somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেইন

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক

শতছিন্ন কোট, তালি দেওয়া প্যান্ট আর হ্যাটের একপাশে ইঁদুরে কাটা ফুটো দেখে অনায়াসে অনুমান করা যায়, লোকটা ভবঘুরে। একচতুর্থাংশ খাবারে ভর্তি একটা লরি তীব্রবেগে চালাচ্ছে। পাশের সিটেই গাদা গাদা খাবার রাখা। কিছুক্ষণ পর পর খাবলা দিয়ে তুলে নিয়ে মুখে পুরছে সে। গত এক সপ্তাহে তার খাবার জোটেনি। লোকের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খেয়ে, কখনও না খেয়ে দিন কাটিয়েছে। রাক্ষুসে ক্ষিধে জন্মানোটাইতো স্বাভাবিক।

ইন্সট্যান্ট খাবারে ভর্তি এই লরিটা দোকানে দোকানে অর্ডার করা খাবার দেওয়ার পর অবশিষ্ট অংশ নিয়ে ফ্যাক্টরির দিকে রওনা করেছিল। পথে এই ভবঘুরে হাইজ্যাক করে খাবারের লরিটা। কয়েকদিন আর খাবারের ভাবনা নেই। তাই যেদিকে চোখ যায়, যাচ্ছে সে।

আপনমনে ড্রাইভ করতে করতে কখন যে শহরের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে, নিজেই বলতে পারবে না। রাস্তাটা ভালো না। এবড়ো থেবড়ো মাটির রাস্তা। সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসায় ভাল করে দেখতেও পাচ্ছে না। ঝাঁকি খেতে খেতে ধীরতালে চলছে গাড়ি।

রাত কাটাবার মত কোন ঘরবাড়ি চোখে পড়ল না তার। রাস্তার দু'পাশে নজর রেখে গাড়ি নিয়ে আরো সামনের দিকে এগোল সে। যেন অনন্তকাল পরে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি দেখতে পেল। হেডলাইটের আলোয় দেখল, বাড়ির চুনসুরকি খসে গিয়ে ভিতরের কাঠামো বেরিয়ে পড়েছে। তাতে আবার শেওলা জন্মে কালচে হয়ে আছে।

ভবঘুরে লোকটি অন্ধকার বাড়িতে ঢুকে, কোনদিকে না তাকিয়ে মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে সূর্যদেবের আলো চোখে পড়ার আগে সেই ঘুম আর ভাংলো না।

চোখ কচলাতে কচলাতে আশেপাশে তাকালো সে। সারি সারি কফিন সাজানো। তারমানে সে একটা সমাধিকক্ষে রাত কাটিয়েছে! রাতে যদি এই কথাটা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝত, তাহলে এত আরামের ঘুমটা ঘুমাতে পারতো? কিন্তু, কোন প্রেতাত্মাও তো তার ঘাড় মটকে দেয়নি। তবে কি এই সমাধিকক্ষে প্রেতাত্মারা থাকে না?

হঠাতই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষটার মনে অদ্ভুত খেয়াল এল। তার কেন যেন মনে হল, কফিনগুলোতে শব নেই। নাস্তা করতে লরিতে গেল সে। ফিরে এসে প্লায়ার্স দিয়ে কফিনের ডালায় আটকানো রূপার পেরেকগুলি খুলে ফেললো। যা ভেবেছিল, তাই। ধুলো জমে আছে। আরো কয়েকটা কফিন খুলে দেখলো সে। সবগুলোতে একই অবস্থা। কিছুক্ষণ বসে রইল থম মেরে। কফিনগুলো সব লোহা কাঠের তৈরি। কাঠের উপর সুন্দর ডিজাইন করা। এত দামি দামি কফিন কেন অবহেলায় পড়ে থাকবে? সে ঠিক করলো এই কফিন গুলো লরিতে করে নিয়ে যাবে এখান থেকে। চড়া মূল্যে না হোক, মোটামুটি দাম পেলেই অনেকদিন ভালোভাবে চলে যাবে তার। ভাবলো, হয়তো কখনো কফিনগুলোতে মানুষের লাশ ছিল। শতশত বছর আগের শব ধুলিতে মিশে যাবে- সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সে এটা ভাবলো না, শত শত বছর আগের শব, তার মানে কফিনগুলোও শত শত বছর আগের। এতগুলোবছর ধরে সমাধিকক্ষে পড়ে থেকেও কফিনগুলি বহাল তবিয়তে থাকার কথা না। সে জানেনা, এগুলো ভ্যাম্পায়ারদের কফিন। আর ভ্যাম্পায়ারদের কফিন, ওরা বিশেষভাবে সংরক্ষণ করে। তবে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পেত, সবচেয়ে রাজকীয় কফিনটার মাথার কাছের সোনার পাতে লেখা আছে, "কাউন্ট ড্রাকুলা!"

