণতি গাড়ীঘোড়া। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সে শব্দের ভীড়ে আলাদা করে যে বিশেষ একটি শব্দ শুনতে পাবার জন্য অকারণে বারবার অধীর হয়ে উঠছেন নাজমুল খন্দকার, সেটি হন্তদন্ত এ্যাম্বুলেন্সের 'প্যাঁ--পোঁ, প্যাঁ--পোঁ'। তবে তা শুধু খানিকটা মানসিক তৃপ্তি বা নিশ্চয়তার খোঁজেই, কারণ, খন্দকার সাহেব ভালোই বোঝেন যে রেডড্রাগন থেকে শহরের সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে যেতে এ্যাম্বুলেন্স কোনভাবেই এই হোটেলের এক-দু'কিলোমিটার এলাকা দিয়ে যাবেনা। সেজন্যই মনের গভীরে কোথাও শব্দ শোনার আকুতি অনুভব করলেও, আদতে শব্দ শুনতে পাবেন কি পাবেননা তা নিয়ে তিনি তেমন একটা চিন্তিতও তিনি নন। নিশ্চিন্ত থাকার কারণও আছে; বেশ কিছুক্ষণ আগেই এ ব্যাপারে, অর্থাৎ তাণনর স্ত্রীকে যে বিনাঝামেলায় খুন করে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ডিটেকটিভটি; যদিও এই ঠান্ডামাথার খুনে আর অর্থলোলুপ মোজাম্মেল হক নামের লোকটিকে ডিটেকটিভ না হিটম্যান বলা ঠিক হবে তা তিনি নিশ্চিত হয়ে উঠতে পারছেননা।

হোটেলরূমে আসার পরপরই মোজাম্মেল লোকটি শান্তভঙ্গিতে বেশ দৃঢ়তার সাথেই জানিয়ে রেখেছেন যে রেডড্রাগনের মোড়ে তিনি "ফেক আই" হিসেবে জুন্নুনকে রেখে এসেছিলেন যে কিনা ঠিক পৌণে ন'টার সময় তাঁকে একশোভাগ নিশ্চিত করেছে যে মিসেস খন্দকার খুন হয়েছেন। অবশ্য জুন্নুনের ভাষায় সেটা ছিলো 'রেড ড্রাগনে আরেকটি খুন হয়েছে, এবং ভিকটিম আবারও একজন মহিলা!' কারণ মোজাম্মেল নিজেই যে এ খুনের হোতা সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারনাও তার ছিলোনা। অবশ্য মোজাম্মেল খন্দকার সাহেবকে এটা নিশ্চিত করে রেখেছে যে, জুন্নুন ঘটনার আর কিছুই জানেনা, অর্থাৎ জুন্নুনের কাছে মোজাম্মেল নিজেকে পরিচিত করে রেখেছে শুধুই একজন অভিজ্ঞ আর তীক্ষ্ম মেধাবী ফ্রিল্যান্স গোয়েন্দা হিসেবে, যে কিনা এক সপ্তাহ আগে ঐ রেড ড্রাগনেই ঘটা মিসেস ওয়ালী বক্স হত্যারহস্যের উপর কাজ করছে।

