কোন এক জোছনা রাতে হেটে যাচ্ছিলাম। সেই জানালার দিকে তাকিয়ে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো কারন জানালায় কেউ নেই। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকতে থাকতে তুলনামুলক ছোট আরেকটা ছায়া এবং তারপর মুখ দেখা যায়। এটা 'শান্তা'র ছোটবোন 'তিথি'। আমাকেই লক্ষ্য করে একটা কাগজের ঢিল এসে পড়ে। কাগজে লেখা 'আপুর জ্বর, ক্লাসমেট পরিচয় দিয়ে বাসায় এসে দেখা করতে পারেন'
মিনিট পনের দাঁড়িয়েও সাহস সঞ্চয় করতে না পেরে চলে এসেছিলাম। আজ তিথি বই কিনতে এসে ফেরার পথে যখন বলছিল
'ভাইয়া সন্ধ্যা হয়েছে হলের গেটে নামিয়ে দিয়ে আস'
আমি সংকোচ করছিলাম। সেও সেই পুরনো ভীতিকর কথা তুলে খোঁচা দিল। তার ভার্সিটি জীবনে এসেও এই খোঁচা দিয়েই সে আমাকে দুর্বল করে ফেলে।
তিথির সাথে রিক্সায় যাচ্ছি। নীলক্ষেত ট্রাফিক সিগনালের সামনে জ্যামে পড়েছি। আমি অন্যমনস্ক হয়ে আছি। তিথির হাতে অনেক গুলো বই। এর মাঝে উপন্যাসই বেশি। আমার বাসার টেবিল ভরতি বই। আর এই বইয়ের যোগানদাতা তিথি।
বহু আগে থেকেই সে আমার বইয়ের যোগান দেয়।
মনে আছে ২০০৬ সাল। ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি। কাজ কাম নাই সারাদিন ঘুরে বেড়াই । পকেটে টাকা পয়সা নাই। দুপুর হলেই বইমেলায় স্টলে স্টলে ঘুরি। খুব মনোযোগ দিয়ে এক এক টা স্টলে বই যত্ন নিয়ে পড়ি। দুই চার পাতা পড়ার পর বই রেখে দেই আগের জায়গায়। আবার যাই অন্য স্টলে। আবার যত্ন নিয়ে বইগুলো দেখি। নতুন বইয়ের মলাটের গন্ধে এক ধরনের মাদকতা আছে।
প্রতিদিন দুপুর হলেই আমার গন্তব্য বই মেলা। এক স্টলে 'চসেস্কু'র উপর লেখা বইটি আমাকে খুব টানে। প্রতিদিন এসে এই বইটি সবার আগে কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে ফেলার চেষ্টা করি। স্টলের তরুণরা বিরক্তিকর চোখে আমার দিকে তাকায়। আমার কিছু মনে হয় না। সেদিন ওই স্টল থেকে চলে আসছি। পিছন থকে কে যেন ডাক দিল 'ভাইয়া'। তাকিয়ে দেখি এক কিশোরী ডাকছে।
-আমাকে ডাকছেন?
-জ্বী ভাইয়া আমাকে আপনি করে বলছেন কেন? আমি তিথি।
তিথি বলার সময় কন্ঠে এমন জোরালো ভাব যে তাকে না চেনাটা বড়ই আশ্চর্যের। যাই হো আরো নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করি।
-ও আচ্ছা। কোন তিথি?
-শান্তা আপুর ছোটবোন।
- ও আচ্ছা। কি খবর?
-কোথায় ঘুরছেন।
-এইতো বইমেলা দেখি।
-আপনি তো প্রতিদিনই ঘুরেন দেখি
-তুমি কিভাবে জানো?
- আমার বান্ধবীরা আপনাকে প্রতিদিন দেখে। আপনি নাকি একটা বই প্রতিদিন কয়েক পেজ করে পড়ে চলে যান? কিনে নিতে পারেন না?
-টাকা নেই। আর তাছাড়া ধীরে ধীরে পড়ার মজা আছে।
-মজার দরকার নেই আমার সাথে চলুন আপনাকে চসেস্কু'র বইটা কিনে দিবো।
এক প্রকার জোর করে তিথি বইটা কিনে দিলো। তিথিকে ছোট্ট দেখেছিলাম। শান্তা মাঝে মাঝে নিয়ে আসতো। তিথি বড় হয়ে গেছে। ক্লাস টেনের ছাত্রী। তিথির সাথে কফি খেলাম। কফি শেষ করে বইমেলা থেকে বের হয়ে চলে আসি... ওর বোন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে মেয়েটি ভুলেনি... এটাই বা কম কিসে!!!
জ্যাম ছুটে গেছে । এতোক্ষনের জমে থাকা মেঘ এখন বৃষ্টি হয়ে পড়া শুরু করেছে। হলের কাছে আসতেই বড় বড় ফোঁটা হয়ে বৃষ্টি নামা শুরু করলো। দুজনে ভিজে একাকার। এই অবস্থাতেই তিথিকে হলে নামিয়ে দিয়ে ধামালকোট যেতে হবে। চাচার কাছে যাব। হাত ফাঁকা কিছু টাকা নিয়ে আসতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