somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সাম্প্রতিক সমীক্ষাঃ মহানগরীর পানি সমস্যা সমাধানে কিছু প্রস্তাবনা

০৮ ই জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের মৌলিক চাহিদা-অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সাথে তাল মিলিয়ে এ নগর বাসীর মৌলিক চাহিদার তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে পানি, বিদ্যুৎ গ্যাস, যানজট ও মশার প্রকট যন্ত্রনা। আজকে প্রথম সমস্যা পানি ও তার সমধান বিষয়ক আলোকপাতই প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে ১ কোটি জনসংখ্যার বাসস্থান মেগা সিটি ঢাকার পানির চাহিদা দৈনিক ২১০ কোটি লিটার, আর সরবরাহ ১৯৪ কোটি লিটার।স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক পানির ঘাটতি ১৬ কোটি লিটার এবং শুস্ক মৌসুমে এ ঘাটতির পরিমান বেড়ে দাড়ায় ৩০-৩৫ কোটি লিটার। সরবরাহের ৮৫ শতাংশ পানি সংগৃহীত হয় ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে এবং ১৫ শতাংশ সংগৃহীত হয় চাদনীঘাট ও সায়েদাবাদ শোধনাগার থেকে নদীর পানি পরিশোধন করে। ভূগর্ভস্থ ১৬৫ কোটি লিটার মধ্যে ১৪০ কোটি লিটার ৪৮৩ টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ও বাকী ২৫ কোটি লিটার ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৩২৬ টি নলকূপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। ঢাকা শহরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২টি পর্যবেক্ষণ কূপের দৈনিক, মাসিক, বাৎসরিক পানির গভীরতা হ্রাস ও বৃদ্ধির তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ১৯৯৬ সালে পানির স্তর ছিল ২৬.৮ মিটার ২০০০ সালে তাহা ৩৪.১৮ মিটার এবং ২০০৪ সালের ৫০.১১ মিটার যাহা প্রতি বছর গড়ে ২.৯০ মিটার পানির স্তর হ্রাসের হার অব্যাহত থাকলে তা আগামী ২০১০ সালে ৬৮ মিটারে দাড়াবে। তার মধ্যে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে আছে মিরপুর এলাকা এবং বুড়িগঙ্গাঁর অবদানে ভাল আবস্থায় আছে সূত্রাপুর এলাকা। ভবিষ্যতের ভযাবহাতার কথা বর্ণনা না করে এ পরিস্থিতির কারণ নির্ণয় ও সমাধানের চেষ্টায় আসা যাক।

পরিস্থিতির কারণঃ

১। শহরের আচ্ছাদিত ও পাকা স্থানের কারণে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
২। নগরায়নের শর্তানুযায়ী প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা না থাকায় মাটি বৃষ্টির পানি শোষণ করে ভূগর্ভে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
৩। যে পরিমান পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করে তার অধিক পরিমান উত্বোলন করা।
৪। নদীর নাভ্যতা কমে যাওয়ায় গভীর জলাধারে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ না করা।
৫। ঢাকা শহরের বিদ্যমান ২২টি খাল ভরাট করা।
৬। জলাশয় ভরাট করে অপরিকল্পিত আবাসন গড়ার কারনে।



প্রভাব ও ফলাফলঃ

১। নগরের অগভীর স্তরে পানি রিজার্ভ না থাকার কারণে গাছ পালা পানি শোষন করে বেচেঁ থাকার নাগালের বাহিরে চলে যাবে এবং শুকিয়ে মরে যাবে।
২। গভীর জলাধারে পানির স্তর নিম্নগামী হওয়ার কারণে গভীর স্তরে ফাঁফা হয়ে যাবে যাহার ফলে ভূমি ধসের আশংকা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাবে।
৩। গভীর জলাধারের ফাঁফা থাকার কারণে ভূমিকম্পে বেশি পরিমাণে আন্দোলিত হ্ওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
৪। গভীর জলাধারের নিচে বিশাল কাদার স্তর যাহার উপরে পানি বালির ভিতর জমে আছে। এ পানি নিঃশেষ হ্ওয়ার পর ক্ষেত্র ভেদে ৩০০-৪০০ ফুট কাদার স্তর ভেদ করে ১৫০০-২০০০ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলন অসম্ভব হয়ে পড়বে।