যারা রেড ড্রাগনের কথা ভুলে গেছেন তাদের জন্য, এটি এখন শহরের সবচেয়ে জমজমাট বার, রাত ন'টা থেকে গভীর রাত মানে প্রায় তিনটা-চারটা পর্যন্ত ধুমধাড়াক্কা পার্টি, নাচ, গান, আনন্দ-স্ফুর্তি চলে এখানে। আর মোজাম্মেলকে অর্থলোলুপ ভাবারও যথেষ্ট কারণ আছে খন্দকার সাহেবের, একটিমাত্র খুন, তার জন্য গুণে গুণে বিশ লাখ টাকা দিতে হয়েছে তাঁকে! দশ লাখ এ্যাডভান্সড, বাকীটা কাল রাতের মধ্যেই দিতে হবে। চল্লিশ তলার জানালা থেকে ঘোড়েলটাকে ঘাড়ধরে নিচে ফেলে দেয়ার তীব্র যে ইচ্ছেটা খন্দকার সাহেবের হঠাৎ হঠাৎ করে উঁকি দিচ্ছে, সেটা এমনি এমনি না, এবং সে ইচ্ছেগুলোকে বারবার বেশ ঠান্ডা মাথায় দমন করার জন্য নিজেই নিজেকে বাহবাও দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আরো এলবার জেগে ওঠা ইচ্ছে দমন করতে করতেই টেবিলের ওপর রাখা মদের বোতল থেকে গ্লাসে খানিকটা ঢালতে ঢালতে সরু চোখে মোজাম্মেলের দিকে তাকান খন্দকার, শান্তভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেন, 'চলবে?'
মোজাম্মেল খানিকটা বিব্রত হয়, বলে, 'স্যার, আমি এ্যালকোহল খাইনা, আপনি জানেননা বোধহয়?'
'তুমি এ্যালকোহল খাও কি খাওনা সেটা জেনে আমি কি করবো বাপধন!' মনে মনে বলেন খন্দকার; তবে মুখে কিছু বলেননা। কারণ, এখন এসবের চেয়েও তাঁর কাছে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার আছে; সেটি একটি ফোন, যা তিনি আশা করছেন যে রেডড্রাগন বারের আশপাশের কোন হাসপাতাল থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। রিনরিনে কন্ঠে আধুনিক হাসপাতালের রিসিপশনিস্ট তাঁকে স্ত্রীর মৃত্যুর অথবা নিদেনপক্ষে খুব জরূরী অসুস্থতার খবর দেবে। তখন তাঁকে নিঁখুত অভিনয় করতে হবে; রাতের ঘুমুবার পোশাকেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যেতে হবে, বেসমেন্টের পার্কিং থেকে গাড়ী নিয়ে একটানে হাসপাতালের দিকে। সেসবের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছেন তিনি। রাতে সম্ভবতঃ পুলিশও আসবে হাসপাতালে, তাদের সাথে কি কি করবেন বা কি কি কথা বলবেন তাও মোটামুটি রিহার্সেলসহ ঠিক করে রেখেছেন। এখন সবার আগে যেটা করতে হবে তা হলো এই মোজাম্মেল নামের খুনেটাকে বিদায় করে দেয়া। সেজন্যই কাল বিকেল চারটার সময় কে কোথায় কিভাবে টাকা হস্তান্তর করবে মোজাম্মেলের কাছে, কাগজের ওপর পেন্সিলে এঁকে খুব দ্রুত সেসব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন খন্দকার। কিন্তু সবকিছু ইচ্ছেমতো বা পরিকল্পনা মতো ঘটেনা সবসময়, এবং হয়তো সেজন্যই ঠিক এ সময়টাতেই হঠাৎ তাঁর সেলফোনটি বেজে ওঠে। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে খন্দকার বলেন, 'হ্যালো, নাজমুল খন্দকার স্পীকিং!'

'হ্যালো, স্যার। পুলিশের স্পেশাল ফোর্সের ইন্সপেক্টর আজগর হোসেন বলছি।'
'পুলিশ! স্পেশাল ফোর্স!!' বিস্ময় চাপতে বিরক্তভাব করতে হয় মিঃ খন্দকারকে।
'জ্বি স্যার। আপনি কি এখন হোটেল লন্ডন টাওয়ারে আছেন স্যার? আমরা খানিক আগে আপনার অফিসে ফোন করে জানতে পারলাম যে আজ আপনার হোটেল লন্ডন টাওয়ারে এ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকার কথা।'
সতর্ক হয়ে পড়েন খন্দকার, খুব দ্রুত ধাতস্থ হবার চেষ্টা করেন। পুলিশ! তার ওপর আবার সরাসরি তাঁর হোটেলে! তাঁর নিজের ছক বা পরিকল্পনা অনুযায়ী এটা তো কোনভাবেই হবার কথা না! তাও নিজেকে সামলে নেন দ্রুত, বলেন, 'হ্যাঁ, আজ রাত দু'টায় এখানে এক ডেলিগেটকে রিসিভ করতে হবে, তাই আজ এখানেই থাকছি। কিন্তু পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ আমার কাছে কি চায়!'
'স্যার, আমরা এখন লন্ডন টাওয়ার মানে আপনার হোটেলের নিচতলাতেই আছি। আমরা এখুনি চলে আসছি আপনার রূমে, তারপর বিস্তারিত সব জানাবো। এই মুহূর্তে শুধু এটুকুই বলছি স্যার, আপনি স্যার কোনভাবেই রূম থেকে বের হবেননা। আর আরেকটা কথা, রূমের দরজা জানাল সব দয়া করে বন্ধ রাখুন। তা নাহলে আপনার বিপদ হতে পারে। আমরা আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসেছি, স্যার।' আজগর হোসেন একটানে বলে যায়। ওপাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে "কেন! কেন!!" শোনা যায়, কিন্তু এর মাঝেই আজগর হোসেন ফোন কেটে দিয়ে বিরক্তির সাথে হোটেল লবির স্মোকিং ক্যাপস্যুলের দিকে তাকায়।

