somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলালিংকের ডিজিটাইলাইজেশান ও কর্মী ছাটাই: বাংলালিংক কি তাহলে এতদিন এনালগ ছিল!!

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলালিংক সিইও এরিক অস এক সংবাদ সন্মেলন করেন। সংবাদ সন্মেলনে তিনি বাংলালিংকের ভবিষ্যত পরিকল্পনা, চলমান কর্মী অসন্তোষ ইত্যাদি নানান বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন। সন্মালনে প্রদত্ত বক্তব্য পরদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘যোগ্য কর্মীরাই থাকবেন বাংলালিংকে’, ’ডিজিটাল কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে বাংলালিংক’, ’কর্মীর জন্য সসন্মানে বিদায় নেয়ার সুযোগ রেখেছে বাংলালিংক’ ইত্যাদি নানান শিরোনামে ফলাও করে ছাপা হয়েছে যা ইতোমধ্যেই জনমনে নানা ধরণের বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। উক্ত সংবাদ সন্মেলনে জনাব এরিক অস কথিত বাংলালিংকের ডিজিটাল রুপান্তর, কর্মীদের অদক্ষতা-অযোগ্যতা, স্বেচ্ছা বিচ্ছেদ কার্যক্রম বা ভিএসএস ও ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে কিছু বিষয় পরিস্কার করা দরকার-

সংবাদ সন্মেলনে সিইও এরিক অস বলেছেন- ’বাংলালিংক ডিজিটাল হচ্ছে।.. এ জন্য প্রথম দরকার কর্মীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা। যেসব কর্মী দক্ষতা দিয়ে গ্রাহকদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন, তারাই হবেন বাংলালিংকের নতুন পথচলার সাথি।’ তিনি দাবী করেছেন, বাংলালিংককে ডিজিটাল করতেই নাকি বর্তমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলালিংকের চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য আসলে কি সে বিষয়ে কথা বলার আগে বাংলালিংকের কথিত ডিজিটাল রুপান্তর প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা দরকার।
যারা মোবাইল টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারা খুব ভাল করেই জানেন- গোটা মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তিটাই ডিজিটাল। ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিং এর উপরই এই মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমটি দাড়িয়ে। ফলে অন্যান্য অপারেটরের মতো বাংলালিংক শুরু থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই সেবা দিয়ে আসছে। তাহলে বাংলালিংকের পক্ষে নতুন করে ডিজিটাল হওয়া কি ভাবে সম্ভব? এখন যদি নতুন করে ডিজিটাল হওয়ার কথা বলা হয়, তাহলে এতদিন কি বাংলালিংক এনালগ ছিল? ফলে বাংলালিংক সিইও এর নতুন করে ডিজিটাল হওয়ার কথাটি পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।



আসলে ডিজিটাল রুপান্তরের কথাটি বলা হয়েছে কর্মী ছাটাইকে গ্রহন যোগ্য হিসেবে হাজির করতে- যেন সাধারণ মানুষের মনে হয়, যেহেতু বাংলালিংকের ডিজিটাল রুপান্তর ঘটছে, তাই যেসব কর্মী সেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেনা, তাদেরকেই ছাটাই করা হচ্ছে। বস্তুত বাংলালিংক কর্মীরা প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১১ বছর ধরেই ডিজিটাল প্রযুক্তির মধ্যকার নানান রকম রুপান্তরের মধ্যে দক্ষতার সাথেই নেটওয়ার্ক তৈরী ও পুনর্গঠনের কাজটি সফলভাবে করে আসছেন। গত কয়েক বছরে টুজি থেকে থ্রিজিতে যে রুপান্তর ঘটলো সেটিও বাংলালিংকের কর্মীরা দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। এখন যদি থ্রিজি থেকে ফোরজিতে রুপান্তর ঘটে, তাহলে সেটিও যে বাংলালিংক কর্মীরা সফল ভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। আসলে কোন টেকনোলজি বিষয়ে বুনিয়াদি শিক্ষা থাকলে সেই টেকনোলজিতে যে পরিবর্তনই ঘটুক না কেন, প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এর মাধ্যমে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাক্তি তার সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। প্রযুক্তির দুনিয়ায় এভাবেই সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়, বাংলালিংকও এতদিন এভাবেই নেটওয়ার্ক বিস্তারের কাজটি সম্পন্ন করেছে। কাজেই নতুন করে ডিজিটাল হওয়ার কথা বলা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে বাংলালিংক ম্যানেজমেন্টের ডিজিটাল ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।