দুদিন ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করে ভবঘুরে লোকটি সবগুলি কফিনকে খাবারের লরিতে সরালো। ফিরতে গিয়ে বুঝতে পারলো, গতরাতে অন্ধকারে ড্রাইভ করতে করতে যে পথ ভুলে ট্রান্সেলভানিয়ায় চলে গেছিল। বহু কষ্টে নিকটবর্তী উন্নত শহরে পৌঁছে পানির দামেই কফিনগুলো বিক্রি করে দিলো সে। কারণ, গত কয়েকদিন কফিন ভর্তি লরিটা ড্রাইভ করতে করতে তার মনে হয়েছে কফিনগুলোতে অস্বাভাবিক কিছু আছে। যেটা হয়তো ভয়ংকর অশুভ।

কমদামে পেয়ে এক ব্রিটিশ ধনকুবের কফিনগুলো কিনে, নিম্ন আয়ের দেশের সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের জন্য দান করে দিলেন। সেই দান সফল করার জন্য ওগুলোকে তোলা হল উপমহাদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানো জাহাজের খোলে।

দুই

ফ্রান্সিকাদের পোষা বিড়াল কান্তার তিনটা বাচ্চা হয়েছে। গতকাল গভীররাতে স্টোররুম থেকে বিড়ালের কান্না শুনতে পায় সে।স্টোররুমের টিভির কার্টুনে বাচ্চাগুলিকে গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছে ফ্রান্সিকা। চোখ ফোটেনি বাচ্চাগুলোর। চোখ কুঁচকে রেখেই মিউ মিউ করে করুণ সুরে কাঁদছে ওরা। হয়তো মাকে খুঁজছে।
ফ্রান্সিকা নিজের ঘরে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।

পরদিন খুব ভোরে বিছানা ছাড়লো ফ্রান্সিকা। বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই আবছা আলোয় স্টোররুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে কান্তাকে বের হতে দেখলো। মুখে কী যেন ধরে রেখেছে। ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো, কান্তার মুখে বিড়ালছানা! দৌড়ে গিয়ে মাকে বললো, 'মা! কান্তার না বাচ্চা হয়েছে …'
ওর কথা শেষ না হতেই মা হাসিমুখে বলল, 'যে ঘরে বিড়ালী বাচ্চা দেয়, সেই ঘরে সৌভাগ্য আসে।'
'যত্তোসব কুসংস্কার!' মুখ ঝামটা দিয়ে ওঠে ফ্রান্সিকা।
'আমি ওটা বলতে আসিনি। আমি বলতে চেয়েছি, কান্তা এখন বাচ্চাগুলিকে মুখে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।'
'বিড়াল বাচ্চা দেবার পর তার বাচ্চাদেরকে নিয়ে সাতটা জায়গা বদল করে। নিরাপত্তার জন্য।'
'তারমানে কান্তা বাচ্চাগুলিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে!' বলে আর দাঁড়ালো না ফ্রান্সিকা। ছুট মারলো স্টোররুমের দিকে। কিন্তু ততোক্ষণে বিড়ালটা তার বাচ্চাদেরকে স্থানান্তর করে ফেলেছে। টিভির শূণ্য বাক্সটা যেন ফ্রান্সিকাকে উপহাস করছে।

তিন


আজ দুদিন হল তার চোখ ফুটেছে। চোখ ফুটেই সে তার মাকে দেখতে পেল। সেই সাথে তার ভাই দুইটাকেও দেখতে পেল। ওরা দুইজন কাড়াকাড়ি করে মায়ের দুধ খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেও সেই প্রতিযোগিতায় যোগ দিল।

মায়ের দুধ ভরপেট খেয়ে নিয়ে চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। ঘুম ভেঙ্গে দেখে, রাত হয়ে গেছে। কিন্তু তার আশেপাশে কেউ নেই। মা তো মাঝেমাঝেই বাইরে যায়, কিন্তু ভাইদুটো গেল কই? ছোট্ট ঘরের এদিক ওদিক খুঁজলো সে। কোথাও নেই। ঘরের চারদিকে দেয়াল। উপরে খোলা। মাকে ওখান দিয়েই বের হতে দেখেছে সে।

রাত পেরিয়ে গেল। মা ফিরলো না। আলো ফোটার পর আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো সে। তখনো মা'কে ফিরতে না দেখে সে বাইরে বের হবার সিদ্ধান্ত নিলো। দেখাই যাক না, কী আছে বাইরে!