সিগারেট হাতে সেখানে নির্বিকারভাবে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের নতুন সেনসেশন, গোয়েন্দা হাসনাইন মাহমুদ; তীক্ষ্ম মেধাবী গোয়েন্দা হিসেবে খুব নাম করে ফেলেছে কজে যোগ দেবার কয়েকমাসের মধ্যেই, বিশেষ করে এক নামকরা গায়িকা আর একজন জনপ্রিয় অভিনেতার অপরাধ রহস্য সমাধান করে ফেলার পর তো দেশের সবাইই তার নাম জেনে ফেলেছে বোধ হয়। 'এখন আর হয়তো মাটিতেই পা পড়ছেনা হতচ্ছাড়ার', ভাবে আজগর হোসেন; যদিও আচার-আচরণে হাসনাইনকে মোটেও সেরকম অহংকারী বা বুদ্ধিমান কিছু মনে হয়না। একটু পাগল পাগল ভাব আছে ছেলেটার মধ্যে। হোটেল লাউঞ্জে স্মোকিং ক্যাপস্যুল দেখেই একটা সিগারেট শেষ করার জন্য চার মিনিট সময় চেয়ে নিয়েছে সে, আর পুরো সময়টুকু একেবারে তারিয়ে তারিয়ে ব্যবহার করে নিচ্ছে যেন!

অথচ একে কে বোঝাবে যে এরকম ক্রাইসিসে একেকটা মুহূর্ত কত জরূরী! মিসেস খন্দকার খুন হয়েছেন, এখন যদি মিঃ খন্দকারের ওপরও আক্রমণ আসে তবে সেটা তো ঠেকাতে হবে! সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাই আজগর হোসেনের বিরক্তি বাড়তে থাকে, তবে সেটাকে একটা সীমা অতিক্রম করতে না দিয়ে মিনিট খানেকের মধ্যেই ক্যাপস্যুল থেকে বের হয়ে আসে হাসনাইন। অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে আজগর হোসেন, তবে কিছু বলটে পারেনা, সম্ভবতঃ অতিরিক্তমাত্রার বিরক্তিতে তার মুখের কথাই আটকে গেছে। হাসনাইন সেটা খেয়াল করে কিনা বোঝা যায়না, কাছে এসে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে, 'স্যার, জানেন এই হোটেলটা ফাটাফাটি। স্মোকিং ক্যাপস্যুলেও ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করা যায়।'
'হোটেলের লাউঞ্জে ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করা গেলে ধুমপানকক্ষে না যাবার কোন কারণ নেই, কক্ষটাতো আর দুইফুট পুরু লোহা দিয়ে মোড়ানো না!' বলতে ইচ্ছা হয় আজগরের, তবে অযথা কথা বাড়ানোর লোক সে নয়। তাই চেপে যায়, তবে রাগের মাত্রা তার ঠিকই চড়তে থাকে। তবে সেটা টের পেয়েই হোক বা অন্য কারণেই হোক, হঠাৎ করেই প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলে হাসনাইন, বলে, 'ওকে স্যার, চলুন যাওয়া যাক।'


২.
পুলিশের ফোন পেয়েই ব্যস্তসমেস্ত হয়ে উঠেছিলো চল্লিশ তলার চৌত্রিশ নম্বর রূম, বিশেষ করে জনাব নাজমুল খন্দকার; পুলিশের সাথে আজ রাতেই কথা বলতে হবে এ ব্যাপারে সবরকমের মানসিক প্রস্তুতি খন্দকার সাহেবের থাকলেও, সেই দৃশ্যে যে তাঁর পাশে এই অর্থলোলুপ হিটম্যানটিকেও থাকতে হবে সেটা তাঁর ছক বা প্ল্যানের কোন অংশে কোনভাবেই ছিলোনা। তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার নিয়েও তিনি বিরক্ত, সেটা তাঁর অফিস সেক্রেটারী জিনাতের ওপর। তিনি যে হোটেল লন্ডন টাওয়ারে আছেন সেধে সেধে এ তথ্য পুলিশকে দেয়ার দরকার কি! পুলিশ বলে কথা! এদের কতটুকু তথ্য দেয়া উচিত বা কতটুকু না, তা নিয়ে মহিলাকে নতুন করে এ টু জেড ট্রেনিং দিতে হবে -- মনে মনে ভাবেন খন্দকার, খানিকটা অস্থিরও হয়ে উঠতে দেখা যায় তাঁকে। পুলিশ মোজাম্মেলকে তার রূমে দেখলে কি ভাববে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এক মুহূর্তের জন্য এও ভেবেছিলেন যে মোজাম্মেলকে বলবেন বের হয়ে চলে যেতে, সিঁড়ি দিয়ে তলা দশেক নামার পর ত্রিশ তলার স্কাই-লাউঞ্জ ক্যাফেতে গিয়ে বসে থাকলেই তো ঝামেলাটা চুকে যায়। কিন্তু পরমুহূর্তেই তাঁর মনে পড়লো এই হোটেলে অন্ততঃ শ'খানেক সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, মোজাম্মেল যে তাঁর রূমে ঢুকেছিলো এটা কোথাও না কোথাও ধরা পড়ে আছেই, কাজেই এখানে লুকোছাপা করার চেষ্টা না করাই ভালো, তার চেয়ে খুঁজেপেতে অন্য কোন পন্থা বের করতে হবে।

