আজ শেষ দিন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধনের। গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিলো এই পদ্ধতিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সমালোচনা আর প্রতিক্রিয়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়ে ছিলো বিতর্কিত এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি। কিছুটা বিড়ম্বনা সত্ত্বেও উপকারিতার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া বহাল রয়েছে। তাছাড়া আমরা জানি, আমাদের বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন!
দেশে মুঠোফোনের আবির্ভাবের পর সিম কম্পানিগুলো বোধহয় বেশ অবাক হয়েছিলো। হয়তো ভেবেছিলো, 'এটা কোন দেশে আসলাম ব্যবসা করার জন্য? এখানকার সরকার কেমন? পানির মত সিম বিক্রি করতে দিচ্ছে কোনো নিবন্ধন ছাড়াই। আর মানুষগুলোই বা কেমন? অন্তত একটা ক্যাশ মেমো নিয়ে যাক!'
২০০৮ সালের শেষের দিকে তৎকালীন অগণতান্ত্রিক(!) সরকারের আমলে ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রনয়নের পরবর্তীতে প্রথমবারের মত সিম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা জাতি গুরুত্বের সাথেই নিয়েছিলো।
সরকারি তথ্য সংক্রান্ত জটিলতার সুযোগ নিয়ে সিম অপারেটররা জাতীয় পরিচয়পত্র নিজেরাই তৈরি করে ১০ ডিজিটের মোবাইল নাম্বারে অতিরিক্ত আরো একটি ডিজিট যোগ করে নিজেদের ব্যবসায়িক সাফল্যের বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পেয়ে বেশ খুশিই ছিলো।
২০১৫ সালের শেষের দিকে এসে গুগল আবিষ্কারকদের(!) কি যেনো হলো। বিরল দৃষ্টান্তমূলক বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনরায় সিম নিবন্ধনের আটো সাটো আইন চাপিয়ে দিলো মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারীদের উপর। হয়তো মোবাইল সম্পর্কিত অপরাধ রোধের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এই বায়োমেট্রিক! কিন্তু বিতর্ক ছিলো কেনইবা আমরা অর্থাৎ সাধারণ মানুষগুলো হাতের আংগুলের ছাপ বিদেশী কম্পানির কাছে তুলে দিবো?
আংগুলের ছাপ নিয়ে কে কি উদ্ধার করবে সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আমি বলতে চাচ্ছি, কতটা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে আমাদের সে ব্যাপারে....
নিজের টাকা খরচ করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং নিজ মোবাইল নিয়ে রিটেইলার বা কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়েছে অনেকেরই। মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারীর প্রায় অর্ধেক অংশ ছাত্র অর্থাৎ নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র এখনো হাতে পায়নি। শতকরা ১০ শতাংশের বেশি পরিচয়পত্রে তথ্য (জন্মতারিখ, নাম) ভুল উল্লেখ করা আছে। এখানেই শেষ নয়! খুচরা রিটেইলারদের অনাকাঙ্খিত আচরণের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আংগুলের ছাপ দেয়ার পরও রেজিস্ট্রেশন হয়নি অর্থাৎ প্রয়োজনীয় কাগজ অপারেটরদের হাতে পৌঁছায়নি এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি।
যাইহোক! তবুও আমরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধন করিয়েছি! হয়তো, মা বাবার পেছনে ঘুরেঘুরে রাজি করিয়ে রিটেইলারদের কাছে নিয়ে গেছি। বিশ্বস্ত বন্ধু বা বয়সে বড় কাছের মানুষগুলোকে রাজি করিয়ে। নিজ দায়িত্বে বা বাধ্য হয়ে! আমরা করতে বাধ্য হয়েছি কারণ মোবাইল ফোন আমাদের চলার পথের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে অনেকদিন থেকে। এটা ছাড়া চলা মোটামুটি অসম্ভব।
তাই বলে আমাদের হুমকি দিতে পারেনা, "সিম বন্ধ করে দেয়া হবে।" অথবা অপারেটররা ১০ লাখ টাকার লোভও দেখাতে পারেনা।
গণতান্ত্রিক সরকারের বোঝা উচিত ছিলো, আমরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলামনা বা উপযুক্ত নই! ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রভাবে বরাবরই আমরা শ্রেণী বৈষম্যের শিকার। যেদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে সে দেশে এমন পদ্ধতি সত্যিই বেমানান।
সবশেষে, কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়! যেমন, টাকা দিয়েই সিম কিনেছিলাম আমরা! ভুল করেছে রাস্ট্র এবং মোবাইল অপারেটরগুলো! আমরা বারবার অযথা হয়রানির শিকার হলাম কেন?
শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার গ্রহণযোগ্য কেন? পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এগুলো কী করছে? তার মানে একজন বিদেশী এদেশে এসে সিম কিনতে পারবেনা। লজ্জ্বাজনক ব্যাপার !
তারপর, সরকার দেশকে আরেকটু ডিজিটাল করতে অদূর ভবিষ্যতে আরো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমাদের আবার নিবন্ধিত হতে বলবে কিনা...