বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আমরা ইদানীং বেশ কিছু ভ্রান্তিকে চিরন্তন সত্য মেনে নিয়ে বড় হচ্ছি এবং অনেক বিজ্ঞ মুসলিমও এসবকে তুচ্ছ মনে করে তোয়াক্কা করছেন না। অথচ এগুলো অনেক সময় আমাদের ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দেখা দিচ্ছে। আমি এখানে অল্প কিন্তু অত্যন্ত ভয়ংকর কিছু ভ্রান্তির কথা উল্লেখ করলাম।
১) মুহাম্মাদ (সা) ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক।
সহীহ ব্যাখ্যাঃ ইসলাম এসেছে আল্লাহ পাকের নিকট হতে এবং তারই তরফ হতে। প্রবর্তক কথাটির অর্থ যে আনে/ চালু করে/ শুরু করে/ প্রবর্তন করে। ইসলামকে বানিয়েছেন আল্লাহ স্বইয়ং। ইসলামকে আমাদের মাঝে পাঠিয়েছেনও তিনি। অর্থাৎ ইসলামের শুরু বা সূচনা তার হাত ধরেই। আর মুহাম্মদ (সা) একটি মাধ্যম মাত্র (পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে ইসলাম প্রচারের মাধ্যম কেবল তিনি নন, আরো অনেকেই ছিলেন।। এছাড়াও ইসলাম পৃথিবীতে আছে আদম (আ) যেদিন পৃথিবীতে আসেন সেই দিন হতে। কুরানে আছে, আদম (আ), নুহ (আ), ইব্রাহীম (আ), মূসা (আ), ঈসা (আ) ও হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সা) সহ সকল নবীই একই দ্বীনের প্রচার করেছেন। যদি মুহাম্মাদ (সা) এর প্রবর্তক হন তবে আদম (আ) ইসলাম প্রচার করে গেলেন কি করে?
অর্থাৎ, এটি সুস্পষ্ট যে আল্লাহ কে বাদ দিয়ে মুহাম্মাদ (সা) কে ইসলামের প্রবর্তক বলা স্পষ্টতই শিরক।
২) ইসলাম পৃথিবীতে আসে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে।
সহীহ ব্যাখ্যাঃ দ্বীন ইসলামের মূল কাঠামো এক ও অভিন্ন। আদম (আ) যে দ্বীন প্রচার করেছেন সেই একই দ্বীন প্রচার করেছেন নূহ (আ), ইব্রাহীম (আ), মুসা (আ), ঈসা (আ) ও হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সা) সহ অন্য সকল নবী ও রাসূলগন। মানুষ যখন জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রাথমিক স্তরে ছিল তখন তাদের জন্য সহজ বিধান দেয়া হয়েছিল। ধাপে ধাপে তাদের জ্ঞানের সাথে বিধানেরও প্রসার ঘটতে থাকে। আদম (আ) এর মাধ্যমে যে দ্বীনের সূচনা হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটে আখেরী নবী, নবী সর্দার হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সা) এর মাধ্যমে।
আল কুরানে এর স্বপক্ষে অনেক প্রমান রয়েছে। তন্মোধ্যে একটি নিম্নে দেয়া হলো।
"ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না, খ্রিস্টানও নহেন, বরং তিনি ছিলেন ঋজু স্বভাব, মুসলিম; আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।" (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৬৭)
অর্থাৎ, এখানে ইব্রাহীম ছিলেন মুসলিম তথা ইসলামে বিশ্বাসী। অতএব, এটা বলাই বাহুল্য যে ইসলাম এসেছে আদম (আ) এর হাত ধরে এবং যার পূর্ণতা সাধিত হয় হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর মাধ্যমে।
৩)কুরান মাজীদ ৬১০ সাল থেকে রচনা হওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে নাযিল হতে থাকে।
সহীহ ব্যাখ্যাঃ মানব সৃষ্টির জন্মলগ্ন হতেই কুরানে পাক বিদ্যমান। এটি সেই আদিকাল হতেই লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত হয়ে আছে। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে অনুকুল সময় ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এটি নাযিল হতে থাকে। তবে এর রচনাকাল অজানা এবং এর রচনাকাল অবশ্যই আদম (আ) এর পূর্বে। কুরয়ান পাক সর্বদা ছিল, আছে এবং থাকবে। আল-কুরানে এসম্পর্কে বলা হয়েছে-
"বরং এ কুরান উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ" (সুরা বুরুজ, আয়াত ২২)