অস্থিরতা বাড়ে খন্দকার সাহেবের, একচুমুকে গ্লাসের সবটুকু পানীয় মুখে ঢেলে দেন ত্বরিৎ কোন বুদ্ধি আসার আশায়। কিন্তু বিধিবাম! কিছুই খেলেনা মাথায়, হতাশ বোধ করেন তিনি। তবে ভাগ্য ভালো তাঁর এটা বলতেই হবে, কারণ যখন তিনি বুঝলেন এই মুহূর্তে মাথায় কিছু আসবেনা, কিছুতেই কিচু হবেনা বা সব শেষ, ঠিক তখনই যেন মুখটা খুললেন পাশেই দাঁড়ানো ধীমান গোয়েন্দা মোজাম্মেল হক, ধীরস্থির শান্ত ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করেন, 'স্যার, আমার নিজের নম্বর ছাড়াও অন্য যে চারটি নম্বর থেকে আপনাকে আমি ফোন করেছি, ওসব কি আপনার মোবাইলের কল লিস্টে এখনও সংরক্ষিত আছে?'
'আছে তো মনে হয়?' কিছুটা আশান্বিত দেখায় খন্দকারকে।
'তাহলে স্যার সমস্যা হবেনা। পুলিশকে বলবেন যে গত কয়েকদিন আপনাকে কে বা কারা নানান হুমকি দিয়ে আসছিলো; কিন্তু ঘটনা যে এতদূর গড়াবে সেরকম হিন্টস আপনি পাননি।' এক ঢিলে দু'পাখি মরবে।
'মানে?'
একটু বিনীতভাবেই বলা শুরু করে মোজাম্মেল, 'যত যাই বলুননা কেন স্যার, এ শহরে আমার একটা ভালো পরিচয় আছে, আপনি সেটা জানেন। সো, আপনি বলবেন যে আমাকে হায়ার করেছেন ফোনে হুমকির সমস্যাটি খতিয়ে দেখার জন্য; আপনার স্ত্রী হত্যার মোটিভ, আর আমি এখানে আপনার হোটেলঘরে কেন-- দুটো ঘটনাই ব্যাখ্যা করা যাবে।'
'হুমম, সেটা কাজ করতে পারে।' খানিকটা আস্বস্ত শোনায় খন্দকারকে,'তারচেয়েও বড় কথা সেরকম কিছু বলেই বুঝ দিতে হবে, আমার হাতে বেটার কোন অপশন নেই।'
'যা ব্যবস্থা করে রেখেছি স্যার, তাতে আপাততঃ এতেই কাজ হবে।' আত্মবিশ্বাসী শোনায় মোজাম্মেলকে।

ইন্সপেক্টর আজগর হোসেনের দলে মোট ছ'জন, ডিটেকটিভ হাসনাইন বাদে বাকীরা অস্ত্রসজ্জিত, মূলতঃ খন্দকার সাহেবের নিরাপত্তার জন্যই তারা এসেছেন। অস্ত্রধারী চারজনকে বাইরে পজিশনে দাঁড় করিয়ে রেখে শুধু হাসনাইনকে নিয়ে খন্দকারের রূমের ভেতর প্রবেশ করে আজগর হোসেন। ঢুকেই সেখানে প্রাইভেট ডিটেকটিভ মোজাম্মেলকে দেখে খানিকটা ধাক্কা খায় আজগর হোসেন, হাসনাইনের কর্মকান্ডে বিগড়ে থাকা মেজাজটা অজান্তেই আরো খানিকটা খিঁচড়ে ওঠে। এমনিতে মুখোমুখি কোন শত্রুতা তাদের নেই, তবে অনেক আগে এক কোটিপতি খুনের মামলা, যেটা কিনা তার হাতে ছিলো, সুনিপুণভাবে উড়ে এসে জুরে বসে সেই মামলার সুরাহা করে হিরো বনে গিয়েছিলেন এই মোজাম্মেল হক। সেই থেকে লোকটার অতিরিক্ত শান্তভঙ্গি মানে "কূল গাই"মেজাজের চাল-চলন একদমই সহ্য করতে পারেনা আজগর।