মায়ের মত লাফিয়ে ঘরের চূড়ায় উঠতে চেষ্টা করলো সে। মাঝপথে যাবার আগে অভিকর্ষের টানে মাটিতে পড়ে গেল চিত্পটাং হয়ে। আবার চেষ্টা করল সে। আবার পড়ল। আবার চেষ্টা করল। আবার পড়ল। আবার চেষ্টা করল। আবার পড়ল।
কতবারের চেষ্টায় জানে না, কিন্তু অবশেষে চূড়ায় উঠতে পারল সে। তাদের ছোট্ট ঘরটা আরেকটা বড় ঘরের মেঝেতে রাখা। ওঘর পেরিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো সে।

কিছুক্ষন গন্তব্যহীন ভাবে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালো সে। একটা পরিচিত গন্ধ বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গন্ধটা খুব আপন মনে হল তার কাছে। গন্ধ শুকে শুকে গন্ধের মালিকের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলো সে। গন্ধটা অনুসরণ করে করে একটা বিশাল বাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছুলো। তবে তার আগে আরো অনেকগুলি প্রাণী দেখেছে সে। বেশিরভাগ প্রাণীগুলিই দুইপায়ের। বিশালাকার! যারা সুযোগ পেলেই সেই পা দিয়ে লাথি দিয়েছে তাকে। তার নিজের মত প্রাণীও দেখেছে। থাবা বাড়িয়ে খামচি দিয়েছিল তাকে। একটা খামচি খেয়েই শিক্ষা হয়ে গেছে তার। এরপর যদি কেউ খামচি দিতে আসলেই ফিরতি খামচি দিয়ে দিয়েছে সে। এমনকি দুইপায়ের প্রাণীগুলি লাথি দিতে এলে তাদেরকেও ছাড় দেয়নি। তারমত চারপায়ের আরেকটা প্রাণী দেখেছে। তাকে দেখেই প্রাণীগুলি ঘেউঘেউ করতে করতে ছুটে এসেছিল। ঐ প্রাণীটার সাথে খামচি দিয়ে পার পাবে না বুঝতে পেরেই ঝেরে দৌড় মেরেছে সে।

বহুক্ষণ চলার পর একটা বাড়ির সামনে এসে পরিচিত গন্ধটা তীব্র হয়ে এল। বাড়িতে ঢুকবে কি ঢুকবে না, সেটা নিয়ে দ্বিধায় ভুগলো কিছুক্ষন। ভিতরে কোন ধরণের প্রাণী আছে কে জানে? কিন্তু ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে তো চলবে না। তার মনে হচ্ছে, দুইপায়ের প্রাণীগুলিই থাকবে। ওগুলোর পা থেকে সাবধানে থাকলেই চলবে। তেমন ভয়ংকর কিছু না হলে খামচি দিয়েই কাজ চালাতে পারবে। তাছাড়া ঘেউঘেউ প্রাণীগুলোকে দাঁত খিচিয়ে তেড়ে আসতে দেখেছিল সে। দরকার পড়লে সে কেন দাঁত ব্যবহার করতে পারবে না?

#
দুদিন পর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল ফ্রান্সিকা। বাসায় কেউ নেই। মা গেছে চার্চে। রাস্তার দিকে চোখ পড়তেই অবাক হয়ে গেল সে। নীরব রাস্তায় কান্তার একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে এদিকেই চেয়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে গেইট খুললো সে। মা বলেছিল, কান্তা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে চার্চে গিয়ে উঠেছে। মা নাকি দেখেছে ওগুলোকে। তখনো জানেনা কান্তাকে মেরে ফেলাতেই বাচ্চাটা চার্চ ছেড়ে এইবাড়িতে আবার ফিরে এসেছে।

