somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়োমেট্রিকনামা ২

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ শেষ দিন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধনের। গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিলো এই পদ্ধতিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সমালোচনা আর প্রতিক্রিয়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়ে ছিলো বিতর্কিত এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি। কিছুটা বিড়ম্বনা সত্ত্বেও উপকারিতার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া বহাল রয়েছে। তাছাড়া আমরা জানি, আমাদের বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন!
দেশে মুঠোফোনের আবির্ভাবের পর সিম কম্পানিগুলো বোধহয় বেশ অবাক হয়েছিলো। হয়তো ভেবেছিলো, 'এটা কোন দেশে আসলাম ব্যবসা করার জন্য? এখানকার সরকার কেমন? পানির মত সিম বিক্রি করতে দিচ্ছে কোনো নিবন্ধন ছাড়াই। আর মানুষগুলোই বা কেমন? অন্তত একটা ক্যাশ মেমো নিয়ে যাক!'
২০০৮ সালের শেষের দিকে তৎকালীন অগণতান্ত্রিক(!) সরকারের আমলে ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রনয়নের পরবর্তীতে প্রথমবারের মত সিম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা জাতি গুরুত্বের সাথেই নিয়েছিলো।
সরকারি তথ্য সংক্রান্ত জটিলতার সুযোগ নিয়ে সিম অপারেটররা জাতীয় পরিচয়পত্র নিজেরাই তৈরি করে ১০ ডিজিটের মোবাইল নাম্বারে অতিরিক্ত আরো একটি ডিজিট যোগ করে নিজেদের ব্যবসায়িক সাফল্যের বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পেয়ে বেশ খুশিই ছিলো।
২০১৫ সালের শেষের দিকে এসে গুগল আবিষ্কারকদের(!) কি যেনো হলো। বিরল দৃষ্টান্তমূলক বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনরায় সিম নিবন্ধনের আটো সাটো আইন চাপিয়ে দিলো মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারীদের উপর। হয়তো মোবাইল সম্পর্কিত অপরাধ রোধের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এই বায়োমেট্রিক! কিন্তু বিতর্ক ছিলো কেনইবা আমরা অর্থাৎ সাধারণ মানুষগুলো হাতের আংগুলের ছাপ বিদেশী কম্পানির কাছে তুলে দিবো?
আংগুলের ছাপ নিয়ে কে কি উদ্ধার করবে সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আমি বলতে চাচ্ছি, কতটা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে আমাদের সে ব্যাপারে....
নিজের টাকা খরচ করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং নিজ মোবাইল নিয়ে রিটেইলার বা কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়েছে অনেকেরই। মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারীর প্রায় অর্ধেক অংশ ছাত্র অর্থাৎ নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র এখনো হাতে পায়নি। শতকরা ১০ শতাংশের বেশি পরিচয়পত্রে তথ্য (জন্মতারিখ, নাম) ভুল উল্লেখ করা আছে। এখানেই শেষ নয়! খুচরা রিটেইলারদের অনাকাঙ্খিত আচরণের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আংগুলের ছাপ দেয়ার পরও রেজিস্ট্রেশন হয়নি অর্থাৎ প্রয়োজনীয় কাগজ অপারেটরদের হাতে পৌঁছায়নি এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি।
যাইহোক! তবুও আমরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধন করিয়েছি! হয়তো, মা বাবার পেছনে ঘুরেঘুরে রাজি করিয়ে রিটেইলারদের কাছে নিয়ে গেছি। বিশ্বস্ত বন্ধু বা বয়সে বড় কাছের মানুষগুলোকে রাজি করিয়ে। নিজ দায়িত্বে বা বাধ্য হয়ে! আমরা করতে বাধ্য হয়েছি কারণ মোবাইল ফোন আমাদের চলার পথের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে অনেকদিন থেকে। এটা ছাড়া চলা মোটামুটি অসম্ভব।
তাই বলে আমাদের হুমকি দিতে পারেনা, "সিম বন্ধ করে দেয়া হবে।" অথবা অপারেটররা ১০ লাখ টাকার লোভও দেখাতে পারেনা।
গণতান্ত্রিক সরকারের বোঝা উচিত ছিলো, আমরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলামনা বা উপযুক্ত নই! ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রভাবে বরাবরই আমরা শ্রেণী বৈষম্যের শিকার। যেদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে সে দেশে এমন পদ্ধতি সত্যিই বেমানান।
সবশেষে, কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়! যেমন, টাকা দিয়েই সিম কিনেছিলাম আমরা! ভুল করেছে রাস্ট্র এবং মোবাইল অপারেটরগুলো! আমরা বারবার অযথা হয়রানির শিকার হলাম কেন?
শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার গ্রহণযোগ্য কেন? পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এগুলো কী করছে? তার মানে একজন বিদেশী এদেশে এসে সিম কিনতে পারবেনা। লজ্জ্বাজনক ব্যাপার !
তারপর, সরকার দেশকে আরেকটু ডিজিটাল করতে অদূর ভবিষ্যতে আরো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমাদের আবার নিবন্ধিত হতে বলবে কিনা...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×