তবে মেজাজ যতই খিঁচড়ে থাকুক, দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে, খন্দকার সাহেবকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে বাঁচাতে হবে এতটুকু প্রফেশনাল দায়িত্ববোধ তার আছে। খুব সাবধানে, যাতে খন্দকার সাহেব উত্তেজিত হয়ে না পড়েন সেভাবে ধীরে ধীরে আজগর হোসেন তাঁকে স্ত্রী হত্যার খবরটি জানায়। আর তারা যে খন্দকার সাহেবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এসেছেন সেটা জানিয়েও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। খন্দকার সাহেব আর মোজাম্মেল হকের সুনিপুণ অভিনয় দেখে বোঝার কোন উপায়ই থাকেনা যে এই তথ্য তাঁরা অনেক আগে থেকেই জানেন। মোজাম্মেলের পরিকল্পনা ধরেই খন্দকার জানান যে, দিন দশেক হলো কে বা কারা তাঁকে উড়ো ফোনে হুমকী দিচ্ছিলো যে পঞ্চাশ লাখ টাকা দিতে হবে, না হলে তাঁর ভীষণ ক্ষতি করবে ওরা। কিন্তু ফোনের হুমকী যে এতদূর গড়াতে পারে সেটা তিনি কস্মিনকালেও ভাবেননি! প্রসঙ্গক্রমে এও জানা যায় যে বেশ কয়েকবার ফোনে হুমকী পাবার পর প্রাইভেট গোয়েন্দা মোজাম্মেল হকের সাথে তিনি যোগাযোগ করেছেন, আজ সন্ধ্যায় একটু অবসর পাওয়ায় মোজাম্মেলকে হোটেলে ডেকেছেন বিস্তারিতভাবে এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্বটি বুঝিয়ে দেবার উদ্দেশ্যেই। 'অথচ সে রাতেই ঘটনা ঘটে গেলো, এ কোন ধরনের কাকতাল!' কান্নায় ভেঙে পড়েন নাজমুল খন্দকার, তাঁর নিপুণ অভিনয়ে পাষাণ সীমারের হৃদয়ও কেঁপে উঠতে বাধ্য।

সবকিছু খন্দকার সাহেবদের পরিকল্পনা মতোই এগুচ্ছিলো, তবে সমস্যা তৈরী হলো তখনই যখন আজগর হোসেন একটু চড়া গলাতেই খন্দকার সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিলো যে এমন একটি সমস্যার কথা পুলিশকে না জানিয়ে কেন তিনি একজন প্রাইভেট গোয়েন্দার উপর ভরসা করতে গেলেন? মুখ ফসকে আজগর হোসেন এও বলে ফেলে যে এহেন "অর্বাচীন" সিদ্ধান্ত না নিলে হয়ত তাঁর স্ত্রীকে পুলিশ বাঁচাতেও পারতো। আজগর হোসেনের উদ্ধত ব্যবহার স্বভাবতই পছন্দ করেননি খন্দকার, বিশেষ করে তাঁর মতো এরকম প্রতাপশালী ব্যক্তিকে সামান্য এক পুলিশ অফিসার মুখের ওপর "অর্বাচীন" বলে ফেললে সেটা হজম করা বেশ কঠিনই তাঁর জন্যে। তবে খন্দকার সাহেবের ক্ষেত্রে ঠিক সেমুহূর্তে মস্তিষ্কের ক্রোধ উৎপাদনকারী অংশের চেয়ে নিজেকে বাঁচানোর অভিনব সব বুদ্ধিউৎপাদনকারী অংশটিই বেশী তৎপর ছিলো। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই বেশ রূঢ় বাচনভঙ্গিতে দাবী করে বসলেন যে স্ত্রীহত্যার এই কেইসে তিনি পুলিশের চেয়ে, বিশেষ করে আজগর হোসেনের মতো "মুখরা গোছের অপদার্থ"দের চেয়ে মোজাম্মেল হকের মতো ঠান্ডা মাথার ফ্রিল্যান্স গোয়েন্দার উপরই ভরসা বেশী করেন। সূতরাং তিনি মোজাম্মেলকে দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ইনভেস্টিগেশন করাবেন, এবং সে কাজে পুলিশ যাতে মোজাম্মেলকে সহায়তা করে সেটা আজগর হোসেনকেই নিশ্চিত করতে হবে -- এটুকু বলে রাগ সংবরণের অভিনয় করতে হয় তাঁকে।

