আমি গাজীপুরের গহীন গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। আমি শুধু গ্রামের নামটা জানি। আর কিছুই জানিনা। আমার শরীরে গতরাতের পরা কুচকানো টি শার্ট, মুখের ভেতর সকালে ব্রাশ না করা দাঁত, বুকের ভেতর কম্পমান আর্দ্র হৃদয়, চোখের ভেতর জমা এক সমুদ্র জল। আমি মানুষের কাছে শুনে শুনে মাশরাফির গ্রামের বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করেছি । মাশরাফি মারা গেছেন।
মাশরাফিকে আমি কাপ্তান বলে ডাকতাম। ও ছিলো আমার রুমমেট, ভাই, বন্ধু। দুই মাস ও আমার সাথে ছিলো। এই দুই মাসের সৃতী আমাকে ফেরারী আসামীর মতো তাড়া করতে করতে মাশরাফির বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। এই অতি রুপবান যুবক আমার প্রতি যে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেখিয়েছে তার ঋন শোধ করার সুযোগ না দিয়ে সে অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে এই স্বার্থপরতা আমি মানতে পারছি না।
মাশরাফির বাড়িতে যখন পৌছালাম তখন সূর্য মধ্য গগনে। একটা খাটিয়ার উপরে সাদা কাফনের ভেতর পচিশ বয়সি যুবক নাকের ভেতর তুলা ঢুকিয়ে শুয়ে আছে। আমার ইচ্ছা করছে , নাক থেকে তুলা খুলে ফেলতে যাতে নিঃশ্বাস নিতে পারে। আমি খাটিয়ার পাশে বসে মাশরাফির মাথায় হাত রাখলাম। ফর্সা মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। মাশরাফির মা , আমার কাছে এসে বললো, বাবাগো তুমি কে? আমি আমার নাম বললাম । উনি আমার বুকের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লো। বললো, বাবাগো , আমার সোনা পাখি তোমার কথা কতো আমাকে বলেছে। আমি চোখের জলের বাধ তুলে নিলাম। মাশরাফির মায়ের চোখের জলের ধারা , আমার চোখের জলের সাথে এক হয়ে গেলো। দূরে একটা পাতা শুন্য বাচ্চা পেয়ারা গাছের নিচে এক যুবতি ডুকরে কাদছে । তাকে আমি চিনি। মাশরাফির প্রেমিকা। তার হৃদয় ঘেষে বসার মানুষ আজ আর নাই। হায়!
সন্ধার দিকে রুমে ফিরলাম।মাশরাফির গিটার পড়ে আছে এক কোনায়। কোন একদিন মুখ ফস্কে বলেছিলাম, আমি গিটার শিখবো । নিজের প্রিয় গিটার দিয়ে বলেছিলো, ভাই রাখেন এইটা। আমার কথা মনে থাকবে এইটা দেখে।
এতোদিন পর মাশরাফির নাম্বার ইমোতে ভেসে উঠলো। আমার মনে হলো , ছেলেটা বেচে আছে। তাকে লিখতে ইচ্ছে হলো, হ্যালো কাপ্তান।