চার

রাস্তায় দেখা দুইপায়ের একটা প্রাণীকে দরজা খুলতে দেখলো সে। হাত বাড়িয়ে ডাকছে। ঠিক এই মূহুর্তেই সে বুঝতে পারলো, এটাই তার পরিচিত গন্ধের মালিক। কেন গন্ধটাকে আপন লাগে বুঝতে পারছে না সে। সে জানে না, তার জন্ম হয়েছে এই বাড়িতে। আর সেই সময় একরাতে মাকে না পেয়ে যখন সে কাঁদছিল, তখন এই গন্ধের মালিক তার ঘরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল- তাই আপন লাগে।
তাহলে এই প্রাণীটাই তার মালিক?
মালিক এখনো হাত বাড়িয়ে ডাকছে। এখনো পা এগিয়ে লাথি দিতে আসেনাই। তবুও মনে সন্দেহ নিয়ে একপা দুইপা করে এগিয়ে যেতে লাগল সে। ঘরে ঢোকার আগে আরেকবার থমকে দাঁড়ালো সে। মালিককে ভালোমত দেখে নিচ্ছে। একে ভয় পেতে হবে কিনা বুঝতে পারছে না। তাকে ইতস্তত করতে দেখে মালিক ঘরের ভিতরে গিয়ে খাবার নিয়ে এল। হাত বাড়িয়ে খাবার এগিয়ে দিল। নিজের সহজাত প্রবৃত্তির বশে মালিককেই খামচি মেরে বসলো। তবুও মালিক লাথি মারলো না তাকে। বরং বলল, 'খাবার নে! মারবো না। নে? এই নরি! নে!'
তাহলে তার নাম নরি?
নরি একটু ইতস্তত করে খাবার টুকু মুখে নিলো।

পাঁচ

শতশত বছর ঠান্ডা পরিবেশে নির্জীবভাবে পড়ে থাকার পর আবহাওয়া বদলে যাওয়ায় ঘুম ভাঙ্গে তার। ঘুম ভেঙ্গেই প্রথম যে বোধটুকু অনুভব করে তা হলো প্রচন্ড খিদে। সেই সাথে পিপাসা। এটা ছাড়া আর কোন কিছুই মাথায় নেই তার। সে কে, কোথায় থাকে, এখন কোথায় আছে- তার কোন ধারণাই নেই। এই মূহুর্তে সে শুধু একটা জিনিসের কথাই ভাবতে পারছে, তা হল রক্ত!

বাক্সের ঢাকনা সরিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল সে। একটা কবরখানায়। এখানে কী করে এল সে?
এত ভাবনাচিন্তা করতে ইচ্ছে করছে না। খিদেয় চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে। দূর্বল শরীরটা টেনে এগোতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাতই সামনে একটা মেনি বিড়াল দেখল সে। খপ করে ধরে ঘাড় মটকে বিড়ালটার শরীরের রক্তটুকু খেয়ে নিল চেটেপুটে। পেট খানিকটা ঠান্ডা হতেই কফিনে গিয়ে শুয়ে পড়লো আবার। ভোর হতে আর দেরি নেই।

সারাটাদিন কফিনে শুয়ে শুয়ে খিদেয় ছটফট করলো সে। ছোট একটা প্রাণীর রক্তে কী আর শত শত বছরের রাক্ষুসে খিদে মেটে? মানুষের রক্ত লাগবে তার। কিন্তু মানুষের কাছে কী করে পৌঁছুবে সে? কী করলে প্রথম সুযোগেই রক্ত খেতে পারবে?
সারাটাদিনে একফোঁটাও ঘুমাতে পারলো না। অনেক ভেবে একটা ভাল উপায় বের করেছে। এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই সে মানুষের গলায় কামড় বসাতে পারবে।

ছয়

সতর্ক চোখে চেয়ে আছে নরি। অন্ধকারেও বিড়ালটার চোখ ধ্বকধ্বক করে জ্বলছে। ওর দিকে যে চোখজোড়া তাকিয়ে আছে, সেগুলি ওর চোখের মতোই জ্বলজ্বলে! তফাত এটুকুই, ওগুলি টকটকে লাল। চোখের মালিক ওর মালিকের মতোই দুইপায়ের প্রাণী। কিন্তু ও খুব ভালোমতোই বুঝতে পারছে, এই প্রাণীটা মোটেও ভাল কিছু নয়। চাপা গলায় গরগর করছে তাই। বুঝিয়ে দিচ্ছে, আর এক পা এগোলে ভাল হবে না।

নরির গরগর আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল ফ্রান্সিকার। বিড়ালটাকে প্রচন্ড ভালোবাসে সে। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাবার সময় বড় রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে ওকে। বিকালে রাস্তায় গিয়ে বসে থাকে। ও আদর করে খাবার খেতে না দিলে, খায় না। রাতে ওর পায়ের কাছে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ে। যতবার পা দিয়ে ঠেলে বিছানা থেকে ফেলে দেয়, ততোবার বিছানায় উঠে আসে নরি। রাতে বাথরুমে যাবার জন্য বিছানা ছাড়লে, নরিও গিয়ে বাথরুমের সামনে বসে ওকে পাহারা দেয়। এমন একটা কেয়ারিং বিড়ালকে কি ভালো না বেসে থাকা যায়?

