somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেবেলার দিনগুলি - বয়:সন্ধির ঘোরলাগা সময়

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[গাঢ়](ব্যক্তিগত পোস্ট)[/গাঢ়]

নবম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনীতে ওঠার সময় রেজালট একটু গড়বড় হয়েছিল। বাবা লক্ষ্য করে বললেন ইংরেজীতে দুর্বলতা। সুতরাং একটা ভালো ইংরেজী শিক্ষকের কাছে যাও। আমিও আর নাঈম গবেষনা করে বের করলাম চট্টগ্রামের বেস্ট দুজন ইংরেজী শিক্ষকের একজন হচ্ছেন কলেজিয়েট স্কুলের বড়ুয়া স্যার। প্লাস উনার কাছে ছেলে মেয়েরা একসাথে পড়ে। আমরা তো খুশী!

আমরা পড়া শুরু করলাম বড়ুয়া স্যারের বাসায়। আর মেয়েদের দেখেতো আমাদের খুশী আর ধরে না। গবেষনা চলতে শুরু করল কার কোনটা হবে সে বিষয়ে। যারা আগে থেকে পড়ছে তারা আগে থেকেই কার কোনটা হবে সেটা ঠিক করে রেখেছে। তাই বাকি যেসব মেয়ে আছে তাদের মধ্যে থেকেই আমাদের বাছাই করতে হবে। নাঈম ব্যাটা প্রথম দিনেই একটা মেয়েকে টার্গেট করে ফেলল। আমার তো ইজ্জ্বতের মামলা। ভেবেচিন্তে আমিও আরেকজনরে বুকিং দিয়ে ফেল্লাম।

বয়:সন্ধির সে সময়টা বড় বিপদজনক। সদ্য মোচ দাঁড়ি উঠছে। কৈশোর ছাড়িয়ে সদ্য বড় হওয়া শুরু করেছি। ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠছে সদ্য। মেয়েদের দেখলে বুকে ধুকপুক, শরীরে শিহরন। বড় অস্থির সময়। কাউকে কতটুকু ভাল লাগল তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে প্রতিযোগিতা। এগ্রেসিভনেস ছাড়িয়ে ওঠে যুক্তি।

যে কয়জন ছিলাম সেখানে প্রেমিকের দলে তারা বেশ ইমপ্রেস করার চেষ্টা করতাম যার যার প্রেয়সীকে। মাঞ্জা মেরে আসা যাওয়া কিংবা দারুন কিছু করে ফেলার উত্তেজনায় ভুগতাম। বাকিদের কাজ ছিল আমাদের তাল দেয়া। ভীষন ইঙ্গিত পূর্ণ কতা বার্তা হত সেসময় মেয়েদের গ্রুপ আর ছেলেদের গ্রুপে। টুকটাক ছোটখাট মুখরোচক ঘটনা ঘটলে আমাদের আড্ডায় সময় ভালই কাটত।

মেট্রিক পরীক্ষার সময় যত কাছিয়ে আসতে লাগল তত আমাদের টেনশন। বিরহের জ্বালা সইব কিভাবে! আবার শুনতে পেলাম আমি যে মেয়েটাকে স্বপ্নের জাল বুনছি তার নাকি অন্য কোথাও প্রেম আছে। কি যন্ত্রনা, কি যন্ত্রনা। আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম কিছু একটা করা লাগে। তখন আবার একলা কিছু ডিশিসন নিতাম না। সবাই মিলে গভীর আলোচনা চলত। তারপর ঠিক হতো কি করা হবে।

একজন পরামর্শ দিলো, 'একটা চিঠি দে। আগে তো জানাতে হবে ব্যপারটা। না জানালে চলবে কিভাবে?' যুক্তিযুক্ত কথা। সুতরাং অনেক গবেষনা করে লেখা হল একটা চিঠি। এক চিঠিতেই আমি হিট। কেউ কেউ ফটোকপি করে নিল সেটা। আর শুরু হলো তুমুল আলোচনা। মেয়ে আর ছেলে মহলে। কিন্তু আমার আশার গুড়ে বালি ফেলে সে আমাকে জানিয়ে দিল যে সে অন্য কাউকে কথা দিয়ে ফেলেছে।

কি আর করা কিছুদিন বিরহী প্রেমিকের ভূমিকায় দেখা গেল আমাকে। তার কিছুদিন পরে চলে আসল মেট্রিক পরীক্ষা। চীর ছাড়া ছাড়ির সময়।

মাশিদের লেখায় যেমনটা পড়েছি তেমনটা দেখা গেল আমাদের ক্ষেত্রে। হঠাৎ করে যেন সবাই সবার প্রতি অতিরিক্ত ফিল করতে শুরু করলাম। সবাই সবাইকে গিফট দেয়া শুরু হল। ছেলে-মেয়েদের অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। সহজ কথা বার্তা শুরু হল।

বড়ুয়া স্যারের বাসায় যখন আমাদের পড়া শেষ হল, তারপর আমরা একটা পার্টির আয়োজন করলাম এক বন্ধুর বাসায়। গান গাওয়া থেকে শুরু করে আড্ডা এসব নিয়ে ভীষন মজাই হল। আর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে দেখে আমাদের কি দু:খ! সবাই সবার ঠিকানা ফোন নাম্বার আদান প্রদান করল। কিন্তু মেট্রিকের পরপরই ঢাকায় চলে আসায় আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি সে গ্রুপটার সাথে।

এখন পুরোনো সেসব কথা ভাবলে মজাই লাগে। বয়:সন্ধির সেময়টা বড় ছোট্ট কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মেয়েরা যে প্রেমিকা ছাড়াও অন্য কিছু হতে পারে সেটা রিয়েলাইজেশনের একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা। সে সময়টার পর থেকে সেই ধুকপুকানি, নাভর্াসনেস চলে গিয়েছিল। হঠাৎ করেই যেন বড় হয়ে উঠেছিলাম আমি। পরে যখন সত্যি সত্যি প্রেমে পড়লাম ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর তখন বয়:সন্ধির ঘোরলাগার সাথে পার্থক্যটা ধরতে পেরেছিলাম। আর তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম সে সময়টাতে।

তারপরপরই শুরু হলো মেট্রিক পরীক্ষা। মানুষের জীবনের বৃহত্তম পরীক্ষাগুলোর একটি। ভবিষ্যত নিধর্ারন কারী একটি মোড়। দিনগুলো কেটে গেল অস্বাভাবিক দ্রুততায়।

(চলবে হয়ত)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এয়ার এম্বুলেন্স ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী’কে নিয়ে জরিপে আপনার মতামত দেখতে চাই॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৩০

যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন শহরে বসবাস করছেন। সেই দলের মূল নেত্রী অসুস্থ। আর তাকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাওয়ার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিবে কাতারের আমির। বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের কি এতটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×