যথাযথ কারণেই খন্দকার সাহেবের এরকম উদ্ভট আবদারে আরো বেশী বিরক্ত হয়ে ওঠে আজগর হোসেন, তবে সেটা যথাসাধ্য চেপে রেখেই সে খন্দকার সাহেবকে যারপরনাই বোঝানোর চেষ্টা করে যে খুনটা যেহেতু পাবলিক প্লেসে হয়েছে, তাই মামলার দায়িত্ব সরকারই নেবে প্রথমে, পুলিশকেই প্রাথমিক ইনভেস্টিগেশন করতে দিতে হবে; খন্দকার সাহেব ব্যক্তিগত পর্যায়ে শুধু ইচ্ছেমতো উকিল নিয়োগ করতে পারবেন, তবে সেটা আদালতে মামলা গড়ানোর পর। তার আগ পর্যন্ত ইনভেস্টিগেশনের যে দায়িত্ব সেখানে পুলিশ বাইরের কাউকে নাক গলাতে দিতে চায়না বা রাজীও হবেনা। আজগর হোসেন তাঁকে এও জানায় যে যদি তিনি মনে করেন যে পুলিশ আসামী সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে তিনি আদালতে আবেদন করে দেখতে পারেন ব্যক্তিগত গোয়েন্দা নিয়োগের জন্য; তবে খুনের ঘটনার পরদিনই যদি তিনি আদালতে এমন মামলা নিয়ে হাজির হন, তাহলে সেখানে সেটা শুধু "হাস্যকর" একটি ব্যাপার হিসেবেই পরিচিত হবে।

বলাইবাহুল্য আজগর হোসেনের ব্যবহৃত এই "হাস্যকর" বা এ ধরনের আরো কিছু শব্দ ক্রমশঃ খন্দকার সাহেবের রাগের মাত্রা বাড়িয়ে চলছিলো, যার ফলে যদিও সে এরকম আরো বেশ কিছু সুন্দর যুক্তি দিয়ে খন্দকার সাহেবকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে এখনই প্রাইভেট গোয়েন্দাকে সাথে নেয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব না, কিন্তু তার যুক্তিগুলোর কোনটিই কোন কাজে আসলনা। বরং, পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দাদের উপর ভরসা করতে উপদেশ দিয়ে যখন সে খন্দকার সাহেবকে উদ্দেশ্য করে হাসনাইনকে একজন পোটেনশিয়ালসমৃদ্ধ ব্রাইট গোয়েন্দা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলো, তখন খন্দকার সাহেব আর চুপ থাকতে পারলেননা; প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে গর্জে উঠলেন এই বলে যে 'এসব সেদিনের চ্যাংড়া আর অপদার্থ ছেলেপেলের ওপর আমি ভরসা করবো কেন? আপনি জানেন আমি কে?'। সহকর্মীর অপমান হজম করতে পারেনি আজগর হোসেন, সেও তখন আর নিজের রাগ সামলাতে পারলনা, বলেই বসলো,'স্যার, আপনি কোথাকার কোন হরিদাস পাল অথবা কেমন বালস্য বাল সেটা আমার জানার দরকার হবেনা ' ।

ব্যস ওটুকুই, আরো ভয়ানক তেজে গর্জে উঠলেন খন্দকার, চীৎকার করতে করতে বললেন, 'তুমি জানো তোমাদের আর্মির প্রধান আর আমি এক কাপে কফি খাই, গলাগলি করে গলফ খেলি!! তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো!! কালই তোমার চাকরি চলে যাচ্ছে, মনে রেখো গর্দভ!! তুমি এক্ষুণি বাসায় ফিরে গিয়ে আঙুল চোষা শুরু করো, যাও, বেরিয়ে যাও!!'
সমানতালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আজগর হোসেনও, তার ইচ্ছা হয় বলে যে 'আর্মির প্রধানও তো আরেক ... ' তবে সেটুকু আর সাহস করতে পারেনা সে। হাসনাইনের হস্তক্ষেপে নিজেকে সামলে নেয়, তারপর শুধু ক্রুর চেহারা করে বলে, 'স্যার, আঙুল চুষতে হলে কাল থেকে চুষবো, আজ তো আর চাকুরী খেতে পারছেননা, আজ আমিই খেলা দেখাবো!'
'কি বলতে চাও তুমি?' রাগে কাঁপতে থাকেন খন্দকার সাহেব, গলার তেজ সামান্যও কমে আসেনা।
'স্যার, আপনাদের জেরা করাবো, জবানবন্দী নেয়াবো এখন, দেখি কি করেন। কেইস যেহেতু হাতে নিয়েছি, জেরা করার অধিকার কাল চাকুরী যাবার আগ পর্যন্ত তো আমার আছে, তাইনা? হাসনাইন, এদের দুজনের জবানবন্দী নাও, দুটো আলাদা ফাইলে। প্রিসাইজলি জিজ্ঞেস করবে, দে আর নট বিয়ন্ড ডাউট!'
'কত্ত বড় সাহস! কত্ত বড় সাহস!!' খন্দকার সাহেবের চিৎকারের মাত্রা আরো বাড়তে থাকে, তবে এরই মাঝে হাসনাইন মোটামুটি জোর করেই টেনেহিঁচড়ে আজগর হোসেনকে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে আসে, তারপর নিজে একা আবার প্রবেশ করে।

হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে যাওয়া পরিবেশ দেখে থতমত হয়ে গিয়েছিলো হাসনাইন। বিশেষ করে এই বদরাগী ইন্সপেক্টর আজগর হোসেনের উপর বেশ বিরক্ত সে এই মুহূর্তে। এমনিতেই বেচারা খন্দকার সাহেবের স্ত্রী খুন হয়েছেন, কোথায় তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাঁকে সান্ত্বনা দেয়াটা তাদের কর্তব্য, সেখানে যা তা বলে গালাগাল করা -- এ কেমন দায়িত্বপালন! পরিস্থিতি নিজ নিয়ন্ত্রণে আসার সুযোগেই ছিলো সে, ঠিকমতো জবানবন্দী নেবে এই আশ্বাসে আজগর হোসেনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রূমের বাইরে পাঠিয়ে দিতে পেরে একটু আশ্বস্তই হয়। তারপর রূমের দুই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বিনীতভাবে বলে, 'স্যার আমি ভীষন লজ্জিত যে আমাদের ইন্সপেক্টর আপনার মতো সম্মানিত ব্যক্তির সাথে এরকম রূঢ় আচরণ করেছেন।'

হাসনাইনের নমনীয়তার সুযোগ নেয় মোজাম্মেল, বলে, 'ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু যেখানে ভিকটিম আমরাই সেখানে আমাদের জেরা করবেন কেন?এসব তো পুলিশের বাড়াবাড়ি, তাইনা?'

হাসনাইন বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মোজাম্মেলের দিকে, বলে, 'বোঝেনই তো স্যার, মাথা গরম করে অর্ডার দিয়েছে; তবে, নিশ্চিত থাকুন আমি শুধুই ফর্মালিটিজগুলো পালন করবো এখানে, পরে আপনারা নিজেদের সময়মতো যা বলতে চান আবারও বলতে পারবেন স্যার।' বলতে বলতে নিজের নোটবইটি খুলে একটা চেয়ারে বসে পড়ে হাসনাইন, মোজাম্মেলের দিকে তাকিয়ে বলে, 'শুধু একটিই প্রশ্ন করবো স্যার, মার্ডারের সময় হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে আজ সন্ধ্যা আটটা বিশ থেকে আটটা পঁয়ত্রিশ, সেসময়টা আপনারা কোথায় ছিলেন সেটাই বলতে হবে শুধু।'

খানিকটা চিন্তা করার সময় নেয় মোজাম্মেল, তারপর দম নিয়ে বলে 'সম্ভবতঃ অরিয়ন ক্লাবে ছিলাম আমি, দাঁড়ান' বলতে বলতে মানিব্যাগ খোলে সে। মানিব্যাগ থেকে কিছু পাঁচশো আর একশো টাকার নোটের সাথে বেরিয়ে আসে একটি রিসিপ্ট, অরিয়ন ক্লাবের রেইনবো ক্যাফের রিসিপ্ট। সেখানে লেখা সময়টা দেখে যেন একেবারে নিশ্চিত হন মোজাম্মেল, বলে ওঠেন, 'হ্যাঁ, হ্যাঁ, সন্ধ্যা সাতটা পঞ্চান্নতে আমি কফি কিনেছি সেখান থেকে, আর বের হয়েছি ক্যাফে বন্ধ হবার পর, মানে ধরুন একেবারে ন'টারও পরে। এই দেখুন' বলে রিসিপ্টটা বাড়িয়ে দেন হাসনাইনের দিকে।

মোজাম্মেলের দিকে অবাক চোখে তাকান খন্দকার সাহেব, সন্ধ্যা সাতটা পঞ্চাশ থেকে ন'টা পর্যন্ত সে অরিয়ন ক্লাবে ছিলো, তার এ্যালিবাইও আছে! তাহলে খুনটা সে করলো কখন? তার মানে খুনটা সে করেনি? অন্য কাউকে দিয়ে করিয়েছে? ভেতরে ভেতরে দিশেহারা বোধ করেন খন্দকার সাহেব, তবে সেটা তাঁর মুখের ভাবে প্রকাশ পায়না; ভীষণরকম বিরক্ত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন হাসনাইনের দিকে।

