১।
রাবেয়া? আই রাবেয়া?
জ্বী, বলেন?
কতক্ষণ লাগলো আসতে তোমার?
একটু বিজি ছিলাম।
কিসের এত বিজি তুমি শুনি?
মানে ......
চুপ বেয়াদপ! মুখে মুখে তর্ক করার অভ্যাস তোমার গেল না? বয়স তো কম হল না তোমার, এসব কবে বুঝবে তুমি?
কোন কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে রাবেয়া অন্দরমহলের পথ ধরলো। এসব তার নিত্য সঙ্গী। তাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।
সেদিন তো পাড়ার মুরুব্বী কাদের সাহেব এসে যা তা বলে গেল রাবেয়াকে। সমাজে নাকি কেউ মুখ দেখাতে পারছে না! সমাজের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করা আসলেই অনেক কঠিন কাজ। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদেরকে হেয় করা হয়। মুখে অনেকেই অনেক বুলি আওড়ায়। কিন্তু সেই বুলি শুধু বুলিই থেকে যায়। বিশেষ করে যাদের জন্ম পরিচয় বলতে কিছুই নেই। কে তার বাবা? কেউ জানে না। পরিবার বলতে কেউ নেই। কালেভাদ্রে কালের সাক্ষী হয়ে জন্মদাত্রী মা হয়তো বেঁচে থাকেন। কিন্তু কতজনই পারেন এভাবে দুঃসহ জীবনযাপন করতে? এসবের জন্য তো রাবেয়া দায়ী নয়! তবে কেন ওকেই এভাবে হেয় হতে হয়?
দোষ হয়ত কারো নয়! দোষ আমাদের সমাজ ব্যবস্থার। কিন্তু সেই সমাজ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে নিয়জিত সেই মানুষেরাই।
২।
আজ রাবেয়ার খুশির দিন। হয়তো এমন একটি দিনের জন্য সে যুগের পর যুগ সে অপেক্ষা করে ছিল। কত প্রহর কেটে গিয়েছে, কতশত রজনী নির্ঘুম কেটেছে, কত হাজার হাজার দীর্ঘশ্বাসে আশেপাশের পরিবেশ ভারী হয়েছে তার হিসেব নেই। আজকে দিদারকে সে ভালবাসার কথা বলবে। মনের জমানো সব কথা বলবে। একটি নতুন শুরুর সুচনা হবে। গত ২ বছর ধরে মনের জমানো সব কথা বলতে চেয়েছে সে। কিন্তু পারে নি। শুধু ভয় হত তার। কিন্তু কেন জানি মন কিছুতেই আর মানছে না।
দুপুর ৩ টা,
রাবেয়াঃ ওহহ, একটু দেরি হয়ে গেল।
দিদারঃ কোন কথা নেই।
রাবেয়াঃ কি হয়েছে তোমার?
দিদারঃ না, তেমন কিছু না।
রাবেয়াঃ নাহ! কিছুতো একটা হয়েছে।
দিদারঃ আসলে, তোমাকে আমার কিছু কথা বলার আছে।
রাবেয়াঃ আমারো কিছু কথা বলার আছে তোমাকে।
দিদারঃ তাহলে তুমি আগে বল।
রাবেয়াঃ না, তুমি আগে বল।
দিদারঃ আচ্ছা। (১ মিনিট নিরবতা) আসলে, তুমি আমাকে কি বলতে চাও সেটা আমি জানি। আমিও চেয়েছিলাম কিছু একটা বলতে যা আমাদের সম্পর্ককে পাকাপোক্ত একটা রূপ দিবে। কিন্তু আমি সেটা পারবো না। কারণ তোমার পারিবারিক ইতিহাস শোনার পর আমার পরিবার তোমাকে মেনে নিচ্ছে না। তারা বলছেন তোমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে। আর আমিও চাই না তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে। সমাজে চলতে গেলে অনেক বাধা বিপত্তি পার হতে আমাকে। আমি তা পারবো না।
রাবেয়াঃ বাহ! এই তোমার কথা। ভেবেছিলাম তুমি সবার থেকে আলাদা। অথচ তুমিও সেই সবার মতই।
ভাল থাকো, লাগবে না তোমাকে আমার। বিদায়।
যতই দূরে চলে যাচ্ছে রাবেয়া, ততই তার সব স্বপ্ন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
৩।
নাহ! আর পারছে না রাবেয়া।
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে সাথে সাথে ড্র্য়ার খুলে ঘুমের যতগুলো ঔষুধ যে পেল সবগুলো হাতে নিল। আজ সে অনেক ঘুমাবে। সেই ঘুম যেন আর কোনদিন না ভাঙ্গে! আপনজনদের অবহেলা পাওয়ার থেকে নিজেকে শেষ করে দেয়া অনেক ভাল। হয়তো এটা ভুল পথ। কিন্তু দিনকে দিনকে সমাজের কিট তুল্য জীবে পরিণত হওয়ার থেকে এই ঢের ভাল।
হয়তো তার মরে যাওয়ার পরে নষ্ট মানুষগুলো তাকে নিয়ে সভা করবে, পত্রিকায় ছাপাবে। মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করবে। বুদ্ধিজীবিরা ভাষন দিয়ে বড় বড় কথা বলবেন। টক শো চলবে। কিন্তু কেউ জানবে না এসব নরকের কিটদের মনের কথা। তাদের আসল চেহারা!
আর এভাবে করেই ঝরে পরবে অনেক প্রাণ!
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