সংবাদ সন্মেলনে জনাব এরিক অস একদিকে বলেছেন, যোগ্য ও দক্ষ কর্মীরাই ডিজিটাল বাংলালিংকে টিকে থাকবেন, অন্যদিকে তিনি বাংলালিংকের সকল কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছা বিচ্ছেদ কর্মসূচী বা ভলান্টারি সেপারেশন স্কিম (ভিএসএস) ঘোষণা করেছেন। প্রশ্ন হলো, স্বেচ্ছা বিচ্ছেদ কর্মসূচী কি দক্ষ ও যোগ্য কর্মী বাছাইয়ের কোন প্রক্রিয়া হতে পারে? নাকি এটা দক্ষ ও যোগ্য কর্মী বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া? কথিত ডিজিটাল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে যে দক্ষ ও যোগ্য কর্মীরা বাংলালিংক ছেড়ে চলে যাবেন না তার কি নিশ্চয়তা? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, যে কর্মীরা ১১ বছর ধরে নানা রকম ডিজিটাল রুপান্তরের মধ্যে দিয়ে, কারিগরী নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলালিংককে ৩ কোটিরও বেশি গ্রাহককে সেবা দান কারী দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর হিসেবে গড়ে তুলেছেন, তারা আজকে হঠাৎ অদক্ষ ও অযোগ্য হয়ে গেল? এই কর্মীরা তো দেশের শীর্ষ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাশ করে কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী হিসেবেই বাংলালিংকে কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন। তাহলে আজকে কোন যুক্তিতে তাদের একটা অংশকে অযোগ্য ও অদক্ষ বলে অবমাননা করা হবে? উপযুক্ত কর্মপরিবেশ থাকলে দিনে দিনে মানুষের প্রযুক্তিগত দক্ষতা তো বাড়ে! দক্ষতা ও যোগ্যতা না থাকলে এই কর্মীরা ১১ বছর ধরে সফল ভাবে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করলেন কিভাবে? বাংলালিংকে তো প্রতিবছর কঠোরভাবে কর্মীদের পারফরমেন্সের মূল্যায়ন (এনুয়াল পারফরমেন্স এসেসমেন্ট ) করা হয়- কর্মীদের ব্যাক্তিগত পারফরমেন্স ও কোম্পানির টার্গেট অর্জনে তাদের ভুমিকা মূল্যায়ন করেই তাদের বার্ষিক বোনাস ও বেতনের ইনক্রিমেন্ট ঘোষিত হয়। কই গত ১১ বছরে তো শোনা যায় নি যে বাংলালিংকের কোন কর্মী এত অদক্ষ ও অযোগ্য যে তাকে ছাটাই করতে হবে! তাহলে কোম্পানিতে জয়েন করার দুই মাসের মাথায়ই জনাব এরিক অস কোন জাদু বলে এবং কোন জাদুর মাপকাঠি দিয়ে বাংলালিংকের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মীদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা আবিস্কার করে ফেললেন!

বস্তুত ডিজিটাল রুপান্তর ও কর্মীদের অদক্ষতার কথা সংবাদ সন্মেলন করে ঘোষণা করার উদ্দেশ্য কর্মী ছাটাই কে জায়েজ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। সারাদুনিয়া ব্যাপি মুনাফা সর্বোচ্চ করণের জন্য কর্পোরেট কোম্পানি যখন কর্মী ছাটাই করে তখন প্রায়শই অদক্ষতা ও অযোগ্যতার অযুহাত দাড় করায়। বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিম্পলকমও এর ব্যাতিক্রম নয়। গত ২০১৩-১৪ সালে পাকিস্তানে ভিম্পলকমের মালিকানাধীন মোবিলিংকেও ব্যাপক ভাবে কর্মী ছাটাই করা হয়- উদ্দেশ্য ছিল সেখানকার ওয়ারিদ টেলিকমের সাথে মার্জ করার আগে যতবেশি সম্ভব কর্মী কমিয়ে নেয়া। কিন্তু ছাটাই কার্যক্রম জায়েজ করার জন্য সেখানেও বাংলালিংকের মতোই উন্নত গ্রাহক সেবার জন্য ডিজিটাল রুপান্তর, কোম্পানি পুনর্গঠন, কর্মীদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা ইত্যাদি দোহাই দেয়া হয়।

বাইরে কর্মীদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কথা বলা হলেও বাংলালিংক ম্যানেজমেন্টের আসল উদ্দেশ্য যে যেকোন মূল্যে কর্মী সংখ্যা হ্রাস করা, তা সকল কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছা বিচ্ছেদ কর্মসূচী বা ভলান্টারি সেপারেশন স্কিম (ভিএসএস) ঘোষণা এবং ভিএসএসকে কেন্দ্র করে ম্যানেজমেন্টের কর্মকান্ড থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। নামের মধ্যে স্বেচ্ছা বা ভলান্টারি কথাটি থাকলেও বাংলালিংক ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কর্মীদেরকে এই সেপারেশন স্কিম গ্রহণ করার জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, ভিএসএস এর সুযোগ একবার চলে গেলে পরে কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই চাকুরি হারিয়ে পস্তাতে হতে পারে- এরকম ইঙ্গিত দিয়ে কর্মীদের মধ্যে ভয় ভীতি সঞ্চার ও ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কাজেই এ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই যে, আগামী দিনে কর্মী ছাটাইয়ের গ্রাউন্ড তৈরী করতেই বাংলালিংকের সিই্ও এরিক অস গত ২৩ ফেব্রুয়ারির এই সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। আশা করি, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বাংলালিংকের কথিত ডিজিটাল রুপান্তরের প্রকৃত স্বরুপ, কর্মীদের দক্ষতা-যোগ্যতা সম্পর্কিত অপপ্রচরাণা, স্বেচ্ছা বিচ্ছেদ কার্যক্রম বা ভিএসএস এর উদ্দেশ্য ও ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ে বাংলালিংক ম্যানেজমেন্টের প্রকৃত ভূমিকা সম্পর্কে সকল বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×