সেই রাগী রাগী চেহারা দেখে হাসনাইন ঠিক সাহস করতে পারেনা একই প্রশ্ন আবার খন্দকার সাহেবকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করতে। কিভাবে কি করা যায় এই চিন্তায় কিছুক্ষণ ইতস্ততঃ করতে করতে যখন তার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা, তখনই মানীর মান স্রষ্টা বাঁচান, অর্থাৎহাসনাইনের সেলফোনটি বেজে ওঠে, এবং ফোনের ওপাশ থেকে মোটামুটি ঘরের তিনজনকেই শুনিয়ে দরাজ কন্ঠে হাসনাইনের বস শাহাদাৎসাহেব বলতে থাকেন , 'আরে এই হাসনাইন, তোমরা এখনও কি করছো ওখানে? তাড়াতাড়ি অফিসে এসো। আমরা তো অপরাধী সনাক্ত করে ফেলেছি, এমনকি হাজতেও পুরে ফেলেছি!'

অদ্ভুত দক্ষতার সাথে অজান্তেই বের হতে যাওয়া স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকু সামলে ফেলেন খন্দকার সাহেব আর মোজাম্মেল হক দুজনেই। ঝানু অভিনেতা, বলতেই হবে। ঘাঘু গোয়েন্দা হাসনাইনেরও চোখ এড়িয়ে যায় সে অভিনয় বা প্রচেষ্টা যেটাই বলা হোক না কেন। সেখানে সে দেখে শুধু দুজন পাকা অভিনেতার জ্বলন্ত অগ্নিদৃষ্টি, যে দৃষ্টি দাবী করছে কেন তাঁদের জবানবন্দীর আদেশ দিলো পুলিশ ইন্সপেক্টর আজগর!

শাহাদাৎ সাহবের কথার জবাবে কিছুটা বিব্রত হাসনাইন বলে, 'তাই নাকি স্যার?'
'আরে হ্যাঁ, ব্যাটা এখন হাজতেই আছে। নাম তোজাম্মেল হক'
'কি বললেন স্যার!' চমকে ওঠে
'হ্যাঁ, তোজাম্মেলই তো নাম'
ভ্রূ কুঁচকে মোজাম্মেলের দিকে তাকায় হাসনাইন, তাকেও বিব্রত দেখায়।
হাসনাইন আবারও বলে, 'তো-জা-ম্মে-ল!'
'আরে হ্যাঁ! কেন? এটা মানুষের নাম হতে পারেনা? মোজাম্মেল যদি মানুষের নাম হয় তোজাম্মেলে তোমার সমস্যা কি? গোজাম্মেল বা গোঁজামিল তো আর না!! একটা অক্ষরই তো এদিক ওদিক! '
হাল ছেড়ে দেয় হাসনাইন, শাহাদাৎ সাহেবের সাথে কথা বাড়ানো অর্থহীন, সবকিছু তর্কে পরিণত হয়।

অভিনেতাযুগল অর্থাৎ খন্দকার সাহেব আর মোজাম্মেলের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে হাসনাইন বলে, 'আমাদের করিৎকর্মা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তো অলরেডী আসামীকে ধরে ফেলেছে; চলুন আমরা আপনাদের হাসপাতালে পৌঁছে দিই।'

'জ্বী, আমরা শুনেছি' বলতে ইচ্ছা হয় মোজাম্মেলের, তবে পরপর ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনায় টেনশনে গলা প্রায় শুকিয়ে আসায় তার বদলে তিনি বললেন, 'তার আগে চলুন নিচে কোথাও বসে একটু চা খেয়ে নেওয়া যাক।'

(চলবে)
*********************************************
সচলায়তন ব্লগে সুহান রিজওয়ানের লেখা গল্প (http://www.sachalayatan.com/shu77han/26532) 'ডিটেকটিভ'র প্লটটির উপর ভিত্তি করে লেখার একটা প্রচেষ্টা ।

বরাবরের মতো এ গল্পটিতেও নানান বিদেশী গল্পের ছায়াদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাবে, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নিচ্ছি।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৪৩
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোকাকোলা সহ সকল কোমল পানীয় বর্জন করুন। তবে সেটা নিজের স্বাস্থ্যের জন্য, অন্য ব্যবসায়ীর মার্কেটিং কৌশলের শিকার হয়ে না।

লিখেছেন নতুন, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

মার্কেটিং এর ম্যাডাম একবার বলেছিলেন, "No publicity is bad publicity." প্রচারের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে ব্র্যান্ডের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া। কিছুদিন পরে মানুষ ভালো কি মন্দ সেটা মনে রাখে না,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×