চিত্র (ক) চিত্র (খ)
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ সংরক্ষণ ও
ব্যবহারের প্রস্তাবিত পদ্ধতি বৃষ্টির সময় আচ্ছাদিত ছাদের পানি মাটিতে প্রবেশের প্রস্তাবিত পদ্ধতি


প্রতিকারঃ

১। বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে প্রবেশের ব্যবস্থা করা।
২। বৃষ্টির পানি বর্ষাকালে রেইন ওয়াটার পাইপের মাধ্যমে রির্জাভারে রির্জাভ করে ব্যবহার করা। চিত্র ক অনুযায়ী
৩। ঢাকার চার পার্শ্বে নদী সমূহ দূষণ মুক্ত করে নদীর পানি শোধন করে সরবরাহ করা।
৪। ঢাকার চার পার্শ্বে নদী সমূহের নাব্যতা ঠিক রাখার জন্য ড্রেজিং করা। কারণ গভীর জলাধার বেশীর ভাগই রিচার্জ হয় গভীর নদী, উজান এলাকা ও পাহাড়ী এলাকা থেকে।
৫। নদীর তীর উচূঁ করে উচূঁ স্থানে গভীর নলকূপ বসানো যেতে পারে। যার উৎস হতে গভীর জলাধারে পানি প্রবেশ ও উচুঁ স্থান থেকে পাম্পে পাইপ নেট ওয়ার্কের মধ্যে পানি সরবরাহ করলে পানির চাপ বৃদ্ধি পাবে।
৬। ভবিষ্যতে নির্মিতব্য বাড়ী সমূহ রাস্তা হতে ৫ ফুট উপরে নির্মাণ করে নিচে মাটি বা ভূমি স্তর উম্মুক্ত রাখা যেখানে বৃষ্টির পানি ও গোসলের পানি রিচার্জ করানো যায় এতে পানির অগভীর স্তরের সাম্যতা বজায় থাকবে। চিত্র খ অনুযায়ী
৭। পানীয় জল ও সাধারণ ব্যবহার্য জল সরবরাহ আলাদা করা।

ঢাকার পানি সমস্যা সমাধানে ওয়াসার পরিকল্পনা পদ্মা নদী হতে পানি এনে শোধন করে সরবরাহ করা।কিছু দিন পূর্বে কোন এক সাংসদের মুখে শুনা গেছে বঙ্গোপসাগর থেকে পানি এনে শোধন করে সরবরাহ করা। এখানে প্রশ্ন জাগে পদ্মা বা বঙ্গোপসাগর থেকে পানি আনার খরচের চেয়ে ঢাকার চার পাশের নদী দূষণ বন্ধ করার খরচ কম না বেশী। এ পর্যন্ত নদী দূষণ বন্ধে কার্যকরা পদক্ষেপ কি হতে পারে ও এতে ব্যয কি পরিমাণদাড়াতে পারে এমন কোন জরিপ বা হিসাবের কথা আমার জানা নাই। এ ব্যাপারে ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশন তথা সরকার আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা সফল হতে বাধ্য যা নগর বাসীর অন্যতম সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভুমিকা রাখবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ঐ দিন বেশী দূরে নয় যে দিন হাতের নিকট পানি হয়ত পাওয়া যাবে। কিন্তু পান যোগ্য পানি পাওয়া যাবে না। আর তখনই দেখা দিবে জাতিতে জাতিতে দাঙ্গাঁ, হানাহানি, দেশে দেশে যুদ্ধ কিংবা বিশ্বযুদ্ধ হলেও অবাক হ্ওয়ার কিছুই থাকবে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×