আজ থেকে পাঁচ বছর আগে চিন্তার যে প্যাটার্ন ছিলো আজ আর তা নেই। তার মানে কি সেই চিন্তা ভুল ছিলো ? না ছিলো না। তখনকার বয়স , অভিজ্ঞতা ,পড়ালেখার নিরিখে চিন্তার প্যাটার্ন তৈরি হয়েছিলো। পাঁচ বছর আগের চিন্তা পাঁচ বছর আগেই ঠিক ছিলো । এখন আর নেই। আজ যে চিন্তা করছি , তা পাঁচ বছর পরে একি রকম থাকবে তার কোন মানে নাই। তার মানে কি আজকের চিন্তা ভুল ? না ভুল না। আজকের চিন্তা আজকের জন্য ঠিক।
মানুষের যেমন বিবর্তন হয় চিন্তা ভাবনারও হয়। মনে করেন মানুষের যদি বিবর্তন না হতো তাহলে আজকে কেউ মানুষ থাকতো না। থাকতো এক কোষী প্রানী এমিবা। ঠিক সেই রকম। চিন্তার যদি রুপ বদল না হয় তাহলে উন্নতির কোন রাস্তা নাই।
তো চিন্তার উন্নতি ক্যামনে হবে? এইটা একটা জটিল প্রশ্ন। চিন্তা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। কোন কিছুকেই প্রথমে না করা যাবে না।
যেকোন নতুন কিছু সামনে আসলে তার প্রস কন ভাবতে হবে।
আমাদের প্রধান সমস্যা হলো, জন্ম সুত্রে আমরা যা পেয়েছি অথবা যা পেয়ে আমরা কমফোর্ট জোনে আছি তার বাইরে ভাবতে পারি না। এই পারিবারিক সম্পত্তি এবং আরাম থেকে বেরোতো হবে। মানে বাবল ব্রেক করতে হবে। এইটা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমরা ভয়ে মরি, না জানি কি হয়। ম্যাক্সিম গোর্কির "মাদার " পড়েছেন ? সেখানে কারখানার শ্রমিকরা বছরের পর বছর নির্যাতন, অন্যায় সহ্য সহ্য করতে করতে একদিন ভাবা শুরু করলো এইটাই জীবন । এইটাই স্বাভাবিক। এর বাইরে কিছু নাই। যখন পাভেল বিপ্লবের ডাক দিলো তখন অধিকাংশ মানুষ মুখ বেকিয়ে বললো, যাহ এইরকম হয় নাকি। এর নাম বাবল জোন । এর নাম অভ্যস্ততা। এইটা ব্রেক করতে পারলে চিন্তা হাফ মুক্তি পাবে।
বাকি অর্ধেক মুক্তি পাবে যখন আপনি নিজেকে মুক্ত করে দিবেন। নিজেকে মুক্ত করা মানে কি ? নিজেকে মুক্ত করা মানে হলো, যখন আপনি নিজের নাগরিকত্ব নিয়ে ভাববেন তখন ভাববেন আপনি এই মহাবিশ্বের নাগরিক, যখন ধর্ম নিয়ে ভাববেন , তখন ভাববেন আপনি আগে মানুষ তারপর অন্য কিছু। যখন শিক্ষা নিয়ে ভাববেন , তখন সুনির্মল বসুর মতো ভাববেন, বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র। আমার মতে, মাঝে মাঝে শিক্ষক !
যখন এই কাজটা করতে পারবেন তখন শুরু করতে পারেন আসল পড়ালেখা। আসল পড়ালেখা বলেছি কি কারনে ? যখন একজন কম্যুনিস্ট মার্ক্স পড়ে তখন সে কম্যুনিষ্ট হিসাবে পড়ে। কিন্তু আপনি যখন মার্ক্স পড়বেন তখন আপনি থার্ড পার্টি হিসাবে পড়বেন। তখন আপনি না কম্যুনিষ্ট , না মুসলিম, না হিন্দু , না অন্যকিছু। তখন আপনি পাবেন আসল মজা । তখন আপনার চিন্তা কোন বেড়া দিয়ে আটকানো যাবেনা। আপনি ইচ্ছা করলে যে কোন তত্ব কে ছুড়ে ফেলে দিতে পারবেন অথবা আলিংগন করতে পারবেন । আপনি সংস্কার মুক্ত হবেন। এইটা সব বই পড়ার ক্ষেত্রেই কাজে লাগাতে পারবেন এবং লেখকের সাথে তর্ক করতে পারবেন।
এই তর্ক করার সক্ষমতা চিন্তা করার সক্ষমতার সাথে যুক্ত । মানে আপনি চিন্তা করতে পারছেন বলেই তর্ক করতে পারছেন।
ব্যাপারটা বোঝা গেছে ? বুঝলে বুজপাতা আর না বুঝলে -----
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৫