চোখ কচলাতে কচলাতে লাইট জ্বাললো ফ্রান্সিকা। বিড়ালটা এত রাতে উঠে গরগর করছে কেন কে জানে? কলাপসিবল গেইটের সামনে দুইপায়ের উপর বসে আছে। গেইটের সামনে গিয়ে কিছুই দেখলো না ফ্রান্সিকা। নরিও কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। ওকে শুতে ডেকে ফ্রান্সিকা নিজেও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। নরির চোখের দিকে একবার তাকালে দেখতে পেত, ওগুলো আর রেডিয়াম রং নেই, টকটকে লাল হয়ে গেছে।

সাত

পরিকল্পনামত কাজ করতে পেরেছে সে। এই এলাকার লোকে বিড়াল পোষে। বিড়ালদের সে বশ করে নিয়েছে। এই বিড়ালগুলির মাধ্যমেই তাদের মালিকদের কাছে পৌঁছাতে পারবে। প্রতিদিন বড়জোর একজনকে টার্গেট করলেই দিন চলে যাবে তার।

খুব সহজেই পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার খবর হয়ে গেল তার কর্মকান্ড। ক্রমাগত মানুষ হারানোর ঘটনায় এলাকার সবাই দিশেহারা। কীভাবে এসব ঘটছে, কে করছে, তা নিয়ে কল্পনা জল্পনার কোন অন্ত নেই। কিন্তু ঘূর্ণাক্ষরেও কেউ ভ্যাম্পায়ারের কথা মাথায় আনেনি। তার কাজেও বিঘ্ন ঘটার অবকাশ হয়নি।

প্রচন্ড খিদে নিয়ে দিনে ঘুমিয়ে থাকে সে। রাতে বের হয় শিকারে। যে বিড়ালটার মাধ্যমে এই এলাকার সমস্ত বিড়াল বশ করেছে, সেই বাড়িতেই এখন পর্যন্ত হানা দেওয়া হয়নি। আজ না হয় ওই বাড়িতেই ঘুরে আসা যাক?

আট

নরি ইদানিং কেমন উল্টাপাল্টা আচরন করছে। রাত হলেই বাইরে বের হবার জন্য ছটফট করে। কোথায় যেন ছুটে যেতে চায়। দিনে অবশ্য শান্তই থাকে। যত ঝামেলা করার, সব করে রাতে। তখন ওকে শান্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। হঠাত করে ওর এই অদ্ভুত বন্যতার কোন অর্থ খুঁজে পায়না ফ্রান্সিকা।

সন্ধ্যের পর নরিকে খেতে ডাকলো মেয়েটা। যদিও এখন আর সন্ধায় কিছুই খায় না সে। ফ্রান্সিকা তবুও চেষ্টা করে যায়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম ঘটলো। নরির প্লেটে খাবার দিয়ে ডাকতেই সুবোধ বালকের মত খেতে এল বিড়ালটা। তা দেখে এত খুশি হল ফ্রান্সিকা যে ঠিক করে ফেললো, খাওয়ার পর ওকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসবে।

পূর্ণিমারাত হলেও কালো মেঘে ঢেকে রয়েছে চাঁদটা। ফ্রান্সিকা রাতের বেলা আগেও বহুবার বের হয়েছে। কিন্তু আজকের মত গা ছমছমে অনুভূতি কখনো হয়নি। ব্যাপারটা কী? এমন তো না যে কোন হরর মুভি কিংবা বই পড়ে অন্ধকারে বেরিয়েছে। কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ঘাড়ের নিচে শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছে। ঝট করে পিছনে তাকালো ও। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় নরিকে দুইব্লক দূরে বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলো। অবাক হলো মেয়েটা। এই কিছুক্ষন আগেও না বিড়ালটা ওর পাশে ছিল? এত দূরে গেল কখন? নরির নাম ধরে চিত্কার করে ডাকলো সে। একচুলও নড়ল না প্রাণীটা। একইভাবে বসে রইলো নিশ্চল হয়ে। এমন তো হবার কথা না! নরির এমন অদ্ভুত আচরন করার কারণটা কী? পিছনে ফিরে নরির দিকে হাঁটতে শুরু করলো ফ্রান্সিকা।

সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল মেয়েটা। রাস্তায় উপুড় হয়ে বসেই ও নরির দিকে তাকালো। রক্তচক্ষু মেলে ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে নরি। বিড়ালের চোখ কখনো এত লাল হতে দেখেনি ফ্রান্সিকা। অকারণেই দপ করে নিভে গেল ল্যাম্পপোস্টের আলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে নরির লাল চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখ দুটো মাটির কাছাকাছি অবস্থান ছেড়ে উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো। শিরশিরে অনুভূতিটা ঘাড় ছাড়িয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে মেয়েটার। বিড়ালটা এত উপরে কী করে উঠছে কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না ওর। ঠিক তখনই মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা বেরিয়ে এলো। পূর্ণচাঁদের আলোয় সবকিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। নরিকে আশেপাশে কোথাও দেখল না ফ্রান্সিকা। বরং কালো আলখাল্লা পরা ফ্যাকাশে চেহারার লম্বা একটা লোক ওর দিকে এগিয়ে আসছে। তার লালচোখগুলোয় তীব্র খিদে। ঠোঁট ফাঁক হয়ে যাওয়ায় লোকটার ধারালো শ্বদন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গলায় তার ঠান্ডা ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথে সারা শরীর জমে গেল ফ্রান্সিস্কার। প্রচন্ড ভয়ে হাতপা নাড়াতে পারছে না সে। বহুকষ্টে চেইনের সাথে ঝোলানো ক্রুশটাকে জামার ভিতর থেকে ঝটকা দিয়ে বের করে আনলো সে।

মেয়েটার হাতে ক্রুশ দেখে থেমে গেল সে। না, ক্রুশ তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু ক্রুশটা তার সমস্ত অতীত মনে করিয়ে দিলো। মনে পড়লো কে সে, কী তার পরিচয়। ফিরে গেল প্রায় ছয় হাজার বছর পূর্বের জমানায়।

নয়

কেইনের গল্পটি রূপকথার মত। এডাম এবং ইভের অসংখ্য সন্তান-সন্ততির মধ্যে ছিলো দুই ভাই- কেইন এবং এবেল। প্রচন্ড হিংসান্বিত হয়ে কেইন তার ছোটভাই এবেলকে হত্যা করে। ঈশ্বর কেইনের উপর মারাত্নক ক্রোধিত হন। কেইনের পিতা তার উপর একটি চিহ্ন লাগিয়ে দিয়ে তাকে অভিশপ্ত করেন। কেইন নড নগরীতে নির্বাসিত হয়।

নড নগরীর মানে হল ঘুমের রাজ্য। কিন্তু এখানে ঘুম না, মোহাচ্ছন্নতা কাজ করে। বাস্তব ও কল্পনার মাঝামাঝি জগতের মত যার পার্থক্য করা কঠিন। নড নগরীতে অভিশপ্ত জীবন নিয়ে গন্তব্যহীন ভাবে চলার পথে কেইনের দেখা হয় লিলিথের সাথে। খিদে-পিপাসায় এবং শীতে জর্জরিত কেইনকে লিলিথ আশ্রয় দেয়। একসাথে থাকতে থাকতে একসময় তারা একে অন্যকে ভালোবেসে ফেলে। এদিকে কেইন লিলিথের সাথে থেকে বুঝতে পারে যে লিলিথের অনেক ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে, যা লিলিথ কালো জাদুর মাধ্যমে লাভ করেছে। এই ক্ষমতাগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ায় এগুলো পাওয়ার জন্য কেইন বার বার লিলিথের কাছে তাগিদ দিতে লাগলো। লিলিথ কিছুটা ইতঃস্তত করছিলো তাকে অন্ধকার জগতে আনানোর ব্যাপারে, কিন্তু কেইনের আগ্রহে এক সময় লিলিথ রাজি হয়।

লিলিথ তার হাত কেটে এক বাটি রক্ত কেইনকে পান করতে দিলো। কেইন তা পান করার সাথে সাথে ঈশ্বরের কাছ থেকে তিনজন এঞ্জেলের আগমন ঘটে। প্রত্যেকবার একেক এঞ্জেল কেইনকে এবেল হত্যার অনুশোচনা করতে বলে এবং প্রত্যেকবার কেইন তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর জন্য তাকে তিনটা অভিশাপ দেয়া হয়- আগুন ও সূর্যের আলোর প্রতি দূর্বলতা এবং রক্তের প্রতি আসক্তি।
অভিশাপগুলো পাওয়ার পর নিজের এই নিয়ন্ত্রন ছাড়া সত্ত্বা কেইনকে ভয়ানক অনুশোচনা দেয়। অনিচ্ছায় কিছু হত্যাকান্ডের পর সে খুবই অনুতপ্ত হয়। সে কখনোই খিদে মেটাতে মানুষ হত্যা করার ব্যাপারটি স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। একসময় লিলিথের সাথে সব সম্পর্ক ভেঙ্গে আবারো নড নগরীতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে চলে যায় কেইন।

কিন্তু একা কতদিন থাকা যায়? এক সময় আবারো একাকিত্ব চেপে ধরে তাকে। সে ঠিক করে আবারো সে মানুষের মাঝে ফিরে যাবে। একটি কৃষিভিত্তিক জনপদে সে আবার বাস করা শুরু করে।