৪) ইসলাম একটি ধর্ম।
সহীহ ব্যাখ্যাঃ
"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহন করেছি" (সুরা আল মায়িদাহ, আয়াত ৩)
এখানে মহান আল্লহ তা'লা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং আমাদের দ্বীন হিসেবে যা গ্রহন করেছেন তা হল ইসলাম। অর্থাৎ, ইসলাম একটি দ্বীন। "দ্বীন" কথাটির আচিধানিক অর্থ অনেক তবে তন্মোধ্যে ৫টিকে মূল ধরা হয়। এই মূল ৫টি বা অন্যান্য অর্থের কোনটিতেই দ্বীনের বাংলা ধর্ম পাওয়া যায় না। বরং সর্বোচ্চ সঠিক যে অর্থটি পাওয়া যায় তা হল জীবন বিধান/ সংবিধান/ a full code of life। দ্বীন অর্থ জীবনের পূর্নাঙ্গ বিধান যাতে জীবনের প্রতিটি কাজের নিয়ম দেয়া আছে। জীবনে চলতে দরকার ধর্ম, শিখহা, সংস্কৃতি, বিনোদন, আইন, বিজ্ঞান, সংবিধান ইত্যাদি। দ্বীন এই সব কিভহুর সমষ্টি। অর্থাৎ বলা যায়, ধর্ম দ্বীনের একটি অংশ।
ধর্ম হচ্ছে তাই যা মানুষ ব্যক্তিজীবনের জন্য আদর্শরুপে ধারণ করে। ইসলামের যে অংশ ব্যক্তিগত জীবনের কথা নির্দেশ করে সেটুকু ধর্ম আর বাকিটুকু হচ্ছে দ্বীনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এছাড়া কুরান কিংবা সহীহ হাদিসের কোথাও ইসলামকে ধর্ম বলা হয় নাই।
অতএব, ইসলামকে ধর্ম বলা আর মিথ্যেচারিতা একই কথা।
৫) মহানবী (সা) মুসলমানদের নেতা।
সহীহ ব্যাখ্যাঃ পৃথিবীর প্রায় সকল গবেষক (হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আস্তিক-নাস্তিক) এই ঐক্যমতে পৌছান যে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে জানাচ্ছি যে তার উদ্ধৃতি, কর্ম (হাদীস) কোথাও কোটেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয় না কেবল মুসলিমদের মাঝে ও হাদীসের বই ছাড়া। আমরা প্রায়ই বিখ্যাত মনীষীদের উদ্ধৃতি দেই বা সচারচ দেখতে পাই (যেমন জর্জ বার্নাড শ, আইনস্টাইন, এরিস্টটল, সক্রেটিস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গৌতম বুদ্ধ প্রভৃতি).. অথচ ঐসকল মনীষীর চেয়ে হাজার গুন উত্তম মহানবী (সা) এর উদ্ধৃতি দেয়া হলে তাকে সাম্প্রদায়িকতা বলা হয়, সেই উদ্ধৃতি সকল ধর্মের জন্য অপ্রযোজ্য বলা হয়। এর কারণ আমরা মুসলমানেরা হযরত মুহাম্মাদ (সা) কে নিজেদের সম্পত্তি এবং কেবল নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি যা ঘোরতর অন্যায় এবং কুরান বিরোধী।
অথচ কুরানে পাকে রয়েছে-
"আমি আপনাকে সারা বিশ্বের রহমত হিসেবে প্রেরন করেছি" (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)
"বলুন, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার কাছেই আল্লাহর রাসূল হিসেবে এসেছি" (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত ১৫৮)[/sb
৬) আল্লাহ তা'লা নিরাকার
সহীহ ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ তা'লা কুরানে পাকে এরশাদ করেছেন, তার আসন বা আরশ রয়েছে, জান্নাতীরা তাকে দেখতে পারবেন। এসকল উদাহরন দ্বারা এটিই প্রতীয়মান হয় যে আল্লাহ তা'লার নির্দিষ্ট আকার রয়েছে। তবে এ আকার সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনাই নাই, পৃথিবীতে বা ইহজগতে তার আকার সম্পর্কে কোন ধারনা পাওয়াই সম্ভব না যেহুতু তিনি বলেছেন, "লাইসা কামিসলিহী শায়ই (তাহার সদৃশ কিছুই নাই)"
অরথাত, আল্লাহ দৃশ্যমান এবং তার নির্দিষ্ট আকার রয়েছে তবে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনা নাই যেহুতু তার সম্পর্কে ধারনা করার মত কোন সূত্র আমাদের কাছে নাই এবং পার্থিব কিছু দিয়ে তার সম্পর্কে ধারনা করা অসম্ভব।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম জ্ঞানী।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:২১