সবশেষে নূহ(আঃ) এর মহাপ্লাবনের সময় কেইনের রাজ্যের সব কিছু ধবংস হয়ে যায়। পৃথিবী ধবংসের আগ পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আগুন কিংবা সূর্যের আলো তাকে ধ্বংস করতে না পারলেও অমানুষিক কষ্ট দিতে পারে। আজীবন তাকে অভিশাপগুলোর বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে। এটাই তার শাস্তি। বিপর্যস্ত কেইন সম্পুর্ণ ভাবে নিজের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ভ্যাম্পায়ারের আদি পিতার।

প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর আগে ঘুম ভাঙ্গে কেইনের। নিজের বংশধরদের খুঁজতে বেরিয়েছিল সে। রক্তের গন্ধ শুকে ট্রান্সেলভানিয়ায় ড্রাকুলার দূর্গে ছুটে গিয়েছিল। ড্রাকুলাদের সেই ঘাটিতে গিয়ে সারি সারি সাজানো কফিনে নিজের বংশধরদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছে। তার মধ্য থেকে একটা খালি কফিন বেছে নিয়ে পরম শান্তিতে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল কেইন। ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবেনি তার বংশধরেরা বেঁচে থাকার জন্য শুধু মানুষের রক্তকেই বেছে নেয়নি, বরং কিছু জীবিত মানুষকে তাদের মত জীবন্মৃততে পরিণত করেছে।

নিজেকে চিনতে পেরে কেইন আবার অনুতপ্ত হল। গত কয়েকদিনে যাদের খুন করেছে, তাদের জন্য আবার অনুশোচনায় দগ্ধ হল। বিড়ালগুলিকে সম্মোহন থেকে মুক্ত করে দিয়ে সে নিজের কফিনে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুমাতে পারছে না কিছুতেই। সারারাত ছটফট করে কাটিয়ে দিল সে। সিদ্ধান্ত নিলো, রাত নামলেই চলে যাবে সেসব জায়গায়, যেখানে সে শান্তিতে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু সে জানেনা, সামনে ভয়াবহ একটা দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করছে তার জন্য।

দশ


ক্রুশ দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে দেখে ফ্রান্সিস্কা বুঝতে পারলো ও একটা ভ্যাম্পায়ারের পাল্লায় পড়েছে। ভয় না পেয়ে নরিকে নিয়ে কালো ছায়াটার পিছনে ছুট লাগালো সে। কিন্তু গোরস্তানে এসেই হারিয়ে ফেললো ছায়াটাকে। সারি সারি সাজানো কফিনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফ্রান্সিস্কা। গোরস্থানে খোঁজার ঝুঁকি নেওয়ার বোকামি না করে, সে ছুটলো চার্চের ফাদারের কাছে।

পরদিন সকালে সূর্য ওঠার পর, ফাদার স্টেইন আর ফ্রান্সিস্কা এসে ঢুকলো গোরস্থানে। রাতে ফাদারকে সব খুলে বলেছিল ফ্রান্সিস্কা। নরির অদ্ভুতুড়ে আচরণ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, পরে ফ্যাকাসে চেহারার লম্বার লোকটার একই রকম চোখ দেখা, ক্রুশ দেখে ভয় পেয়ে লোকটার পালিয়ে যাওয়া, লোকটা চলে যাওয়ার পর নরির স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া - কিছুই বাদ দিলো না সে। নিজের ধারণার কথাও বলল ফ্রান্সিস্কা। গত কয়েকদিনে যত মানুষ অজ্ঞাত কারণে মারা গেছে, সবই হয়তো এই রক্তচোষাটার কাজ। প্রথমে ফাদার ওর কথা বিশ্বাস না করলেও, গলার লাল ক্ষত দুটো দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনই কাওকে জানাতে রাজি হননি। আগে নিজে দেখে নিশ্চিত হবেন। অবশ্য বিপদের ভয়ে তিনি ফ্রান্সিস্কাকেও আনতে চাননি। কিন্তু মেয়েটা যুক্তি দেখিয়েছে, 'ওকে তো আপনি দেখেননি। আমি দেখেছি। আরেকবার দেখলেই আমি চিনতে পারব।'
ফ্রান্সিস্কার কথা ফেলে দিতে পারেননি ফাদার।

ফ্রান্সিস্কা আর ফাদার স্টেইন, দুজনের হাতেই কাঠের কীলক। যার মাথাটা চোখা। ফাদার বললেন, 'আমি আগে ইংল্যান্ড থেকে নতুন আসা কফিনগুলো চেক করি।' ওগুলোতে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।'
মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো ফ্রান্সিস্কা। একে একে সাতটি কফিন চেক করলো ওরা। প্রায় সবগুলিতে পঁচা গলা লাশ। আট নাম্বার কফিন খুলেই থমকে গেল দুজনে। লাল চোখ মেলে ওদের দিকেই চেয়ে আছে ফ্যাকাশে লোকটা। জ্বলজ্বলে চোখে চেয়ে থাকলেও তার যে এই দিনের বেলা কিছু করার শক্তি নেই, দেখেই বোঝা গেল। ফাদারকে বলে দিতে হলো না, এই সেই রক্তচোষা।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফাদার স্টেইন তার হাতের কাঠের কীলকটা রক্তচোষার বুকের বাম পাশে ঢুকিয়ে দিল। ব্যথায় কুচকে গেল রক্তচোষার মুখ। কিন্তু মরলো না সে। ফাদার বুঝলো, এভাবে মারা যাবে না একে। কফিনটা টেনে উজ্জ্বল সূর্যালোকে নিয়ে ফেললো। ভ্যাম্পায়ারটির সারা শরীরের চামড়া হীরার মত জ্বলতে লাগলো। এবারেও অসহ্য যন্ত্রনায় চোখ মুখ কুঁচকে গেলেও মরলো না সে। ফাদার ভাবলো, আগুন ছাড়া একে পরাস্থ করা যাবে না। ফ্রান্সিস্কার দিকে তাকিয়ে ফাদার স্টেইন বললেন, 'তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি পেট্রোল আর আগুন নিয়ে আসছি।'
ফ্রান্সিকা রক্তচোষার দিকে তাকিয়ে দেখলো, তার শরীর এখন আর জ্বলছে না। ক্রোধান্বিত হয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে রক্তচোষাটা!

এগারো

ফাদার যাওয়ার মিনিট দুয়েকের মধ্যেই সূর্যটা মেঘের আড়ালে চলে গেল। শরীরের যন্ত্রনা কিছুটা উপশম হলো কেইনের। নিষ্ঠুর মেয়েটাকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ক্রোধ ঝাঁকিয়ে বসলো। ইচ্ছে করলো মেয়েটার রক্ত চুষে ছিবড়ে বানিয়ে দেয়। কিন্তু তক্ষুনি তার নিজের নিষ্ঠুরতার কথা মনে পড়ে গেল কেইনের।
আপন ভাইসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষকে খুন করেছে সে। এই ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটার রক্তে নিজেকে রঞ্জিত করা থেকে বিরত থাকতে চাইলো সে। নিজের ক্ষমতার বলে কফিনের ঢাকনা টেনে নিজেকে ঢেকে নিলো কেইন। সেখান থেকে উড়ে গেল অজানার উদ্দেশ্যে। সেই নড এর নগরীতে। যেখানে কোন সাধারণ মানুষ পৌঁছুতে পারবে না। শরীরের অসহ্য যন্ত্রনা ভুলতে আর রক্ত থেকে দূরে থাকতে নডের মোহাচ্ছন্নতাই তাকে সাহায্য করবে।

পরিশিষ্ট

ইউরোপ থেকে আসা কারুকার্যময় কফিনগুলো কোন এক অদ্ভুত কারণে উধাও হয়ে গেছে। চার্চের সবাই কফিন নিরুদ্দেশ নিয়ে বলাবলি করছে। ওগুলি কে চুরি করলো, সেটা কারোর মাথায় আসছে না। কিন্তু ফাদার স্টেইন এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। কফিন রাখা ঘরের মেঝেতে ধুরো ছাড়াও আরেক ধরনের মিহি পাউডার দেখেছেন তিনি। স্টেইন জানেন, কফিনগুলোই কাঠের গুঁড়োয় পরিণত হয়েছে। কফিনগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছিলেন ফাদার। সব শুনে এগুলোর রহস্য বুঝে নিয়েছেন।
তিনি জানেন, ভ্যাম্পায়ারদের কফিন ওরা বিশেষভাবে সংরক্ষণ করে বলেই শত শত বছর আগের কফিন সমাধিকক্ষে অক্ষত অবস্থায় ছিল। গত রাতের ভ্যাম্পায়ারটাই সম্ভবত সর্বশেষ ভ্যাম্পায়ার ছিল। ওটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে তাই সমস্ত কফিন কাঠের গুড়োয় পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এসব ব্যাপার কাওকে বললেন না ফাদার, নিজের মধ্যেই চেপে রাখলেন আজীবন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩৪
১৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×